বছর দুই আগে মুখে ব্রণ নিয়ে ছবি পোস্ট করে নিজের পিসিওএস এবং এন্ডোমেট্রিওসিস যন্ত্রণার কথা জানিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সংগীতশিল্পী ইমন চক্রবর্তী। সোশাল মিডিয়াতে এর আগে ত্বকের বাজে অবস্থা নিয়ে কটাক্ষের পাল্টা জবাব এভাবেই দিয়েছিলেন তিনি।
“ইশশ! ছি! এসব কী? নিজের প্রতি উদাসীন হয়ে থাকো কী করে? তোমার ত্বক খুবই বাজে দেখাচ্ছে … তুমি মনে হয় নিজের দিকে একেবারেই নজর দাও না… তোমাকে একেবারে বাজে দেখাচ্ছে” – এমন প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে ইমন স্পষ্ট করে বলেছিলেন, “আরে ভাই, একে বলে সিস্টিক একনি …যা খুবই পীড়াদায়ক।”
২০২২ সালের ২৭ জুলাই ফেইসবুকে প্রকাশ করা ওই পোস্টে তিনি বলেন, “আমি গত ১০ বছর ধরে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পিসিওএস) এবং এন্ডোমেট্রিওসিসে ভুগছি ।“
বিশ্বে ‘৯০ শতাংশ’ নারী এই রোগে ভুগছে; এমন তথ্যও সবার জন্য তুলে ধরেন ভারতীয় এই সঙ্গীত শিল্পী।
“এই রোগ খুবই কষ্ট দেয়। পিসিওএস ও এন্ডোমেট্রিওসিস হলে মুড সুইং, তলপেটে ব্যথা, তৈলাক্ত ত্বক এবং ব্রণ তখন কাছের বন্ধু হয়ে ওঠে।”
‘কিছু না জেনেই কথা বলা থেকে বিরত থাকতে’ মন্তব্যকারীদের উদ্দেশে ইমন তখন বলেছিলেন, ”আমি জানি আমি একজন শিল্পী। আমি জানি আমি শোবিজ জগতের একজন।
“কিন্তু আমি একজন মানুষও। আমাকেও অনেক সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়। আমি সেরে ওঠার প্রচণ্ড চেষ্টা করছি এবং অবশ্যই আমি সুস্থ হয়ে উঠব।”
গত ২৪ ডিসেম্বর কনসার্টের কোনো এক মুহূর্তের ছবি ফেইসবুকে পোস্ট করেন ইমন। নিচে মঞ্চ আর মঞ্চ থেকে অনেকখানি উপরে ভেসে আছেন এই গায়িকা।
এই ছবির ক্যাপশনে ইমন চক্রবর্তী লিখেছেন, “আমি জানতাম আমি পারব … আমি জানি যে আমি পারি … আমি জানি যে আমি পারব।”
দুই বছর আগের তলপেটের যন্ত্রণাকাতর ইমনের সঙ্গে আজকের ইমনের পার্থক্য ধরা পড়ল এই ছবিতে।
আজকাল মঞ্চে দাপিয়ে বেড়ানো ইমনের ‘স্টেজ ইকুয়ালস টু ম্যাজিক’ হ্যাশট্যাগ দেয়া এই ছবি দেখে অনুসারীদের অনেকেই ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
অনুরাধা সেন লিখেছেন, “এক্সসিলেন্ট ক্যাপশন, আপনার গায়কী নিয়ে কিছু বলার নেই, সেই টানের জাদুই আলাদা, কিন্তু এই যে আপনি দাপিয়ে এভাবে আপনার দাপট এস্ট্যাবলিশ করেন, সেটা তারিফ করি, অবাক হই, আরও এভাবেই দাপুটে পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে যান …।”
তমোনাশ মন্ডল লিখেছেন, “যদি গুরুদেব শিলাজিত বাবুর ভাষায় বলি তবে যা পাখি উড়তে দিলাম তোকে …।”
ইভেন্ট অর্গানাইজার পরিচয় দিয়ে নম্রতা ঘোষ অবশ্য স্টেজে এই লাফানো নিয়ে সাবধান করেছেন, “স্টেজটাকি আপনার এতোটা পোক্ত বলে মনে হয়? মীর স্যার একবার এই কান্ড করতে গিয়ে নজরুল মঞ্চে পড়ে হাত ভেঙ্গেছিলেন…।”
তবে ইমন ভক্তদের অনেকের মনে হয়েছে শিল্পীর এই আত্মবিশ্বাস হচ্ছে ’যোগাসনের ফল’।
টলিউডের দুই সংগীত তারকা কণ্ঠশিল্পী ইমন চক্রবর্তী ও সংগীত পরিচালক নীলাঞ্জন ঘোষ গাঁটছড়া বাঁধেন ২০২১ সালে। এরপর স্বামীকে দেখেই যোগের প্রতি আগ্রহ খুঁজে পান ইমন।
সপ্তাহে ৩ দিন নিয়ম করে প্রশিক্ষক বরুণ দেব মণ্ডলের কাছে যোগাসন চর্চা করতে শুরু করেন তিনি। দেড়-দুই মাসের মধ্যে শীর্ষাসনের মতো কঠিন আসনও রপ্ত করে ফেলেন তিনি।
যোগাসনের চর্চা যে এখনও ছাড়েননি তা বোঝা গেলো এই শিল্পীর ফেইসবুক প্রোফাইল দেখে। মঞ্চ পরিবেশনার নানা মুহূর্তের ছবি দিচ্ছেন, সাক্ষাৎকারের ভিডিও দিচ্ছেন; এসবের মধ্যে গত ১৭ ডিসেম্বর দিলেন যোগাসন চর্চার ভিডিও।
ঢিলেঢালা জামায় সম্ভবত নিজের বাড়িতেই যোগাসন করছিলেন তিনি। অবলীলায় দুই পা ছড়িয়ে বসে পড়েন; আবার ডান হাত দিয়ে বাম পায়ের বুড়ো আঙুল এবং বাম হাত দিয়ে ডান পায়ের বুড়ো আঙুল ধরে শরীরটাকে বাঁকিয়ে ফেলেন।
২০১৭ সালে সেরা সংগীতশিল্পী বিভাগে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বাগিয়ে নেয়া ইমন চক্রবর্তীর যোগাসন দেখে অভিভূত ভক্তদের একজন রুমা সাহা মন্তব্য ঘরে লেখেন, “এক্সসিলেন্ট। কতটা সাধনা আর একাগ্রতা থাকলে এগুলো করা যায়। উনি সত্যিই দুর্দান্ত … খুব পরিশ্রমী, আত্মবিশ্বাসী এবং মেধাবী একজন নারী।”