কোন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি পদ নিয়েই মানুষের আকর্ষণ থাকে বেশি। ফুটবল ফেডারেশনের আসন্ন নির্বাচনে সেটা নেই। ওই পদকে ছাপিয়ে বরং আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে সিনিয়র সহ সভাপতি পদটি। বাফুফের বর্তমান সহ সভাপতি ইমরুল হাসান বনাম তরফদার রুহুল আমিনের লড়ছেন এই পদের জন্য। নানামুখী অঙ্ক, বিতর্ক আর গুঞ্জনে এই লড়াইয়ের দিকে সবার চোখ।
তফসিল অনুযায়ী ২৬ অক্টোবর বাফুফে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন ২০ অক্টোবর। ওই দুই প্রতিদ্বন্ধীর একজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলেই সিনিয়র সহ সভাপতি পদের আকর্ষণও হারিয়ে যায়। ইমরুল হাসান নিজের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কোনও সুযোগ দেখছেন না, “মনোনয়নপত্র কিনেছি, জমাও দিয়েছি। এখন দ্বিতীয় ভাবনার কোন সুযোগ নেই। আমার বিপক্ষে যিনি দাঁড়িয়েছেন তিনিও একজন ভাল প্রার্থী। তবে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।”
তবে নির্বাচনী মাঠে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে নানা প্রচারণা। বাফুফের বর্তমান সহ সভাপতি ইমরুল হাসানকে ঘিরেই আছে নানা গুঞ্জন। তিনি সিনিয়র সহ সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন কিনা, এই নিয়ে নানা সন্দেহ ও গুঞ্জন আছে। সেসব তিনিও জানেন এবং নির্বাচন না করার হুমকিও শুনতে হচ্ছে তাকে, “কিছু প্রতিপক্ষ নানা কথাবার্তা ছাড়াচ্ছে আমার নামে। বিশেষ করে বিভ্রান্তিমূলক কথা ছড়াচ্ছে। কারা ছাড়াচ্ছেন তা আপনারাও জানেন। তাদের প্রতিনিধি আমার অফিসে ও বাসায় এসে প্রচ্ছন্ন হুমকি দেওয়ারও চেষ্টা করছে। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনও সুযোগই নেই আমার। আমি নির্বাচনে আছি, থাকবো এবং শেষপর্যন্ত জয়ের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত।”
তরফদার মোহাম্মদ রুহুল আমিন সিনিয়র সহ সভাপতি মনোনয়নপত্র কেনার পর থেকেই একটা পক্ষ তৎপর হয়ে ওঠে ইমরুল হাসানকে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরিয়ে দিতে। এ ব্যাপারে তার সঙ্গে কথা বলেছেন টাঙ্গাইলের কাউন্সিলর আলী ইমাম তপন, ময়মনসিংহ বিভাগের কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ ও মহিউদ্দিন বুলবুল। কিন্তু কোনভাবেই ইমরুল হাসান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি নন, “প্রতিপক্ষ যত শক্তিশালীই হোক, আমার নিজের ওপর আস্থা আছে। যত কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের মনোভাব ইতিবাচকই দেখেছি। আমার যিনি প্রতিদ্বন্ধী তার সম্পর্কে আমি নেতিবাচক কিছু বলতে চাই না। তাকে নির্বাচনে স্বাগত জানাতে চাই।”
এরপর তিনি প্রতিদ্বন্ধী তরফদার রুহুল আমিনকে নিয়ে কথা বলেছেন, “আমার কাছে তরফদার ভাইয়ের কাজকর্ম একটু আশ্চর্যজনক মনে হয়েছে। তিনি কিছুদিন আগে সভাপতি নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন আর তখনই আমাকে তার রানিং-মেট হওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। এখন তিনিই সিনিয়র সহ সভাপতি পদে আমার বিপক্ষে লড়ছেন। কিছুটা আত্মসম্মানবোধ থাকলে …। ওই জায়গায় আমি হলে কিন্তু আর নির্বাচন করতাম না।”
তরফদারই প্রথমে সভাপতি পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সপ্তাহখানেক পর ওই পদে তাবিথ আউয়াল নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা করলে তিনি চুপসে যান। রহস্যময় নীরবতা পালন করেন। দীর্ঘ সময় নীরব থাকার পর তরফদার হুট করে সিদ্ধান্ত বদলে সিনিয়র সহ সভাপতি পদের মনোনয়নপত্র কেনেন।
এবারের নির্বাচনে অবিশ্বাস্যভাবে কোন প্যানেল দেখা যাচ্ছে না এখনও। সভাপতি প্রার্থী তাবিথ আউয়াল একা চলার ঘোষণা দিলেও ভেতরে ভেতরে তার অদৃশ্য একটি প্যানেল আছে বলে, অনেকের ধারনা। ইমরুলের কথায়ও তার ইঙ্গিত মিলেছে, “প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এমনও হতে পারে যে একটাই প্যানেল দেখা যেতে পারে। তবে আমি এখনও পর্যন্ত প্যানেলের বাইরে আছি।”
কিন্তু সম্ভাব্য ওই প্যানেলে দেখা যেতে পারে কিছু বিতর্কিত ব্যাক্তি, যারা বর্তমান সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের দোসর হয়ে ফুটবল ফেডারেশনে যাবতীয় অনাচার-অনিয়ম করেছেন। ইমরুল হাসানও চান না সেসব বিতর্কিতদের, “কিছু বিতর্কিত লোক আছে, এটা ঠিক। তারা যেন বাফুফেতে আসতে না পারে, এটা আমারও ব্যক্তিগত চাওয়া।”
প্রশ্ন ওঠেছে, নির্বাচনে হারলে বসুন্ধরা কিংসের প্রেসিডেন্ট ফুটবলে থাকবেন কিনা? তরফদার যেমন গত বাফুফে নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পেরে তার প্রিমিয়ারের দল সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সেরকম কিছু ঘটবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইমরুল হাসান, “আমি বাফুফেতে থাকা- না থাকা নিয়ে খেলার কোনও সম্পর্ক আছে বলে মনে করি না। আমরা বাফুফেতে থাকি কিংবা না থাকি, বসুন্ধরা কিংস মাঠে থাকবে এবং খেলবে।”