ডিমের বাজার সামলাতে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ঠিকই; কিন্তু বাজারে কমেনি দাম।
আগের মতো চড়া দামেই ডিম কিনতে হচ্ছে মানুষকে, যে খাদ্যপণ্যটি ছাড়া কারও হেঁশেলই চলে না।
শুক্রবার ঢাকার কাঁচাবাজারগুলো ঘুরে সব বাজারেই ডিমের প্রচুর সরবরাহ দেখা গেছে। তবে দাম আগের চেয়ে বাড়তি।
ফার্মের মুরগির হালকা বাদামি রঙের ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। অথচ আমদানির আগে গত সপ্তাহে কোথাও কোথাও এই ডিম ১৫৫ টাকায়ও মিলছিল।
সাদা রঙের ডিমের ডজন ১৫৫ টাকাই রয়েছে। তবে পাড়া বা মহল্লার মুদি দোকানগুলোতে সব ধরনের ডিমের ডজন বাজারের থেকে গড়ে ৫ টাকা বেশি।
এক হালি (চারটি) ডিম কিনতে গেলে ৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সেই হিসাবে একেবারে খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম দাঁড়াচ্ছে ১৫ টাকা।
সহজে রান্না করা যায় এবং একই সঙ্গে প্রাণিজ আমিষের উৎস, সেই কারণে ডিমের ওপর নির্ভরতা দেশের সব শ্রেণীর পরিবারের। রেস্তোরাঁ ও ছাত্রাবাসসহ শহরকেন্দ্রিক মেসগুলোতে ডিমের ব্যাপক চাহিদা।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনে হিসাবে, গড়ে বাংলাদেশে প্রতিদিন ডিমের চাহিদা ৪ কোটি।
তাদের হিসাবে দেশে উৎপাদন চাহিদার চেয়ে বেশি। দিনে ৫ কোটি ডমি উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে দেশের খামারগুলোর।
প্রতি বছর বর্ষায় খামার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ডিমের উৎপাদন কমে। সম্প্রতি পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যায় অনেক খামার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ডিমের ওপরও তার প্রভাব পড়ে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত থেকে ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় এক মাস আগে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র নিয়ে আমদানিকারকরা সম্প্রতি ভারত থেকে প্রায় আড়াই লাখ ডিম এনেছে। এই ডিমের আমদানি মূল্য পড়েছে ৮ টাকার নিচে। অথচ দেশে উৎপাদিত ডিমের পাইকারি মূল্য ১০ টাকার বেশি।
আমদানির কোনও প্রভাব ডিমের বাজারে না পড়ায় অসন্তোষ ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজারে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে।
মধ্যবাড্ডা কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করতে আসা আমিরুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “যারা মাছ-মাংস কিনতে পারে না, তারা যেমন ডিমের ওপর নির্ভরশীল; আবার যাদের অনেক টাকা আছে, তারাও ডিম খায়। কারণ তাদের ডিমের নুডুলস খেতে হয়, বাচ্চাদের পছন্দ। অর্থাৎ ধনী-গরিব সবারই ডিমের চাহিদা রয়েছে।”
বায়িং হাউসে চাকরি করা এই ক্রেতা আবলেন, “আমরা পত্রিকায় দেখলাম, ভারত থেকে ৭-৮ টাকায় ডিম আমদানি হচ্ছে। ওরা এই দামে ডিম বিক্রি করতে পারলে আমরা পারি না কেন? আমাদের এখানে তো সেই হিসেবে দ্বিগুণ দাম নিচ্ছে বিক্রেতারা।”
ডিমের দাম ১০ টাকার নিচে থাকলে ভালো হয়, মত আমিরুলের।
খুচরা বিক্রেতারা জানান, প্রায় তিন সপ্তাহ ধরেই ঢাকার বাজারে ডিমের দাম চড়া। গত আগস্ট মাসের শেষ দিকেও এক ডজন ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৫০-১৫৫ টাকায়। তার আগে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এক ডজন ডিমের দাম ছিল ১২৫-১৩০ টাকা। ওই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডিমের ডজন এক লাফে ১৪৫-১৫০ টাকায় উঠে আসে। এর পর আর কখনওই দাম নিচে নামেনি।
সাম্প্রতিক দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েকটি জেলায় প্রবল বন্যার কারণে মুরগির খামার নষ্ট হয়েছে। এতে ওই সব এলাকায় মুরগি ও ডিমের উৎপাদন কমেছে। আর ভারত থেকে সম্প্রতি যে ডিম আমদানি হয়েছে, তাও চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এ কারণে দাম কমার কোনও সম্ভাবনা আপাতত নেই।
রামপুরা বাজারের ডিম বিক্রেতা নাহিদ ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, বন্যার কারণে ডিমের ঘাটতি। পাইকারদের কাছ থেকে একটু বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। একারণে ডজনে ৫ টাকা দাম বাড়াতে হয়েছে।
ভারত থেকে ডিম আসার পরও দাম বাড়ছে কেন- এ প্রশ্নের জবাবে ওই বিক্রেতা বলেন, “এখন পর্যন্ত আমি বাজারে কোনও ভারতীয় ডিম দেখি নাই। আপনি দেখছেন?
“আমরা কেবলই শুনেছি, কিন্তু কোথায় এসেছে, সেটা আমরা জানি না। দাম কম থাকলে সবার জন্য ভালো। দাম বেশি থাকলে তো বিক্রি কমে যায়। তাতে কি আমাদের লাভ বাড়ে?”
গত বছরের সেপ্টেম্বর চারটি প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি পিস করে মোট ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু ওইবারও দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।
ডিমের দাম বেশি হওয়া জন্য খামারিরা কয়েক বছর ধরেই পোল্ট্রি ফিডের দাম বেড়ে যাওয়াকে কারণ হিসাবে দেখাচ্ছেন।
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ভারতে একটা ডিমের উৎপাদন খরচ ৫ টাকা। বাংলাদেশে উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ২৯ পয়সা।
“আমাদের এখানে দ্বিগুণ কেন- এটা খতিয়ে দেখতে হবে সরকারকে। প্রাণী খাদ্য বিপণনকারী কিছু প্রতিষ্ঠানের কারণে এখাতের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। এটা কমাতে হলে এই সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। এই সিন্ডিকেট আমদানির নাম করে দেশীয় প্রাণী খাদ্য বেশি দামে খামারিদের কাছে বিক্রি করছে।”
পোল্ট্রি ফিডের দামে স্বচ্ছতা আনতে পারলেই কেবল ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে বলে মনে করেন খামারিদের এই নেতা।
এনিয়ে তারাও সোচ্চার বলে জানিয়ে সুমন বলেন, “আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করতে চাই।”
সবজি ও অন্যান্য পণ্য
ডিমের দাম বাড়তি হলেও বাজারে সবজির দাম কিছুটা কমেছে।
মিরপুর-৬ নম্বর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে প্রতি কেজি পটল ৪০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, কঁচুরমুখী ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। একটি লাউ ৫০ টাকা এবং চালকুমড়া ৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
বেশিরভাগ বাজারেই লাল ও সাদা আলু প্রতি কেজি ৫৮-৬০ টাকা, রসুন ২০০-২৩০ টাকা, পেঁয়াজ ১১০-১১৫ টাকা, আদা ২৪০-২৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। শুকনা মরিচ ৩৮০ টাকা, হলুদ ৩৪০ ও জিরা ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছের দাম আগের মতোই আছে বাজারে।
মিরপুরের ওই বাজারে ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬৬০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে। এক কেজি বা এর সামান্য কম-বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকায়।
এছাড়া ছোট মাছের মধ্যে কাচকি মাছ ৬০০ টাকা, পাবদা ৩৫০ টাকা, সরপুঁটি ও সামুদ্রিক লইট্টা মাছ ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। খইলশা মাছ ২০০ টাকা, নলা মাছ ২২০-২৪০ টাকা এবং চিংড়ি মাছ ৬৫০-৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বড় মাছের মধ্যে রুই মাছ ৪০০-৪৫০ টাকা, পাঙ্গাস মাছ ২০০ টাকা, কাতলা ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। সোনালি মুরগি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা, লেয়ার ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা ও দেশি মুরগি ৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকা কেজি দরে।