রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিষয়ে নিজের অনমনীয় অবস্থান থেকে সরে এসেছেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান। কেন্দ্রে সরকার গঠনের লক্ষ্যে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছেন তিনি।
পিটিআইয়ের একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে জিও নিউজ।
সংবাদ সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, পিপিপির সঙ্গে বৈঠকে বসতে প্রস্তুত পিটিআই। একই সঙ্গে পিপিপির সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে চান কারারুদ্ধ পিটিআই নেতা ইমরান।
কেন্দ্রে সরকার গঠনের বিষয়ে পিটিআই ও পিপিপির মধ্যে আলোচনার জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হবে বলে, সূত্রের বরাত দিয়ে জানায় জিও নিউজ।
ইমরান এমন সময়ে সুর নরম করলেন যখন কেন্দ্রে জোট সরকার গঠনের বিষয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে পিপিপি ও পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)।
প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থিতা থেকে মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ সরে দাঁড়িয়ে নিজের ছোট ভাই শেহবাজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেন নওয়াজ শরিফ। পাশাপাশি পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির সম্মতিতে ছয় দলীয় জোট গড়তেও সম্মত হন তিনি।
শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বে এই জোটে আছে পিএমএল-এন, পিপিপি, মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি), পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কায়েদ ই আজম গ্রুপ (পিএমএল-কিউ), ইস্তেহকাম-ই-পাকিস্তান পার্টি (আইপিপি) ও বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি)।
পাকিস্তানের এই ছয় দল ৮ ফেব্রুয়ারির জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে যত আসনে জয়ী হয়েছে, তা যোগ করলে দাঁড়ায় ১৫২। এর সঙ্গে যুক্ত হবে নারী ও সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত আসন।
কেন্দ্রে সরকার গঠন করতে গেলে সর্বনিম্ন ১৬৯ আসনের দরকার পড়ে।
দলীয়ভাবে নির্বাচনে দাঁড়াতে না পেরে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সর্বোচ্চ আসন পাওয়ার পরও সংরক্ষিত আসনের বাধ্যবাধকতার কারণে সরকার গঠনে পিছিয়ে পড়ে। পাকিস্তানের সংবিধানে বলা আছে, নির্বাচনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলই কেবল সংরক্ষিত আসনের বরাদ্দ পাবে।
পিটিআইয়ের পক্ষ থেকে সম্প্রতি জানানো হয়, তাদের সমর্থনপুষ্ট নির্বাচিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মজলিস-ই-ওয়াহদাতুল মুসলিমিনে (এমডব্লিউএম) যোগ দেবেন। সেক্ষেত্রে নারী ও সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত আসনের ভাগ পাবে পিটিআই।
৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিষদ ও চার প্রাদেশিক পরিষদের ভোটে কারচুপির অভিযোগ আনেন ইমরান। তার দল এখন প্রতিদ্বন্দ্বী বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইছে। এরই অংশ হিসেবে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পিপিপির সঙ্গে পিটিআই বৈঠকের তোড়জোড় করছে।
এছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী জামিয়াত উলেমা-ই-ইসলাম (ফজল), আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ জাতীয়তাবাদী অন্যান্য দলের সঙ্গেও আলোচনায় বসার পরিকল্পনা করছেন ৭১ বছর বয়সী ইমরান। এসব দল ‘ভোটে কারচুপির’ প্রতিবাদ করে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার পিটিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা তাদের মহাসচিব ওমর আয়ুব খানকে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনয়ন দিয়েছে।
পিটিআইয়ের সূত্র জিও নিউজকে জানায়, সম্প্রতি রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করেন দলটির নেতা আসাদ কায়সার। একসময় জাতীয় পরিষদের স্পিকারের দায়িত্ব পালন করা এই নেতাকে কারাবন্দি ইমরান বলেছেন, তার নেতৃত্বে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে যেন কমিটি গঠন করা হয়।