সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে পাকিস্তানে। রবিবার ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবির নেতৃত্বে দেশটির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ রাজধানী ইসলামাবাদের দিকে রওনা শুরু করে।
বিক্ষোভ থামাতে এরই মধ্যে ইসলামাবাদে লকডাউন জারি করা হয়েছে। শহরের অধিকাংশ মূল সড়কগুলো ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। মোবাইল পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইসলামাবাদ হাই কোর্ট ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফের (পিটিআই) নেতৃত্বাধীন এই বিক্ষোভকে অবৈধ ঘোষণা করেছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ইসলামাবাদের আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হচ্ছে। পুলিশ বলছে, তাদের লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করা হয়েছে। আর পিটিআই দাবি করেছে, পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে ও লাঠিচার্জ করেছে।
পিটিআই দাবি করেছে, সারা দেশে অভিযান চালিয়ে তাদের অনেক সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
শহরজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি যে দ্রুত শেষ হবে না, তা স্পষ্ট। ইসলামাবাদের রাস্তাগুলো যেমন বন্ধ, তেমনই রাজনৈতিক অচলাবস্থাও চলমান।
ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবিও এই বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন। তিনি গত মাসে জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রির।
বুশরা বিবি পেশোয়ার থেকে ইসলামাবাদ পর্যন্ত পিটিআই নেতা আলি আমিন গান্ডাপুরের নেতৃত্বে হওয়া মিছিল নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “ইমরান খান আমাদের মাঝে ফিরে না আসা পর্যন্ত এই আন্দোলন শেষ হবে না। আমি শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব। আপনাদের আমাকে সমর্থন করতে হবে। এটা শুধু আমার স্বামীর বিষয় নয়, বরং দেশ ও নেতৃত্বের বিষয়।”
ইসলামাবাদ এখন স্থানীয়দের কাছে ‘কন্টেইনারিস্তান’ বা ‘কন্টেইনারের দেশ’ হিসেবে নতুন নাম পেয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পুলিশ রাস্তায় শিপিং কন্টেইনার দিয়ে ব্যারিকেড দেওয়ায়, এমন নাম দেওয়া হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ইসলামাবাদকে সোমবার একটি দুর্গের মতো দেখাচ্ছে। পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর কড়া পাহারা এবং রাস্তায় রাস্তায় কন্টেইনার দিয়ে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। ইমরান খানের সমর্থকদের রাজধানীতে প্রবেশ ঠেকাতেই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ইসলামাবাদে হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামের মতো সোশাল মিডিয়া আংশিকভাবে বন্ধ রয়েছে।
শহরটির বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবন এখন বিপর্যস্ত। স্কুল বন্ধ রয়েছে। কর্মীদের অফিসে পৌঁছাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। ইন্টারনেটনির্ভর ব্যবসা, বিশেষ করে রাইড শেয়ারিং ও খাবর সরবরাহ সেবা প্রায় বন্ধ।
স্থানীয় এক বাসিন্দা সাংবাদিকদের বলেন, “এটা ক্লান্তিকর। প্রতিদিন নতুন কিছু ঘটে, কিন্তু কন্টেইনারগুলো সবসময় থাকে।”
ইমরান খান সোমবারের বিক্ষোভকে ‘শেষ ডাক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এতে তিনটি দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তার কারামুক্তি এবং গত দুই বছরে আটক হওয়া শত শত দলীয় কর্মীদের মুক্তি।
ইমরান খান, তার স্ত্রী বুশরা বিবি এবং পিটিআইয়ের জন্য এটি এখন ‘মরণ-বাঁচন’ পরিস্থিতি। প্রথমবারের মতো বুশরা বিবি নিজেই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
ইমরান খানের বিরুদ্ধে বর্তমানে ১০০টির বেশি মামলা রয়েছে। তিনি দাবি করেন, এসব মামলার পেছনে সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক বিরোধীরা রয়েছে। বর্তমানে তার রাজনৈতিক বিরোধীরা জোট সরকার গড়ে পাকিস্তানের ক্ষমতায় রয়েছে। গত জুন মাসে ইমরান খানকে নির্বিচার আটকের বিষয়টি বেআইনি বলে ঘোষণা করে জাতিসংঘের একটি সংস্থা।