Beta
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫

পুঁজিবাজারের মন্দায় ‘বাজেট উসিলা, প্রভাব অর্থনীতির’

ঢাকার একটি ব্রোকারেজ হাউসে পুঁজিবাজারের লেনদেন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ঢাকার একটি ব্রোকারেজ হাউসে পুঁজিবাজারের লেনদেন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

অনিশ্চিত অবস্থায় বড় বড় পতন দেখছে দেশের পুঁজিবাজার। এ দশা বিনিয়োগকারীদের হতাশা আরও তাতিয়ে তুলছে। 

এই বাজারের মন্দা কাটাতে প্রস্তাবিত বাজেটে কোনও দিকনির্দেশনা নেই, উল্টো মূলধনি মুনাফা বা ক্যাপিটাল গেইনের ওপর রয়েছে করের প্রস্তাব। এতে বাজারের পতন আরও তরান্বিত হয়েছে।   

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পুঁজিবাজারের এই দশার জন্য বাজেট উসিলা মাত্র, দেশের অর্থনীতির সংকটই বড় কারণ।  

গত ৬ জুন (বৃহস্পতিবার) অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন; তাতে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) অর্জনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

তবে মন্দা পুঁজিবাজারে বেড়েছে আরও চাপ। বাজেটে মূলধনি মুনাফার ওপর কর বসানোর প্রস্তাব এসেছে। এরপরই পর পর দুই দিন বড় দরপতন দেখল পুঁজিবাজার।

রবিবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৫ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৫ শতাংশ কমে ৫ হাজার ১৭১ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে নেমে আসে। অন্য বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০৬ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৭১ শতাংশ কমে ১৪ হাজার ৮৪০ দশমিক ৪৮ পয়েন্টে নামে।

সোমবার ডিএসইএক্স আরও ৬৫ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৬ শতাংশ কমে ৫ হাজার ১০৫ দশমিক ৮৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে। সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৬২ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ কমে ১৪ হাজার ৬৭৮ দশমিক ৩৬ পয়েন্টে নামে।

তবে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বাজেট উসিলা মাত্র। বাজেট পেশের অনেক আগে থেকেই তো বাজার পড়ছে; মন্দা চলছে। আর এজন্য অনেক কারণ আছে। এখন বাজার খারাপের জন্য শুধু বাজেটকে দায়ী করা ঠিক হবে না।

“দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাবও বাজারে পড়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়েই চলেছে। ডলারের দাম আরেক দফা বেড়েছে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে নেমে এসেছে। সব মিলিয়ে বাজারে অস্থিরতা চলছে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজার ভালো হবে- এমনটা আশা করা ঠিক হবে না।”

দীর্ঘদিন ধরে দেশের পুঁজিবাজারে মন্দা চলছে। ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীই হতাশ। অনেক বিনিয়োগকারী বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

বাজেটের আগে ডিএসইসহ বাজার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দাবি ছিল, ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে নতুন করে যেন করারোপ করা না হয়। কিন্তু বাজেট প্রস্তাবে পুঁজিবাজারে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফায় কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, সেকেন্ডারি বাজারে শেয়ার লেনদেন করে কোনও বিনিয়োগকারী এক বছরে ৫৫ লাখ টাকা মুনাফা করলে তার ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত থাকবে, বাকি ৫ লাখ টাকা মুনাফা ওই বিনিয়োগকারীর মোট আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে।

তাতে ওই বিনিয়োগকারীর নির্দিষ্ট একটি অর্থবছরে তার মোট আয়ের ওপর যে হারে কর প্রযোজ্য হবে, সেই হারে কর দিতে হবে।

তবে কোনও বিনিয়োগকারী যদি কোনও শেয়ার একটানা ৫ বছর ধরে রেখে ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফা করে, সে ক্ষেত্রে ওই মুনাফার ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপ হবে।

বাজার পরিস্থিতি

বাজেট পেশের আগে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পড়তে পড়তে ৫ হাজার ২৫০ পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছিল। বাজেট প্রস্তাবের দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ২৩৭ দশমিক ৩২ পয়েন্ট।

দুদিন সাপ্তাহিক ছুটির পর রবিবার সেই সূচক ৬৫ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৫ শতাংশ কমে ৫ হাজার ১৭১ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে নামে। সেমবারও ডিএসইএক্স প্রায় একই পরিমাণ ৬৫ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৬ শতাংশ কমে ৫ হাজার ১০৫ দশমিক ৮৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে।

এক বছর আগে ৫ জুন ডিএসইএক্স ছিল ৬ হাজার ৩৫৬ দশমিক ৩০ পয়েন্ট।

হিসাব বলছে, এক বছরের ব্যবধানে ডিএসইএক্স কমেছে ১ হাজার ২৫০ পয়েন্টের বেশি।

সোমবার ডিএসইর অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস ১৭ দশমিক ১৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১০৩ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে। ডিএস-৩০ সূচক ২৩ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮১১ দশমিক ৭৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৬২ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ কমে ১৪ হাজার ৬৭৮ দশমিক ৩৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

গত বছরের ৫ জুন সিএএসপিআই ছিল ১৮ হাজার ৭৭৬ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এক বছরে সিএএসপিআই কমেছে ৪ হাজার ১০০ পয়েন্ট।

সোমবার ডিএসইতে ৩৫৭ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবস গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৫৪২ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

ডিএসইতে ৩১৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। রবিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৩৫৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

এদিন ডিএসইতে মোট ৩৯১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে মধ্যে দর বেড়েছে বেড়েছে ২৬টির। কমেছে ৩৪০টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ২৩টির দর।

সোমবার সিএসইতে ২৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। রবিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১০৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

১০ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। বৃহস্পতিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

সোমবার ২১৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ২২টির। কমেছে ১৬৭টির। অপরিবর্তিত ছিল ২৫টির দর।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত