জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলসহ দুই দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চলছে।
এনআইডি অনুবিভাগের আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেসের (আইডিইএ)-২ প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডাকা এই কর্মসূচিতে সারাদেশে বন্ধ হয়ে পড়েছে সেবা কার্যক্রম।
বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃষ্টিতে ভিজে ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন আইডিইএ-২ প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তারা জানিয়েছে, কর্মবিরতি কর্মসূচি কেবল ঢাকার নির্বাচন ভবনে নয়, সারাদেশের সব নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে পালিত হচ্ছে। আইডিইএ-২ প্রকল্পের ৯-২০ গ্রেড পর্যন্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারী দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।
মঙ্গলবার রাতে এক বৈঠক শেষে দুই দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিলেন আইডিইএ-২ প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তাদের দুই দফা দাবির মধ্যে আছে- এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখা এবং আইডিইএ প্রকল্পের সব আউটসোর্সিংয়ে কর্মরতদের চাকরি রাজস্বে স্থানান্তর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ২৬০ জন জনবল রয়েছে। তাদের মাধ্যমেই এনআইডির যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে নির্বাচন কমিশন।
কর্মসূচির বিষয়ে প্রকল্পের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রুহুল আমিন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “গতকাল (মঙ্গলবার) আমরা ঢাকার হেড অফিসে যারা কর্মরত আছি, থানা নির্বাচন অফিসে যারা আছে- সবাই বৈঠক করেছি। নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সামনে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই কর্তৃপক্ষকে আর সুযোগ দেওয়া হবে না।”
তিনি বলেন, “এনআইডির কার্যক্রম বিগত স্বৈরশাসনের আমলে নির্বাচন কমিশন থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঘৃণিত চক্রান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এটি আবার নির্বাচন কমিশনে প্রতিস্থাপন করতে হবে। বর্তমান আইন বাতিল করে নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব দিতে হবে।
“দেশ এখন সংস্কারের পথে। নতুন যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে, তারা যেন আমাদের চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয়টা দেখে- এটাও আমাদের চাওয়া।”
এনআইডি কার্যক্রম কতদিন বন্ধ রাখবেন জানতে চাওয়া হলে প্রকল্পের প্রশাসনিক এই কর্মকর্তা বলেন, “দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা কাজে ফিরব না। সারাদেশে এখন এনআইডি সেবা বন্ধ আছে।”
এ বিষয়ে প্রকল্পের সহকারী প্রোগ্রামার রুবেল চন্দ মজুমদার সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে। আজকে শুরু করছি। কখন শেষ হবে, তা বলতে পারব না।
“কর্তৃপক্ষ সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিলে আমরা এই কর্মসূচি প্রত্যাহার করব। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় অতীতের মতন টালবাহানা করছে। তারা আইনের ফাঁকফোকর দেখাচ্ছে। দ্রুত সিদ্ধান্ত না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাব।”
গত বছর আওয়ামী লীগ সরকার এনআইডি অনুবিভাগ নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে নেওয়ার জন্য স্বতন্ত্র একটি আইন প্রণয়ন করে।
তবে সেখানে বলা হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে কার্যক্রম না নেবে, ততদিন পর্যন্ত তা ইসির অধীনেই থাকবে।
আইনটি করার সময় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ ও সাবেক নির্বাচন কমিশনাররা এনআইডি কার্যক্রম ইসির অধীনে রাখার পক্ষেই মত দিয়েছিলেন।
তাদের যুক্তি ছিল, যেহেতু ভোটার তালিকার ভিত্তিতে এনআইডি সরবরাহ করা হয়, সেহেতু ইসির অধীনে এই কার্যক্রম থাকাই নিরাপদ।
এছাড়া ইসির এই কার্যক্রমের জন্য রয়েছে দেড় যুগের দক্ষতা ও অবকাঠামো। নতুন করে অন্য কোনও দপ্তরের অধীনে নিলে নতুন করে লোকবল ও অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এতে রাষ্ট্রের ব্যয় ও নাগরিকদের ভোগান্তি বাড়বে।