দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মতো বড় দল অংশ না নিলেও শতাধিক আসনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। দলের ‘নতুন এক কৌশলে’ প্রথমবারের মতো ভোটের মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন তারা।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, নৌকা প্রতীকে একাধিকবার অনায়াসে বিজয়ী হেভিওয়েট প্রার্থীরাও এবার চিন্তিত জয় নিয়ে। ক্ষমতাসীন দলের কেউ কেউ এরই মধ্যে নিজেদের পরাজয় দেখেও ফেলেছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তাদের ধারণা, জাতীয় সংসদের ভোটের ইতিহাসে এবার সবচেয়ে বেশি সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হতে চলেছেন।
বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি দল নির্বাচনে অংশ নেবে কি না- এমন দোলাচলের মধ্যেই গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে ৭ জানুয়ারি ভোটের কথা জানান তিনি।
তাৎক্ষণিক সেই তফসিল প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচন বর্জনের পথে হাঁটে বিএনপি। তাদের এমন অবস্থানে ভোট সংশ্লিষ্টরা যখন ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ বা ‘ভোটারবিহীন’ নির্বাচনের আশঙ্কায় ছিলেন, তখনই নজিরবিহীন এক ঘোষণায় দেশবাসীকে অবাক করে দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
২৬ নভেম্বর গণভবনে সারাদেশ থেকে আসা আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ৩ হাজারেরও বেশি নেতাদের তিনি স্পষ্ট করে বলে দেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ যেন নির্বাচিত হতে না পারে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমনকি প্রতিটি আসনে ডামি প্রার্থী রাখা এবং দলের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- এমন ঘোষণা দিয়ে রাজনীতির মাঠে নতুন আলোচনার জন্ম দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
কোন সংসদে কতজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন ৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে তা বেড়ে যায়। জয় লাভ করেন ১৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা আগের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়ে হয় ৩২ জন।
১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় লাভ করেন।
১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা অনেকটাই কমে যায়। মাত্র ৩ জন ভোটের লড়াইয়ে জয়ী হন।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৩টি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে হওয়া ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ১০ জন। যে সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন।
একই বছরের (১৯৯৬) জুন মাসে হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে বিজয়ী হন মাত্র একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে নির্বাচিত হন স্বতন্ত্ররা।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় লাভ করেন ৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ১৫৩ জন। ১৪৭ আসনে ভোট হওয়া ওই নির্বাচনে বিজয়ী হন ১৬ জন স্বতন্ত্র।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় লাভ করেন ৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদের ২৯৯টি আসনে ৭ জানুয়ারি ভোট হবে। নওগাঁ-২ আসনের এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুতে সেখানে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।
এ নির্বাচনে প্রায় ১২ কোটি ভোটার, প্রার্থী অন্তত ১ হাজার ৯শ’ জন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রায় ৩৯০ জন।
এই ৩৯০ জনের মধ্যে ১৮ জন নৌকা প্রতীকে একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাকি স্বতন্ত্রদের বেশিরভাগও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীর বেশিরভাগ লড়াই করছেন নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে। কিছু সংখ্যক লড়ছেন আওয়ামী লীগেরই নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে।
বিভিন্ন আসনে জোটসহ নৌকার প্রার্থীদের চাপে থাকার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন খোদ আওয়ামী লীগেরই সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, “নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই ভোটের মাঠে ভালো লড়াই করছেন। তাদেরও প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে হবে। কোনোওভাবেই বিরত রাখা হবে না।”
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ‘গণতন্ত্রের বিউটি’ উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “গণতন্ত্র তো প্রতিযোগিতা। সুষ্ঠু নির্বাচন, সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা।”
তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ‘গণতন্ত্রের বিউটি’ বললেও তার সঙ্গে একমত নন দেশের নির্বাচন নিয়ে গবেষণা করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ।
সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “যাদেরকে আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থী বলছি, তারা প্রকৃতপক্ষে কতটা স্বতন্ত্র? ক্ষমতাসীন দলেরই ভিন্ন ধরন, যেই জিতুক সেই আমার।”
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “এটা যদি প্রাইমারি সিলেকশনের মতো হতো, তাহলে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা যেত। কিন্তু এখানে তো তা হচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থী, ডামি প্রার্থী সবাই এক।”
রেকর্ড জয় পেতে পারেন স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা
এখন পর্যন্ত হওয়া ১১টি সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হন তৃতীয় সংসদে। ১৯৮৬ সালের ওই নির্বাচনে ৩২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় লাভ করেন।
সবচেয়ে কম স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হন সপ্তম জাতীয় সংসদে। ১৯৯৬ সালের জুনের ওই নির্বাচনে মাত্র একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হন।
এবারের নির্বাচনে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগের সব রেকর্ড ভেঙে সবচেয়ে বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
আলোচিত স্বতন্ত্রপ্রার্থী যারা
বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে সকাল সন্ধ্যা জানতে পেরেছে, বেশ কয়েকটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছেন বর্তমান মন্ত্রিসভা এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্য। এ তালিকায় আরও আছেন হেভিওয়েট ও প্রভাবশালী নেতারা।
এদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান, দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্য এবং সংসদে আওয়ামী লীগের চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরীর ভাই।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বিরুদ্ধে চাঁদপুর-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শামসুল হক ভূঁইয়া। পিরোজপুর-১ আসনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল আউয়াল।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের বিরুদ্ধে নরসিংদী-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মনোহরদী উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে গাজীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম।
গাজীপুর-২ আসনে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের দুই নেতা কাজী আলিম উদ্দিন ও সাইফুল ইসলাম।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের বিরুদ্ধে নওগাঁ-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা মো. খালেকুজ্জামান তোতা। রাজশাহী-৬ আসনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা যাচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য রাহেনুল হককে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালের বিরুদ্ধে জামালপুর-২ আসনে লড়াই করছেন দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী সাজাহান আলী মণ্ডল ও জিয়াউল হক।
নেত্রকোণা-২ আসনে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরুর বিরুদ্ধে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপমন্ত্রী ফুটবলার আরিফ খান জয়।
ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানও আছেন চ্যালেঞ্জের মুখে। ঢাকা-১৯ আসনে তার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য তৌহিদ জং মুরাদ।
হবিগঞ্জ-৪ আসনে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর বিরুদ্ধে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ভোটের মাঠে বেশ সাড়া ফেলেছেন তিনি।
মেহেরপুর-১ আসনে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠে নেমেছেন দুই সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মান্নান এবং জয়নাল আবেদীন।
নাটোর-৩ আসনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিক।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের বিরুদ্ধে শরীয়তপুর-২ আসনে মাঠে নেমেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর ছেলে খালেদ শওকত আলী।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ফরিদপুর-৩ আসনে শামীম হকের বিরুদ্ধে লড়ছেন দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী এ কে আজাদ।
ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা আবদুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধে মাদারীপুর-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য তাহমিনা বেগম।
খুলনা-৪ আসনে অন্যতম পোশাক রপ্তানিকারক আবদুস সালাম মুর্শেদীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ছেন সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা রশীদী সুজার ভাই মোর্তজা রশীদী দারা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দিনাজপুর-৩ আসনে হুইপ ইকবালুর রহিমের বিরুদ্ধে ভোটের মাঠে নেমেছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ কুমার ঘোষ কাঞ্চন।
জামালপুর-৪ আসনে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান এবার দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তিনি লড়ছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান হেলালের বিরুদ্ধে।
রাজশাহী-৪ আসনের তিন বারের সংসদ সদস্য এনামুল হক এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। তিনি নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করছেন।
নাটোর-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ছেন সাবেক মন্ত্রী আহাদ আলী সরকার।
একাদশ সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ আসন থেকে তিন বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীও এবার নৌকা প্রতীক পাননি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
সুনামগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্ত এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। দল মনোনয়ন দিয়েছে শাল্লা উপজেলার সদ্যসাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে রয়েছেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী।
টাঙ্গাইল-৫ আসনের সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন এবার স্বতন্ত্রপ্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন।
এছাড়া নওগাঁ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার, নওগাঁ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, বরিশাল-৪ আসনের পঙ্কজ দেবনাথ, কক্সবাজার-১ আসনের জাফর আলম, সুনামগঞ্জ-১ আসনের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, গাইবান্ধা-৪ আসনের মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, ঝিনাইদহ-৩ আসনের শফিকুল আজম খান, যশোর-৪ আসনের রণজিৎ কুমার, সাতক্ষীরা-২ আসনের মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, হবিগঞ্জ-২ আসনের আব্দুল মজিদ খান ও ময়মনসিংহ-৯ আসনে আনোয়ারুল আবেদীন খান দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে নেমেছেন।
১৪ দলীয় জোটসঙ্গী হিসেবে নৌকা প্রতীকে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পিরোজপুর-২ আসনে নির্বাচন করছেন। তার জয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দীন মহারাজ।
কুষ্টিয়া-২ আসনে ভোটের লড়াইয়ে এবারও নেমেছেন হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে পরিচিতি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এই জাসদ নেতার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন মিরপুর উপজেলা পরিষদ পদত্যাগী চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা কামারুল আরেফিন।
ওয়ার্কার্স পার্টির প্রধান রাশেদ খান মেনন গত তিন সংসদেই ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা প্রতীকে। বহু বছর পর এবার তিনি নির্বাচন করছেন বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে।
বরিশালে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নাতি ফাইয়াজুল হক রাজু। এছাড়া এই আসনে ভোটের মাঠে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনি।
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করেছে, এমন কয়েকটি আসনে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছে সকাল সন্ধ্যা।
তাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার অভিনব কৌশলে ভোটের রাজনীতি জমে উঠেছে। যেসব নেতা এতদিন নেতাকর্মীদের খবর নেননি, তারা এখন পরাজয়ের আতঙ্কে রয়েছেন। এমনকি নানা প্রলোভনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়ে এখন দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু তাতে খুব লাভ হয়নি। চিন্তা আরও বেড়েছে।
তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট কয়েকজন প্রার্থী স্বতন্ত্রদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তার স্পষ্ট বক্তব্য, জনগণের ভোটেই জিতে আসতে হবে। কোনোওভাবেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরানো হবে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি যদি এমন থাকে, তাহলে এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বড় ফ্যাক্টর হিসেবে আবির্ভূত হবেন। সেটা আওয়ামী লীগের জন্য না হলেও দলটির অনেক প্রার্থীর জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। যদি শেষ পর্যন্ত নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, তাহলে সব মিলিয়ে নতুন পরিস্থিতি হতে পারে।