দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের মধ্যে স্বতন্ত্রদের ১০টিসহ ৪৮টি পাচ্ছে আওয়ামী লীগ, আর বাকি ২টি জাতীয় পার্টির।
এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের ১৪ দলীয় শরিকদের জোটবদ্ধ করে ও স্বতন্ত্রদের সমর্থন সংক্রান্ত চিঠি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দিয়েছে।
বুধবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত জোটবদ্ধ হওয়া সংক্রান্ত চিঠি ইসি সচিবের কাছে জমা দিয়েছেন দলটির প্রতিনিধিরা।
দ্বাদশ সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলমের কাছে চিঠিটি হস্তান্তর করেন।
সংসদে আসন ৩৫০টি। এরমধ্যে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি। বাকি ৩০০টি আসনে সরাসরি ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলেও নারী আসনে তা হয় না।
সরাসরি ভোটে বিজয়ী দল বা জোটের আসন সংখ্যার অনুপাতে নারী আসন বণ্টিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী সংরক্ষিত নারী আসনের মোট সংখ্যাকে (৫০) সংসদের জনপ্রতিনিধিদের মোট সংখ্যা (৩০০) দিয়ে ভাগ করে তার সঙ্গে গুণ করতে হয় কোনও দল বা জোটের প্রাপ্ত আসনকে। এক্ষেত্রে ফল ভগ্নাংশ হলে নিকটতম পূর্ণ সংখ্যা ধরা হয়।
এক্ষেত্রে দ্বাদশ সংসদে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নারী আসনের ৫০টির মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮টি, জাতীয় পার্টি ২টি ও স্বতন্ত্ররা ১০টি আসন পায়।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, “দ্বাদশ সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচনের বিষয়ে আমরা কাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছি, সে বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত পত্র নিয়ে এসেছি।”
এদিকে বিএনপির বর্জন করা দ্বাদশ সংসদ ভোটে আওয়ামী লীগ ২২৩, চৌদ্দ দলীয় শরিক জাসদ ১টি ও ওয়ার্কার্স পার্টি ১, স্বতন্ত্র ৬২ জন, কল্যাণ পার্টি ১টি আসন পেয়েছে। জাতীয় পার্টি ১১টি আসন পেয়েছে।
প্রতিনিধি দলের প্রধান হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, “আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের স্বতন্ত্র ৬২ জন সংসদ সদস্য সমর্থন দেবেন। সেই সমর্থনসূচক আলাদা আালাদা চিঠি তাদের স্বাক্ষরসহ আওয়ামী লীগের মাধ্যমে সন্নিবেশিত করে ইসি সচিবের কাছে জমা দিয়েছি। কমিশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।”
ইতোমধ্যে নারী আসন বণ্টনের সুবিধার্থে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দল ও স্বতন্ত্রদের কাছে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে দলে যোগদান বা জোট করার বিষয়ে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন বলেন, “ইসির চিঠির প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের পাশাপাশি চৌদ্দ দলীয় জেটের আরও দুজন সংসদ সদস্য নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছেন। ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন; তারাও সম্মতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সংরক্ষিত নারী আসনে যাদের মনোনয়ন দেবে তাদের তারা সমর্থন দেবেন।”
আওয়ামী লীগ ৩৮টি আসন বরাদ্দ পেত। স্বতন্ত্রদের ১০টি আসন নিয়ে এখন আওয়ামী লীগের জন্য বরাদ্দ থাকছে ৪৮টি। বাকি দুটি থাকছে জাতীয় পার্টির।
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জানান, আওয়ামী লীগের নিজস্ব সংসদ সদস্য ২২৩ জন ও জোটে ২ জন। সব মিলেয়ে এখন সংরক্ষিত ৫০টির মধ্যে ৪৮টি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত হবেন।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা স্বেচ্ছায় তাদের ভোটাধিকার আওয়ামী লীগের কাছে সমর্পন করেছেন বলে জানান স্বপন। তিনি বলেন, “তারা আওয়ামী লীগ যে প্রার্থীদের মনোনয়ন দেবেন তাদের সমর্থন দেবেন, সে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।”
স্বপন বলেন, “নির্বাচন কমিশন সচিব প্রত্যেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছেন, তাদের অবস্থান কী। তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের ক্ষমতাটি অর্পণ করেছেন। ৬২ জনই তাদের ভোটাধিকার আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর নিকট সমর্পণ করেছেন। আওয়ামী লীগ যাকে মনোনয়ন দেবেন তাকে (তারা) সমর্থন দেবেন।”
তিনি বলেন, “গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে প্রাণবন্ত করার জন্য স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তকে আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সাধুবাদ জানাই।”
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ জোট করল কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখানে জোটের বিষয় না। তারা (স্বতন্ত্ররা) তাদের ভোটাধিকার আওয়ামী লীগের নিকট সমর্পণ করেছেন। তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। তারা শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করেছে ঘরের ছেলে ঘরের ছেল হিসেবে থাকতে চায়। শেখ হাসিনা বলেছেন, সবাই তো আমার। সারা বাংলাদেশই আমার।”
স্বতন্ত্রদের হুইপ কে
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা কাদের হুইপিংয়ে থাকবে—এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হুইপ স্বপন বলেন, “কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী, যে সকল সুবিধা প্রাপ্ত হওয়ার কথা সেটি তারা প্রাপ্ত হবেন। সংসদকে প্রাণবন্ত করার জন্য তারা নিজস্ব পদ্ধতিতে ভূমিকা পালন করবেন।”
সংসদকে জবাবদিহিতার জায়গা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, “সরকারি দলের চেয়ে বিরোধী দল এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের ভূমিকা রাখার সুযোগ বেশি।”
স্বতন্ত্রদের হুইপিংয়ের বিষয়টি আরও পরে পরিস্কার হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “হুইপিংটা এখানে বড় কথা নয়। হুইপিংটা আসলে সরকারি দলের প্রযোজ্য হয়। স্বতন্ত্রদের হুইপ প্রযোজ্য হয় না। তাদের স্বীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তারা সমালোচনা করবেন।”