Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

মন্দা পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হলেই পড়ছে সূচক

ঢাকার একটি ব্রোকারেজ হাউসে পুঁজিবাজারের লেনদেন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ঢাকার একটি ব্রোকারেজ হাউসে পুঁজিবাজারের লেনদেন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

পুঁজিবাজারের মন্দা পরিস্থিতির কারণে হতাশা জেঁকে ধরেছে বিনিয়োগকারীদের।

শেয়ারদর ধারাবাহিকভাবে কমায় পোর্টফোলিওতে বড় লোকসান দেখছে অনেকেই। আতঙ্কে অনেকেই লেনদেন থেকে বিরত হয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। কেউ কেউ শেয়ার ছেড়ে দিয়ে লোকসান কমাতে চাইছেন। ফলে এই বাজারে লেনদেন শুরু হলেই পড়ছে মূল্যসূচক।

রবিবার বড় পতনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে নতুন সপ্তাহ। প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯৭ পয়েন্টের বেশি কমে ৫ হাজার ১৬০ পয়েন্টে নেমেছে। লেনদেন হওয়া ৪০০টি কোম্পানির মধ্যে ৮৬ দশমিক ৫০ শতাংশেরই দর কমেছে। বেড়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশের।

অন্য পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্র দেখা গেছে। এদিন সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৭১ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট; নেমেছে ১৪ হাজার ৫৪৯ দশমিট ৯৫ পয়েন্টে।

এদিকে পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে পুঁজি রক্ষায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তক্ষেপ কামনা করে রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্মারকলিপি দিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ৪ নম্বর গেটে ‘পুঁজিবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের রক্ষার আবেদন’ শিরোনামে স্মারকলিপিটি দেন বাংলাদেশ জনস্বার্থ সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক বুলবুল আহমেদ।

পূজার ছুটির পর ১৪ অক্টোবর লেনদেন শুরু হয় পুঁজিবাজারে। ওইদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৮ পয়েন্ট কমেছিল। পরের দিন ১৫ অক্টোবর কমেছিল ৭ পয়েন্ট।

১৬ অক্টোবর বুধবার ডিএসইএক্স পড়েছিল ৫০ পয়েন্ট। লেনদেন নেমে এসেছিল ৩০০ কোটি টাকার নিচে। ২৯৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়, যা ছিল নয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।

গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ডিএসইএক্স ৫৮ দশমিক ২৩ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২৫৭ দশমিক ৯৭ পয়েন্টে নেমেছিল।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর পুঁজিবাজারে ব্যাপক উত্থান শুরু হয়। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। টানা চার কর্মদিবসে (৬, ৭, ৮ ও ১১ আগস্ট) প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৮০০ পয়েন্টের মতো বেড়েছিল।

গত ১১ আগস্ট ডিএসইএক্স ৯১ পয়েন্টের বেশি বেড়ে ৬ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে ৬ হাজার ১৫ দশমিক ৯০ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। লেনদেন ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

তবে ১২ ও ১৩ আগস্ট বাজার হোঁচট খায়; এই দুই দিনে ডিএসইএক্স প্রায় ১৫০ পয়েন্টের মতো পড়ে যায়; সূচক নেমে আসে ৫ হাজার ৮৬৭ দশমিক ৯৬ পয়েন্টে। লেনদেন নেমে আসে হাজার কোটি টাকায়।

এরই মধ্যে ১৩ আগস্ট অর্থনীতিবিদ পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

তার নিয়োগের খবরে ১৪ আগস্ট দুই বাজারেই সূচক বাড়ে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বাড়ে ৮৪ দশমিক ৮১ পয়েন্ট। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বাড়ে ১৩২ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট।

মাসরুর রিয়াজের নিয়োগের পরপরই বিতর্ক ওঠার প্রেক্ষাপটে তার নিয়োগ স্থগিত রাখে সরকার।

এ খবরে ১৫ আগস্ট দুই বাজারেই সূচকের পতন দেখা যায়। ডিএসইএক্স ৪৮ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৯০৩ দশমিক ৮৩ পয়েন্টে দাঁড়ায়।

এরই মধ্যে ১৬ আগস্ট পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান মাসরুর রিয়াজ। পদত্যাগের কারণ জানিয়ে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতিও দেন মাসরুর।

এমন পরিস্থিতিতে ১৮ আগস্ট দুই বাজারেই মূলসূচকের বড় পতন হয়েছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১২৫ দশমিক ১৯ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৭৭৮ দশমিক ৬৩ পয়েন্টে নেমে আসে।

মাসরুর রিয়াজ রাজি না হওয়ায় ১৮ আগস্ট বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের জন্য খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে নিয়োগ দেয় সরকার।

কিন্তু পুঁজিবাজারে পতন থামেনি। দু-একদিন ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই সূচক পড়েছে দুই বাজারে। লেনদেনেও খরা চলছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানা দরপতনে সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীর মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। কিছু বিনিয়োগকারী রাগে-দুঃখে সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত কম-বেশি সব শেয়ারে ক্রেতা আছে। তবে সবাই সতর্ক। যারাই একটু-আধটু শেয়ার কিনছেন, তাদের প্রায় সবাই ঝুঁকি বিবেচনায় যতটা সম্ভব কম মূল্যে শেয়ার কেনার চেষ্টা করছেন। এতে শেয়ারের বিক্রির চেষ্টার বিপরীতে ক্রয় চাহিদা বাড়ছে না। ফলে শেয়ারদর কমছে; পতন হচ্ছেই বাজারে।

দেশের বড় একটি ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বড় ও কৌশলী বিনিয়োগকারীরা এখন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগমুখী নন। এতে বাজারে ক্রয় চাহিদা কমে গেছে। এর বিপরীতে মার্জিন ঋণে কেনা শেয়ারে দর পতনে গ্রাহক নতুন করে অর্থ দিয়ে ঋণ সমন্বয় করছেন না।

“ফলে বাধ্য হয়ে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো ফোর্স সেল করছে, যা বাজারের দরপতনকে একরকম স্থায়ী রূপ দিচ্ছে।”

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর কয়েকদিন পুঁজিবাজারে সূচকের উল্লম্ফন হলেও একপর্যায়ে শেয়ারের দরপতন শুরু হয়। সেই ধারা এখনও অব্যাহত আছে।

রবিবারের বাজার পরিস্থিতি

সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৯৭ দশমিক ২৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১৬০ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়া সূচক ১৮ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৫৫ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৩৪ দশমিক ১৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৯৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

এদিন ডিএসইতে মোট ৪০০টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২৭টির বেড়েছে; কমেছে ৩৪৬টির। অপরিবর্তিত রয়েছে ২৭টির দর।

লেনদেন হয়েছে ৩৬২ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৩০৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক ১৬১ দশমিক ৯১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৮৫০ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৭১ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ৫৪৯ পয়েন্টে, শরিয়া সূচক ১৬ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট কমে ৯৪৩ পয়েন্টে এবং সিএসই ৩০ সূচক ১৭৯ দশমিক ২৫ পয়েন্ট কমে ১১ হাজার ৯২৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সিএসইতে রবিবার ২৩০টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ২৬টির। কমেছে ১৮১টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২২টির।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত