Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

হিমালয়ের পানিপথে মুখোমুখি ভারত ও চীন

Medog Dam
[publishpress_authors_box]

সময়টা গত মাসের এক শীতের বিকেল। তীব্র ঠাণ্ডার মধ্যেও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অরুণাচল প্রদেশের সিয়াং নদীর তীরে শতাধিক গ্রামবাসী বিক্ষোভ করছিলেন। মা সিয়াং নদীর ওপর কোনো বাঁধ নির্মাণ করা যাবে না, এমন স্লোগান দিচ্ছিলেন তারা।

কয়েক শতাব্দী ধরে মা সিয়াং নদীটিকে পবিত্র সত্ত্বা হিসেবে জেনে আসছেন গ্রামবাসীরা। পাহাড়ের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা এই নদীই কৃষিজীবী ওই সম্প্রদায়ের জীবিকার অন্যতম উৎস।

কিন্তু সেই নদী ও গ্রামবাসীর জীবন জীবিকা সবই এখন হুমকির মুখে। ভারত সরকার তাদের জমিতে দেশটির সবচেয়ে বড় বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। প্রায় নয় বিলিয়ন ঘনমিটার পানি ধারণ করতে পারে এমন একটি জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে সিয়াং আপার মাল্টিপারপাস নামের প্রকল্পের অধীনে। আর এই পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।

জলাধারটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। তখন এটি হবে ভারতের অন্য যে কোনো জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের তুলনায় অনেক বেশি। এই প্রকল্পটি প্রস্তাবিত হয় ২০১৭ সালে। বর্তমানে এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে।

সিয়াং তীরবর্তী মানুষদের দাবি, জলাধারটি নির্মিত হলে অন্তত ২০টি গ্রাম পুরোপুরি ডুবে যাবে। পাশাপাশি ২৪টির বেশি গ্রাম আংশিকভাবে তলিয়ে যাবে। এর ফলে কয়েক হাজার স্থানীয় তাদের বাসস্থান হারাবে।

স্থানীয়দের ক্রমবর্ধমান প্রতিরোধ দমনে বিজেপি (ভারতীয় জনতা পার্টি) নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে। তবে এখনও কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।

বিক্ষোভকারীদের অবস্থান অবশ্য বেশ দৃঢ়। সিয়াং ইন্ডিজেনাস ফার্মার্স ফোরামের (এসআইএফএফ) সভাপতি জেগং জিজং বলেন, “সরকার আমার ঘর, আমাদের মা সিয়াংকে দখল করে তা শিল্পে পরিণত করতে চায়। আমরা তা কখনোই হতে দেব না। যতদিন বেঁচে আছি এবং শ্বাস নিচ্ছি, ততদিন আমরা এই বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব।”

অবশ্য বিজেপি সরকার বলছে, বিক্ষোভকারী গ্রামবাসীরা ভুল বুঝছে। অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খানডু বলেছেন, “এটি শুধু একটি জলবিদ্যুৎ বাঁধ নয়, এর প্রকৃত উদ্দেশ্য হল সিয়াং নদীকে চীন থেকে রক্ষা করা।”

সিয়াং তীরবর্তী বাসিন্দারা যে ভারতীয় বাঁধ প্রকল্পের বিরোধিতা করছে, এর মূলে আছে দিল্লি ও বেইজিংয়ের মধ্যকার কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এই দুই দেশের মধ্যে পানি ও নিরাপত্তা নিয়ে টানাপোড়েন অনেকদিনের। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এনিয়ে সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

সিয়াং নদীর সৃষ্টি হয়েছে তিব্বতের কৈলাশ পর্বতের কাছ থেকে। সেখানে এটি ইয়্যারলুং জাংবো নামে পরিচিত। এরপর এটি অরুণাচল প্রদেশে প্রবেশ করে। ভারতজুড়ে এটি ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত। এরপর বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে।

চীন গত মাসে তিব্বতের মেদগ জেলার ইয়্যারলুং জাংবো নদীর ওপর তার সবচেয়ে বড় এবং বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। এই বাঁধটি ভারতীয় সীমান্তের ঠিক আগে নির্মিত হবে।

চীন ২০২০ সালে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা প্রথম ঘোষণা করে। এরপর দিল্লির কর্মকর্তারা চীনের বাঁধ প্রকল্পের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে প্রতিক্রিয়া হিসেবে আরেকটি বাঁধ নির্মাণের কথা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে শুরু করেন। ভারতের দাবি, সিয়াং বাঁধের বড় জলাধার মেদগ বাঁধের কারণে নদীর প্রবাহে যে বিঘ্ন ঘটবে, তা পুষিয়ে দেবে এবং আকস্মিক বন্যা বা পানি সংকট থেকে রক্ষা করবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভূমিকম্পপ্রবণ হিমালয় অঞ্চলে দুইটি বিশালকার বাঁধ ওই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। হিমালয়ের পানি সম্পদ নিয়ে ভারত ও চীনের ক্ষমতার বিপজ্জনক লড়াই স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

সংঘর্ষের কেন্দ্র

তিব্বতের মেদগ জেলার ইয়্যারলুং জাংবো নদীর ওপর নির্মাণাধীন নতুন বৃহৎ বাঁধ চীনের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ বাঁধ থ্রি গর্জেস বাঁধকেও ছাড়িয়ে যাবে। বেইজিং জানিয়েছে, এই প্রকল্পটি ২০৬০ সালের মধ্যে নেট-জিরো কার্বন নির্গমন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ হবে। চীনা মিডিয়াগুলো জানিয়েছে, বাঁধটি নির্মাণে খরচ হবে ১৩৭ বিলিয়ন ডলার। তবে এতে চীনে কত সংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে, সেবিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি।

বাঁধটি নির্মিত হবে নামচা বারওয়া পর্বতের কাছে গ্রেট বেন্ড এলাকয়। নদীটির পানি বিশ্বের অন্যতম গভীর ক্যানিয়নে পড়বে, যার গভীরতা ৫ হাজার মিটার ছাড়িয়ে যাবে। এই বাঁধ থেকে প্রতি বছর প্রায় ৩০০ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে।

চীনের নতুন এই বৃহৎ প্রকল্পটি হল ইয়্যারলুং জাংবো ও তার শাখা নদীগুলোর ওপর তৈরি করা সিরিজ বাঁধের সর্বশেষ সংযোজন। এর আগে নির্মিত বাঁধগুলো ছিল অপেক্ষাকৃত ছোট।

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) চাইনিজ স্টাডিজের অধ্যাপক বিআর দীপকের মতে “এই বাঁধগুলোকে ভারত ও চীনের মধ্যে একটি বড় সংঘর্ষের পয়েন্ট হিসেবে দেখা উচিত। জলসম্পদ নিয়ে বিরোধ থেকে সৃষ্টি হয়েছে অনেক সংঘর্ষ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইন্দুস নদীর পানি নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বিরোধের বিষয়টি। একইভাবে ইথিওপিয়া ও মিসরের মধ্যে নীল নদীর ওপর নির্মিত একটি বিশাল বাঁধ নিয়ে বিরোধ চলছে।”

তবে সিয়াং নদীর ওপর প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভারতের বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনাকে ‘আগুনে ঘি ঢালার’ মতো করে দেখছেন অধ্যাপক দীপক। তিনি মনে করেন, যতদিন চীন এসব নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ করবে, ততদিন উদ্বেগ ও আতঙ্ক চলতে থাকবে। একই সঙ্গে নিম্নাঞ্চলের দেশগুলোতে শক্তিশালী প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে।

অস্ট্রেলিয়ার থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান লোয়ি ইনস্টিটিউটের ২০২০ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তিব্বত মালভূমি থেকে উদ্ভূত নদীগুলোর নিয়ন্ত্রণ চীনকে ভারতের অর্থনীতির ওপর ‘চেপে ধরার’ ক্ষমতা দেয়।

শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা

চীনে ইয়্যারলুং জাংবো নদীকে প্রায়ই ‘অবাধ্য নদী’ বলা হয়। এটি অন্যান্য বড় চীনা নদীর মতো পশ্চিম থেকে পূর্বে না বয়ে গ্রেট বেন্ড-এ এসে হঠাৎ দক্ষিণ দিকে মোড় নিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। চীন এই নদীর উপর বাঁধ নির্মাণের জন্য ভারতের সীমানার কাছের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান নির্বাচন করেছে। আর তাই এই সিদ্ধান্তে নয়া দিল্লি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ইউনিভার্সিটির চাইনিজ স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক সাহেলি চট্টরাজ বলেন, “এটি স্পষ্ট যে চীন এই বাঁধকে একটি কৌশলগত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে। তারা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণে জলপ্রবাহকে প্রভাবিত করতে পারে।”

দীপকও এব্যাপারে চট্টরাজের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের মতো নিম্ন অববাহিকার দেশগুলো সবসময়ই আশঙ্কা করবে যে, চীন পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, বিশেষ করে বৈরী পরিস্থিতিতে। কারণ বাঁধের বৃহৎ জলাধার এই শঙ্কা আরও বাড়ায়।” এই জলাধারে ৪০ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি ধারণের ক্ষমতা থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভূমির ভঙ্গুর অবস্থা উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। ২০শ শতাব্দীতে রিখটার স্কেলে ৮ বা তার বেশি মাত্রার প্রায় ১৫ শতাংশ বড় ভূমিকম্প হিমালয় অঞ্চলে হয়েছে।

তিব্বতে বড় ভূমিকম্পের ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। গত ৭ জানুয়ারি ৭ দশমিক ১ মাত্রার এক ভূমিকম্পে অন্তত ১২৬ জন প্রাণ হারান। ভূমিকম্পের পর চীনা কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের ১৪টি জলবিদ্যুৎ বাঁধের মধ্যে অন্তত পাঁচটিতে ক্ষতির আশঙ্কাজনক চিহ্ন পাওয়া যায়। একটির দেয়াল হেলে পড়েছিল, আর কিছু বাঁধে ফাটল দেখা যায়। তিনটি বাঁধ খালি করা হয় এবং কয়েকটি গ্রাম সরিয়ে নেওয়া হয়।

এদিকে ভারত সরকার অরুণাচল প্রদেশের বাঁধবিরোধী বিক্ষোভকারীদের জানিয়েছে, চীনের কারণে ভূমি প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পাল্টা বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন। সরকার তাদের সতর্কবার্তায় ‘জলবোমা’ ও ‘জলযুদ্ধ’ শব্দের ব্যবহার করেছে।

সহকারী অধ্যাপক চট্টরাজ উল্লেখ করেন, ভারত বা চীন কেউই জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক জলপথ কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী নয়। এই কনভেনশন যৌথ স্বাদু পানির সম্পদ, যেমন ব্রহ্মপুত্র নদীর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে।

ভারত ও চীন ২০০২ সাল থেকে একটি সমঝোতা স্মারকের অধীনে ব্রহ্মপুত্র নদীর বন্যা মৌসুমে জলসম্পর্কিত তথ্য বিনিময় করে আসছে। তবে ২০১৭ সালে ভুটানের সীমান্তের কাছে ডোকলাম এলাকায় দুই দেশের সামরিক সংঘাতের পর, চীন সাময়িকভাবে এই তথ্য বিনিময় বন্ধ করেছে।

সেই বছর বসন্তে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যে প্রবল বন্যা দেখা দেয়। এতে ৭০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারায় এবং ৪ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।

অধ্যাপক দীপক বলেন, “সমস্যা সৃষ্টিকারী এই পরিস্থিতি আরো গুরুতর হয়, যখন সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায় বা শত্রুতাপূর্ণ হয়, যেমনটি ২০১৭ সালে হয়েছিল। সেসময় চীন তৎক্ষণাত তথ্য শেয়ার করা বন্ধ করে দেয়।”

খারাপ প্রতিবেশী, তিক্ত সম্পর্ক

মেদগ কাউন্টি বাঁধটি চীনের ১৪তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০২১-২০২৫) অংশ ছিল। আর এর পরিকল্পনা দশকেরও বেশি সময় ধরে চলছিল। তবে এটি গত ২৫ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রন্ধীর জয়সোয়াল বলেন, “নয়াদিল্লি নদীর পানি ব্যবহারের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং চীনের এলাকায় নদীগুলোর উপর বড় প্রকল্প সম্পর্কে আমরা ধারাবাহিকভাবে আমাদের উদ্বেগ জানিয়েছি।”

দুই দিন পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং সাংবাদিকদের বলেন, “এই প্রকল্পটি নিম্ন অববাহিকায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। বেইজিং ওই দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখবে এবং দুর্যোগ প্রতিরোধে সহযোগিতা বাড়াবে।”

তবে, ভারত ও চীনের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক বিরল।

গত অক্টোবর দেশ সীমান্তে সামরিক উত্তেজনা কমানোর জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছেছিল। কিন্তু এই চুক্তিকে তিক্ত সম্পর্কের মাঝে এক ধরনের বিরতি হিসেবে ভুলভাবে দেখা উচিত নয় বলে সতর্ক করেছেন উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান।

তিনি আল জাজিরাকে বলেন, “ভারত ও চীনের মধ্যে অনেক পার্থক্য এবং উত্তেজনার বিষয় রয়েছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিক জলবিষয়ক উত্তেজনা অন্তর্ভুক্ত।”

সবচেয়ে বেশি ক্ষতি বাংলাদেশের

ভারত ও চীনের মধ্যকার এই উত্তেজনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের উপর।

ব্রহ্মপুত্র নদী ব্যবস্থা প্রতি বছর বাংলাদেশের ৬৫ শতাংশেরও বেশি পানি সরবরাহ করে। এজন্য এটি ‘বাংলাদেশের জীবনরেখা’ হিসেবে বিবেচিত।

ঢাকার সিভিল সোসাইটি সংগঠন রিভেরিন পিপলের সেক্রেটারি জেনারেল শেখ রোকন আল জাজিরাকে বলেন, “চীন ও ভারতের মধ্যে ‘বাঁধের জন্য বাঁধ’ প্রতিযোগিতা আমাদের উপর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।”

এই শঙ্কা এক দশক ধরে ঢাকাভিত্তিক সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিজিআইএস) নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা খানের মনেও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

তিনি বলেন, “আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। কোনো সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন বা ব্যবহৃত প্রযুক্তির বিস্তারিত নেই। আমাদের একটি যৌথ ও বিস্তারিত সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন, পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন এবং সামাজিক ও দুর্যোগ প্রভাব মূল্যায়ন প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের কাছে কিছুই নেই।”

ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে বসবাসকারী কোটি কোটি মানুষের জীবিকা সরাসরি নির্ভর করে এই নদীর উপর। মালিক ফিদা খান বলেন, “যদি প্রবাহের মধ্যে কোনো ঘাটতি হয়, তবে এটি নদী তীরের ক্ষয় বাড়াবে এবং ভূমি পুনরুদ্ধারের কোনো সম্ভাবনা থাকবে না।”

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “ভারতের বাঁধটি বিশেষভাবে বাংলাদেশের অববাহিকার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। একটি বাঁধকে আরেকটি বাঁধ দিয়ে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এটি আমাদের জন্য বিপর্যয়কর এবং ভয়ানক প্রভাব ফেলবে।”

রোকনও এবিষয়ে একমত। তিনি বলেন, “চীনা বা ভারতীয় বাঁধ নিয়ে ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ মনোভাব থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার। ব্রহ্মপুত্র নদী নিয়ে আলোচনা কেবল বাংলাদেশ ও ভারতের, বা ভারত ও চীনের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হওয়া উচিত নয়। এটি অববাহিকাভিত্তিক আলোচনা হওয়া উচিত।”

ঢাকায় গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। এরপর বাংলাদেশে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু এই সরকার ভারত থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পক্ষ থেকে চীনের ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর বাড়ানো প্রভাব মোকাবিলায় কোনো যৌথ প্রচেষ্টা বা একক বিরোধিতা নেই।

মালিক ফিদা খান এই পানি সংকটকে ভারত ও বাংলাদেশের জন্য ‘একটি স্বর্ণালী সুযোগ’ হিসেবে দেখেন। তবে উইলসন সেন্টারের কুগেলম্যান আশাবাদী নন।

তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি, চীন এমন একটি দেশ যা বাহ্যিক চাপের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানায় না, তা সে একটি-দুইটি বা দশটি দেশ থেকেই হোক। যদি ভারত ও বাংলাদেশ যৌথ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষমও হতো, তবুও বেইজিংয়ের পদক্ষেপ থামাত না।”

তথ্যসূত্র : আল জাজিরা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত