হারলেই বাদ পড়ার শঙ্কা, জিতলেও নিশ্চিত নয় সেমিফাইনাল! এমন জটিল ধাঁধায় পড়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। বাঁচা-মরার সেই ম্যাচে কিনা ভারত করল এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বোচ্চ ৫ উইকেটে ২০৫ রানের স্কোর।
ভারতের রান রেট টপকে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করতে অস্ট্রেলিয়াকে জিততে হতো ১৫.৩ ওভারে। উল্টো সেই ম্যাচ তারা হারল ২৪ রানে। শুরুটা ভালো করলেও ৭ উইকেটে ১৮১ রানে থামে অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়ার হারে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করল ভারত। অপর দল হিসেবে ভারতের সঙ্গী হওয়ার লড়াইয়ে ফেবারিট আফগানিস্তান। কাল সকালে বাংলাদেশকে যে কোনও ব্যবধানে হারালেই শেষ চারের টিকিট পাবে তারা।
দুয়ার খোলা বাংলাদেশের জন্যও। তবে রশিদ খানদের বিপক্ষে জয়ের ব্যবধানটা হতে হবে বেশ বড়। অস্ট্রেলিয়ার আশাও আছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ অল্প রানের ব্যবধানে আফগানদের হারালে কপাল খুলতে পারে মিচেল মার্শের দলের।
এত বড় স্কোর তাড়া করতে নেমে আর্শদীপের করা প্রথম ওভারেই ৬ রানে ফিরেন ডেভিড ওয়ার্নার। ট্রাভিস হেড ও মিচেল মার্শ পাল্টা আক্রমণ করলে এটা বড় ধাক্কা হয়ে উঠেনি। জাসপ্রিত বুমরাকে যেখানে খেলতেই পারছিল না কোনও দল, সেখানে এই পেসারের প্রথম ২ ওভার থেকে অস্ট্রেলিয়া নেয় ১৫ রান।
ট্রাভিস হেড তার এক ওভারেই প্রথম চার বলের তিনটি মারেন বাউন্ডারি। পাওয়ার প্লেতে অস্ট্রেলিয়া ১ উইকেটে ৬৫ করে জবাবটা দিচ্ছিল সমান তালে। পাওয়ার প্লেতে ভারত করেছিল ১ উইকেট ৬০। দ্বিতীয় উইকেরটে হেড ও মার্শ গড়েন ৮১ রানের জুটি। ২৮ বলে ৩৭ করা মার্শকে অক্ষর প্যাটেলের অসাধারণ এক হাতের ক্যাচ বানিয়ে জুটিটা ভাঙেন কুলদীপ যাদব।
বড় খেলোয়াড়রা সবসময় জ্বলে উঠেন বড় মঞ্চে। এই ম্যাচে জ্বলে উঠলেন ট্রাভিস হেড। তার ৪৩ বলে ৭৬ রানের ইনিংসটি অবশ্য যথেষ্ট ছিল না অস্ট্রেলিয়াকে জেতানোর জন্য। কারণ মার্শের পর গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (১২ বলে ২০) ছাড়া অন্যরা সঙ্গ দিতে পারেননি তাকে। বুমরার বলে রোহিত শর্মাকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিনি।
আর্শদীপ সিং ৩৭ রানে ৩ উইকেট ও কুলদীপ যাদব নেন ২৪ রানে ২ উইকেট।
গ্রস আইসল্যাটে আজ শুরুর দিকে ঝড় বইয়ে দিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। খেলেছেন ৪১ বলে ৭ বাউন্ডারি ৮ ছক্কায় ৯২ রানের বিধ্বংসী ইনিংস। সেই ইনিংস দেখে সূর্যকুমার যাদব বলেছেন, ‘‘মনে হচ্ছিল স্বপ্ন দেখছি।’’
মিচেল স্টার্কের করা দ্বিতীয় ওভারে ৪ ছক্কা ১ বাউন্ডারিতে ২৮ রান নেন রোহিত। একটি ওয়াইড হলে সেই ওভারে স্টার্কের খরচ ২৯ রান, যা তার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এক ওভারে সর্বোচ্চ। রোহিত ফিফটি করেছিলেন ১৯ বলে, এটাই এই বিশ্বকাপের দ্রুততম। শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরির অপেক্ষা না করে স্টার্ককে তুলে মারতে গিয়ে বোল্ড হন রোহিত। ৮ রানের জন্য মিস হয় ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি।
বিরাট কোহলি এদিনও ছিলেন ব্যর্থ। ৫ বলে ০ রানে তাকে টিম ডেভিডের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান জস হ্যাজেলউড। পাওয়ার প্লেতে ভারত করেছিল ১ উইকেট ৬০। ১৫ ওভার শেষে স্কোরটা দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ১৬২।
সেই তুলনায় ঝড় উঠেনি শেষ ৫ ওভারে। এই সময়ে ৪৩ রানই নিতে পারে ভারত। শেষ ৫ ওভারে ছক্কা কেবল ৩টি। অথচ এই ম্যাচে বিশ্বকাপে নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ১৫ ছক্কার রেকর্ড গড়েছে ভারত। আগের ১৩ ছক্কার কীর্তি ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে।
ঋশভ পন্ত ১৪ বলে ১৫, শিবম দুবে ২২ বলে ২৮, সূর্যকুমার যাদব ১৬ বলে ৩১ আর হার্দিক পান্ডিয়া খেলেন ১৭ বলে ২৭* রানের ইনিংস।
রান উৎসবের ম্যাচে ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রানে ১ উইকেট নেন জস হ্যাজেলউড। রোহিতের তাণ্ডবের মাঝেও পাওয়ার প্লেতে ৩ ওভারে দেন ১০ রান। শুরুতে খরুচে হলেও স্টার্ক ৪ ওভারে ৪৫ রানে নেন ২ উইকেট। এছাড়া ৫৬ রান খরচায় মার্কাস স্টয়নিসের উইকেট ২টি।
টার্নিং পয়েন্ট
১৩ ওভার শেষে ২ উইকেটে ১২৮ করে জবাবটা ভালোই দিচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া। ট্রাভিস হেড ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ব্যাট হাতে ঝড় তোলায় জয়ের পথে ছিল তারা। তখনই দ্রুত ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচে ফিরে ভারত। ১৪, ১৫ ও ১৭তম ওভারে ফিরেন ম্যাক্সওয়েল, স্টয়নিস ও হেড। ম্যাচটাও হাতছাড়া হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার।
সেরা খেলোয়াড়
অবশ্যই রোহিত শর্মা। তার ৪১ বলে ৯২ রানের ইনিংসটি গড়ে দিয়েছে ম্যাচের ভাগ্য। এই ইনিংসে একাধিক রেকর্ড গড়েছেন রোহিত। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ২০০ ছক্কার মাইলফলকে পা রেখেছেন তিনি। তার ছক্কা ২০৭টি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭৩টি ছক্কা নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গাপটিলের। ৮টি ছক্কা বিশ্বকাপে এক ইনিংসে ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ, ২০০৭ বিশ্বকাপে যুবরাজ সিংয়ের ৭ ছক্কা ছিল এতদিনের সেরা।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি রানের কীর্তিও এখন রোহিতের। ১৪৯ ইনিংসে রোহিতের রান ৪১৬৫। ১১৬ ইনিংসে ৪১৪৫ রান নিয়ে এখন দুইয়ে পাকিস্তানের বাবর আজম।