Beta
রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫
Beta
রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫

বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখে ভারতের উদ্বেগ

মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটার পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডও ছোড়া হয়। ছবি : হারুন-অর-রশীদ
ঢাকায় শুক্রবার নিষিদ্ধ সংগঠন হিযুত তাহরীর মিছিল বের করলে তা ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটার পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। ছবি : হারুন-অর-রশীদ
[publishpress_authors_box]

বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে ভারত; বিশেষ করে অভ্যুত্থানের পর জেল থেকে পালানো জঙ্গিরা প্রতিবেশী দেশটির বড় উদ্বেগের কারণ।

শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল দিল্লিতে তার দপ্তরের সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।

ভারতের সংবাদপত্রটির এই প্রতিবেদনে শুক্রবার বাংলাদেশে রাজধানীতে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের মিছিল এবং তারপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতের খবরও দেওয়া হয়।

জয়সওয়াল বলেন, “বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতিতে আমাদের উদ্বেগ রয়েই গেছে। তা আরও বেড়েছে জঙ্গিদের কারামুক্তিতে, যারা গুরুতর অপরাধের জন্য দণ্ডিত ছিল।”

গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময় আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার অবনতির সুযোগে বিভিন্ন কারাগার থেকে বেশ কিছু জঙ্গিও পালিয়ে যায়।

সরকারের হিসাবে, ইসলামী জঙ্গিদের মধ্যে ৭৯ জন ওই সুযোগে পালিয়েছিল, তার মধ্যে নয়জন ছিল সাজাপ্রাপ্ত।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঠেকানোর দাবি করলেও সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় জনমনে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ‘তৌহিদী জনতা’র নাম নিয়ে নারীদের হেনস্তার ঘটনা এবং মব জাস্টিস নিয়ে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুতরা বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চাইছে বলে দাবি করছেন ড. ইউনূস।

সরকারি একটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতের নিউজএইটিন জানিয়েছে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশে এখন যে অবস্থা চলছে, তাতে নয়া দিল্লি বেশ উদ্বিগ্ন, কারণ সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রভাব ভারতেও পড়তে পারে।

তবে সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভারতের সঙ্গে ‘কোনও সমস্যা নেই, কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল’ ইউনূসের এমন বক্তব্যেও দিল্লির কূটনীতিকরা উৎসাহী হয়েছে বলে ওই সূত্র জানায়।

অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দিল্লির কূটনৈতিক টানাপড়েন চলছে। বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে ভারত সোচ্চার ছিল।

তবে সেই সম্পর্ক স্বাভাবিকের দিকে অনেকটাই ফিরেছে বলে সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন ড. ইউনূস।

তিনি বলেছিলেন, “বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক ভালো না থেকে উপায় নেই। আমাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, আমাদের পরস্পরের ওপর নির্ভরশীলতা এত বেশি এবং ঐতিহাসিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে আমাদের এত ক্লোজ সম্পর্ক, সেটা থেকে আমরা বিচ্যুত হতে পারব না।

“তবে মাঝখানে কিছু কিছু দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, আমি বলেছি মেঘ দেখা দিয়েছে। এই মেঘগুলো মোটামুটি এসেছে অপপ্রচার থেকে। অপপ্রচারের ফলে আমাদের সঙ্গে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেছে। সেই ভুল বোঝাবুঝি থেকে আমরা উত্তরণের চেষ্টা করছি।”

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।

ভারত একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় জানিয়ে জয়সওয়াল বলেন, “একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, প্রগতিশীল বাংলাদেশের পক্ষে আমাদের সমর্থন থাকবে, আর তা নিশ্চিত হতে পারে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, সবার অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।”

অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ এবং নির্বাচনের বাইরে রাখার দাবি জানিয়ে এলেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলছেন, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে। অন্তর্বর্তী সরকার কারও অধিকার কেড়ে নিতে চায় না। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসবে কি না, সেই সিদ্ধান্তও নেবে এই দলটিই।

এরই মধ্যে সম্প্রতি কলকাতায় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক বসে। সেখানে চুক্তি অনুযায়ী গঙ্গার পানি বণ্টন পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জয়সওয়াল বলেন, এই বৈঠকে পানি প্রবাহের অবস্থা এখন কেমন এবং পারস্পরিক স্বার্থ কীভাবে অক্ষুণ্ন থাকবে, সেই কৌশলগত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশকে দেওয়া উন্নয়ন সহযোগিতা ভারত চালিয়ে নিতে চায় জানিয়ে তিনি বলেন, তবে সাম্প্রতিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং স্থানীয় কিছু বিষয়ের কারলে কিছু প্রকল্পের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে।

এই প্রকল্পগুলোর কাজ কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত