Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ভারতে নির্বাচন : কেন গুরুত্বপূর্ণ, কারা ভোট দেবেন

44545
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হবে ১৯ এপ্রিল থেকে। সাত ধাপের এই ভোট প্রক্রিয়া শেষ হবে ১ জুন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টানা তৃতীয় মেয়াদে জয়ী হওয়ার আশা করছেন। কিন্তু বিরোধী দলগুলো বলছে, তিনি ক্ষমতায় থাকলে ভারতীয়রা অনেক স্বাধীনতা হারাতে পারে।

মোদীর বিরুদ্ধে কারা

সাম্প্রতিক জনমত জরিপগুলো বলছে, মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও তার মিত্ররা তৃতীয়বারের মতো লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হবে।

লোকসভা ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ। এটি জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত। লোকসভার সবচেয়ে বড় দলের নেতা বা জোটের নেতা সাধারণত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রিসভা গঠন করেন, যারা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকেন।

২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি একাই ৩০৩টি আসন পেয়েছিল। আর বিজেপির জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স পেয়েছিল ৩৫২টি আসন।

২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পর নরেন্দ্র মোদী।

এবারের নির্বাচনে অন্যতম চ্যালেঞ্জ বৃহত্তম বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোটের পক্ষ থেকে। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া) জোটে এরই মধ্যে ২৫টির বেশি রাজনৈতিক দল যোগ দিয়েছে।

এই জোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আছেন কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গে, রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। বর্তমানে কারাবন্দি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টিও এই জোটে আছে। সঙ্গে আছে আরও কিছু শক্তিশালী আঞ্চলিক দল।

সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগে আম আদমি পার্টির একাধিক নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। দলটি বলছে, মোদী ও বিজেপি তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চর্চা করছে। যদিও বিজেপি এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

কেন ভারতের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ

মোদী দাবি করতেই পারেন যে, ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে ভারতের বৈশ্বিক অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে। ওয়াশিংটন চায় ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে তার মিত্র করে রাখতে।

সম্প্রতি মোদী ভারতের ৮০ কোটি দরিদ্রের জন্য একাধিক উদার কল্যাণমূলক কর্মসূচি চালু করেছেন। এর মধ্যে বিনামূল্যে শস্য সরবরাহ এবং কম আয়ের পরিবারের নারীদের মাসে ১ হাজার ২৫০ রুপি ভাতা দেওয়ার মতো বিষয় রয়েছে।

এদিকে কংগ্রেস তার ইশতেহারে বলছে, ভারতে এখন বেকারত্বের হার অনেক, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। ইশতেহারে ৩০ লাখ বাড়তি সরকারি চাকরি সৃষ্টি, নারীদের ভাতা বৃদ্ধি ও কলেজ উত্তীর্ণদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।

বিরোধীদলগুলো নিয়ে গঠিত ইন্ডিয়া জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

ভারতকে স্বৈরাচারের পথ থেকে সরিয়ে আনা হবে, এমন প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে কংগ্রেস।

সংখ্যালঘুদের অভিযোগ, তারা প্রায়শই বৈষম্য ও হামলার শিকার হন। মোদীর শাসনকালে তারা ‘দ্বিতীয় শ্রেণীর’ নাগরিক হিসেবে বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। যদিও বিজেপি এই অভিযোগ নাকচ করেছে।

আন্তর্জাতিক নাগরিক অধিকার সংস্থা ফ্রিডম হাউস বলেছে, বিজেপি সরকারের সমালোচনা করা ব্যক্তিদের, বিশেষ করে সাংবাদিকদের উপর হয়রানির ঘটনা বাড়ছে। সংস্থাটি ভারতকে ‘আংশিকভাবে স্বাধীন’ হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করে।

কেন এত দীর্ঘ ভোট

ভারতের বিভিন্ন অংশে সাত ধাপে ভোটগ্রহণ হবে। তারিখগুলো হলো- ১৯ এপ্রিল, ২৬ এপ্রিল, ৭ মে, ১৩ মে, ২০ মে, ২৫ মে ও ১ জুন। ফল ঘোষণা হবে ৪ জুন। ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তাকর্মীদের পর্যাপ্ত সংখ্যক উপস্থিতি নিশ্চিতে ভোটদান ধাপে ধাপে করা হচ্ছে।

ভোটদানের জন্য কোটি কোটি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে। ভোটাররা এই যন্ত্র ব্যবহার করে প্রার্থীদের মধ্যে একজনকে নির্বাচন করতে পারবেন। কিংবা ‘উল্লিখিত প্রার্থীদের কেউই না’ বিকল্পটি বেছে নিতে পারবেন।

কারা ভোট দেবেন

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারতের জনসংখ্যা ১৪০ কোটির বেশি। এদের মধ্যে ৯৬ কোটি ৯০ লাখ এবারের নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। ভোটারদের মধ্যে ৪৯ কোটি ৭০ লাখ পুরুষ ও ৪৭ কোটি ১০ লাখ নারী।

ভোটারদের অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে। তাদের বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি ও ভোটার তালিকায় নাম থাকতে হবে। আর বৈধ ভোটার পরিচয়পত্র থাকা আবশ্যক।

বিদেশে বসবাসরত ১ কোটি ৩৪ লাখ ভারতীয় নাগরিকও ভোট দিতে পারবেন। তবে তাদের ভোটদানের জন্য নিবন্ধন করতে ও ভারতে ফিরে আসতে হবে।

লোকসভায় মোট ৫৪৩ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন। ক্ষমতায় আসতে একটি দল বা জোটকে কমপক্ষে ২৭২টি আসন পেতে হবে।

নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্যরা।

লোকসভার সদস্যদের পাঁচ বছরের মেয়াদে নির্বাচিত করা হয়। প্রত্যেক সদস্য একটি নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব করে। বিজয়ী নির্ধারিত হয় সর্বাধিক ভোট পাওয়া প্রার্থীর মাধ্যমে।

১৩১টি আসন ‘আদিবাসী’ গোষ্ঠীগুলোর জন্য সংরক্ষিত। এই গোষ্ঠীগুলোকে সরকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি হিসেবে চিহ্নিত করে। ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশই তারা।

নারীদের জন্য মোট আসনের এক-তৃতীয়াংশ বরাদ্দের আইন ভারতে পাস হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নে আরও সময় লাগবে।

হেভিওয়েট রাজ্যগুলোর আসন সংখ্যা

এবারের লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশে ৮০, মহারাষ্ট্রে ৪৮, পশ্চিমবঙ্গে ৪২, বিহারে ৪০, তামিলনাড়ুতে ৩৯ আসনে ভোট হবে।

২০১৪ সালে উত্তর প্রদেশে বিজেপি পেয়েছিল ৭১টি আসন। তবে ২০১৯ সালে সেখানে দলটি পায় ৬২ আসন।

ভোট যেভাবে সংগ্রহ হয়

ভারতের আয়তন ৩২ লাখ বর্গ কিলোমিটার। নির্বাচনী নিয়ম অনুসারে, প্রতিটি মানব বসতিতে একটি পোলিং বুথ থাকতে হবে।

২০১৯ সালের নির্বাচনে গুজরাটের গির জাতীয় উদ্যানের ঘন বনে বসবাসকারী একজনের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল।

এবার অরুণাচল প্রদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে একজন নারী ভোটারের ভোট গ্রহণে নির্বাচন কর্মকর্তাদের ২৪ মাইল পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিতে হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত