দুই বার ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বটে, তবে অর্থমন্ত্রী হিসাবে তার সংস্কার কর্মর্সূচির জন্যই স্বদেশবাসীর কাছে বেশি স্মরিত হবেন যিনি, সেই মনমোহন সিং আর বেঁচে নেই।
বৃহস্পতিবার নয়া দিল্লির হাসপাতাল অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিসিন সায়েন্সে (এইমস) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার জীবনাবসান ঘটে বলে ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
মনমোহন সিংয়ের বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। তিনি স্ত্রী গুরুচরণ সিং এবং তিন মেয়ে রেখে গেছেন।
বেশ কিছু দিন ধরেই রাজনীতি থেকে দূরে থাকা মনমোহন সিং গত কয়েক মাস যাবৎ অসুস্থ ছিলেন। বৃহস্পতিবার পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু বাঁচানো যায়নি।
এইমস এক বিবৃতিতে বলেছে, বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন মনমোহন সিং। চিকিৎসকরা সর্বোত চেষ্টা চালিয়েও তার প্রাণ ফেরাতে ব্যর্থ হন। রাত ৯টা ৫১ মিনিটে (ভারতের সময়) তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
২০০৪ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা (ইউপিএ) সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মনমোহন সিং। এরপর ২০১০ সালে পুনর্নির্বাচিত হয়ে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন।
মনমোহন যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন কংগ্রেসের প্রধান ছিলেন সোনিয়া গান্ধী। সোনিয়ার ইতালীয় নাগরিকত্ব নিয়ে বিজেপি শোর তোলার পর কংগ্রেস মনমোহন সিংকে প্রধানমন্ত্রী করায় তাকে ‘অ্যাক্সিডেন্টাল প্রধানমন্ত্রী’ও বলা হতো। আবার গান্ধী পরিবারের মতের বাইরে তার যাওয়ার সুযোগ ছিল না বলে তাকে ‘অনুগত’ প্রধানমন্ত্রীও বলত বিজেপি নেতারা।
অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিং রাজনীতিতে আসার আগে ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন। ১৯৯১ সালে কংগ্রেসের নরসিমহা রাওয়ের সরকারে অর্থমন্ত্রী হিসাবে যোগ দেন তিনি।
ভারতের রক্ষণশীল অর্থনীতিকে তিনি ধাক্কা দেন, মুক্ত বাজার অর্থনীতির সঙ্গে ভারতবাসীকে পরিচয় করিয়ে দেন তিনি। সেই নীতির ফলে ভারতের বাজারের বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর প্রবেশ ঘটে। সব মিলিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল দেশটির অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য তৈরি হয়।
তার দেখানো পথেই ভারতের পরবর্তী সরকারগুলো এগিয়ে যায়। মনমোহন সিংয়ের পর প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসা বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী সেই পথেই আরও জোর কদমে হাঁটছেন।
মনমোহন সিংংেয়র মৃত্যুতে শোক জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, “দেশের সবচেয়ে আলোকিত একজন নেতার জন্য শোকগ্রস্ত এখন ভারতবাসী।”
অর্থমন্ত্রী হিসাবে মনমোহন সিংয়ের ভূমিকার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী হিসাবেও জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে তার অবদান স্মরণ করেন মোদী।
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে তখনকার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে নিয়ত যোগাযোগ করে পরামর্শ নেওয়ার কথাও বলেন তার প্রতিপক্ষ শিবিরের রাজনীতিক মোদী। তিনি বলেন, তার প্রজ্ঞা ও মানবিকতা ছিল দৃশ্যমান।
মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুর খবর শুনেই হাসপাতালে ছুটে যান সোনিয়া গান্ধী ও তার মেয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। কংগ্রেস প্রধান মল্লিকার্জুন খাড়গেসহ দলটির নেতারা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের জন্য কর্ণাটকে ছিলেন। তারা খবর পেয়েই নয়া দিল্লি রওনা হন।