বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলতে ভারত ‘দুঃস্বপ্ন’ দেখছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, পণ্য ও সেবা দেওয়া বন্ধ করে বাংলাদেশ নয়, বরং ভারতই কাহিল হয়েছে; কারণ বাংলাদেশিরা না যাওয়ায় তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়েছে।
শুক্রবার ঢাকার গুলশানে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এসব কথা বলেন। গুলশান ২ নম্বর গোল চত্বরের কাছে ‘দেশি পণ্য কিনে হও ধন্য’ স্লোগানে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রে দেশি পণ্য বিক্রি উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠান হয়।
বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের বর্তমান অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “আপনারা (ভারত) মনে করেছেন, আপনারা পেঁয়াজ বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশের মানুষ আর তরকারিতে পেঁয়াজ ব্যবহার করতে পারবে না; আদা, রসুন, সয়াবিন তেল বন্ধ করে দিলে আমরা আর তরকারিতে সেগুলো ব্যবহার করতে পারব না।
“এটা তো আপনারা (ভারত) দুঃস্বপ্ন দেখছেন যে, এদেরকে (বাংলাদেশ) আমরা পানিতে, ভাতে, তরকারিতে বঞ্চিত করব। আপনারা পশু রপ্তানি বিশেষ করে গরু রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ গ্রামের বাড়ি বাড়িতে গরু-ছাগলের খামার গড়ে তুলে এক কোরবানির ঈদে ১ কোটি ২০ লক্ষ গবাদি পশু জবাইয়ের ব্যবস্থা করেছে; প্রতিবছর মাংসের যে প্রয়োজন হয়, সেটার ব্যবস্থা করেছে।”
রিজভী বলেন, “আপনারা ভুলে যাবেন না বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত শ্রমপ্রিয়, কষ্টপ্রিয়; তারা তাদের প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ, রসুন, আদা যেগুলো আমরা আমদানি করি, সেগুলো তারা উৎপাদন করতে এবং অতিমাত্রায় উৎপাদন করতে পিছপা হয় না।
“আপনারা মনে করেন আপনারাই শুধু সব কিছু উৎপাদন করেন; পৃথিবীতে আর কোনও দেশ নাই যাদের কাছ থেকে আমরা পেঁয়াজ আমদানি করতে পারব… যাদের কাছ থেকে আমরা রসুন তেল আমদানি করতে পারবো… যাদের কাছ থেকে পামওয়েল, সয়াবিন তেল আমদানি করতে পারব- সেইসব দেশ কি নেই? সেই সব দেশ আছে। আপনারা মনে করেছেন এসব বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশের মানুষের অবস্থা কাহিল হবে—এটা আপনাদের দুঃস্বপ্ন।”
তিনি বলেন, “বরং অবস্থা কাহিল হয়েছে আপনাদের। কলকাতা নিউমার্কেটের কোনও দোকান চলে না; আপনাদের মার্কেটগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম; আপনাদের কলকাতার হোটেলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।
“কারণ, বাংলাদেশের মানুষজনই তারা কলকাতায় গিয়ে, ভারতে গিয়ে ডলার খরচ করে; তারা সেখানে কেনাকাটা করত, তারা সেখানে চিকিৎসা করত। আপনাদের হাসপাতাল আর চলবে না।”
‘চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে অন্য দেশে যাবে’
রিজভী বলেন, “আপনারা এসব বন্ধ করে দিয়ে মনে করেছেন যে, বোধ হয় বাংলাদেশের মানুষ এতে অস্থির হয়ে গেছে। না, বাংলাদেশের মানুষ আনন্দিত এখন। আমরা বলি, আমাদের অনেক মেডিকেল কলেজ আছে, অনেক হাসপাতাল আছে, আপনারা কীসের অহংকার করেন? এখন বাংলাদেশের মানুষ প্রয়োজন হলে থাইল্যান্ড যাবে, মালয়েশিয়া যাবে, ইন্দোনেশিয়া যাবে, কিংবা অন্য দেশে যাবে।
‘‘আপনাদের (ভারত) মতো হিংসা-দ্রোহী যারা আমাদেরকে ঘৃণা পোষণ করেন, সেই দেশে বাংলাদেশের মানুষ যেতে চায় না। কারণ, রক্তের মূল্যে স্বাধীনতা কেনা এই জাতি; এই জাতিকে আপনি বঞ্চিত করে, ভয় দেখিয়ে আপনি নতজানু করবেন- সেই জাতি বাংলাদেশ নয়।”
‘সাম্প্রদায়িকতার ধুঁয়া তুলে বিভাজন সৃষ্টি’
রিজভী বলেন, “রিপাবলিক বাংলা বলেছে যে, চট্টগ্রামকে ভারতের অংশ হিসেবে দাবি করা হয়েছে… আরও কত মিথ্যা অপপ্রচার চলছে। আমরা বলছি, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ দাবি করলে আমরাও বলেছি, আমাদের নবাবের এলাকা- ওই বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা আমরা দাবি করবো। এটা তো আমাদের ন্যায্য পাওনা। কিন্তু এই কথাগুলো আমরা বলতে চাই না। অনেক সংগ্রাম-আন্দোলন, ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম- এই উপমহাদেশে আমরা একসাথে করেছি।
“কিন্তু আপনারা (ভারত) সাম্প্রদায়িকতার ধুঁয়া তুলে ভারতকে যেমন বিভাজন করছেন, ভারতের স্বাধীনতার পথ থেকে গণতন্ত্রের যে ঐতিহ্য ছিল- সেটাকে যেমন ভুলুন্ঠিত করছেন, আজকে সাম্প্রদায়িকতার ধুয়া তুলে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের উস্কে দিয়ে আপনারা চাচ্ছেন উপমহাদেশে আপনাদের আধিপত্য কায়েম করবেন।”
“আপনাদের এই বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব, আপনাদের এই হিংসা-দ্রোহী মনোভাবের কারণে আজকে নেপাল আপনাদের সাথে নেই, আজকে ভুটান আপনাদের সাথে নেই, আজকে মালদ্বীপ আপনাদের সাথে নেই, শ্রীলঙ্কা আপনাদের সাথে নেই, বাংলাদেশ আপনাদের সাথে নেই। শুধুমাত্র আপনাদের অহংকার, আগ্রাসন ও শোষনের নীতির কারণে।”
অনুষ্ঠানে বিএনপির আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, অমলেন্দু দাস অপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের জাহিদুল কবির ও ছাত্রদলের তৌহিদুর রহমান আউয়াল উপস্থিত ছিলেন। পরে সুলভমূল্যে শাড়িসহ বিভিন্ন কাপড় বিক্রির উদ্বোধন করেন রিজভী।