ভারতের মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ আইনকে ঘিরে হওয়া সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল ওই বক্তব্যকে ‘অযৌক্তিক’ মন্তব্য করে বলেছেন, বাংলাদেশের উচিত নিজেদের সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিতে মনোযোগ দেওয়া।
ভারতে নতুন পাস হওয়া ওয়াক্ফ আইন নিয়ে মুসলিম অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ জেলায় চলা প্রতিবাদ বিক্ষোভ গত সপ্তাহে সহিংস রূপ নেয়। এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে মালদহ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও হুগলি জেলায়ও। এসব এলাকায় আগুন লাগানো, ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং রাস্তা অবরোধের ঘটনা ঘটে।
এমন প্রেক্ষাপটে গত ১৬ এপ্রিল কলকাতায় ইমাম-মুয়াজ্জিনদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, “বাংলাদেশের দুষ্কৃতকারীদের মুর্শিদাবাদে নিয়ে এসে পূর্বপরিকল্পিত দাঙ্গা করানো হচ্ছে।”
বাসস জানিয়েছে, পরদিন ১৭ এপ্রিলই তার এই বক্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানায় ঢাকা।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় বাংলাদেশকে জড়ানোর যেকোনো চেষ্টা আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করি।”
ভারতে মুসলিমদের ওপর হামলা এবং তাদের জানমালের নিরাপত্তাহানির ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার নিন্দা জানায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা ভারত সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাই।”
বাংলাদেশ সরকারের এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়াই শুক্রবার বিবৃতি দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের ঘটনায় বাংলাদেশের বক্তব্য আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। বাংলাদেশে চলমান সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে ভারতের উদ্বেগের সঙ্গে এই ঘটনা মিলিয়ে দেখা একটি মিথ্যা ও চাতুর্যপূর্ণ প্রচেষ্টা, যেখানে এই ধরনের কর্মকাণ্ডের অপরাধীরা এখনও অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
তিনি বলেন, “অযৌক্তিক মন্তব্য ও নৈতিকতা প্রদর্শন বাদ দিয়ে বাংলাদেশের উচিত নিজেদের সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিতে মনোযোগ দেওয়া।”
ভারতে মুসলিম ওয়াকফ সম্পত্তি কীভাবে চিহ্নিত ও নিয়ন্ত্রিত হবে, সেই সব আইনকানুনের আমূল পরিবর্তন করে লোকসভায় একটি বিতর্কিত বিল পাস হয় গত ৩ এপ্রিল। পরদিন ৪ এপ্রিল বিলটি পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার অনুমোদন পায়।
এরপর ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ওই বিলটিতে সম্মতি দেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং গেজেট প্রকাশের পর তা আইনে পরিণত হয়।
বিলটি নিয়ে পার্লামেন্টে যখন তর্কবিতর্ক চলছে, তখন থেকেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বহু মুসলিম সংগঠন এই আইনটিকে ‘কালা কানুন’ হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করে। এর বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভও দেখায় তারা।
পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় ওয়াকফ আইনবিরোধী প্রতিবাদ সাম্প্রদায়িক রূপ নেয়। গত সপ্তাহে সেই সহিংসতায় বেশ কয়েকজন হতাহত হওয়ারও তথ্য পাওয়া যায়।
এরই মধ্যে আইনটিকে অসাংবিধানিক দাবি করে সুপ্রিম কোর্টে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে পিটিশন দাখিল করেন একাধিক পার্লামেন্টারিয়ান। বেশ কিছু নাগরিক অধিকার গোষ্ঠীও এই আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন। সেসব মামলার শুনানি চলছে।