নারীর কম পারিশ্রমিক নিয়ে ঝলমলে সিনেপাড়াতেও বৈষম্য আছে। এসবের মধ্যেও প্রায় তিন দশক আগে কোনো অভিনেত্রী যদি এক কোটির ঘরে পারিশ্রমিক পান, তা তো চোখ কপালের তোলার মত ঘটনাই।
‘হিম্মতওয়ালা’, ‘সাদমা’, ‘নাগিনা’ সিনেমার পর ১৯৯১ সালে ‘লামহে’ আর পরের বছরই ‘খুদা গাওয়াহ’ হিট হওয়ায় শ্রীদেবী বক্স অফিসের সম্রাজ্ঞী হয়ে উঠেছিলেন। এসব সিনেমায় তখন শ্রীদেবী পেতেন ৬০ লাখ রুপি। কিন্তু ১৯৯৭ সালে ’জুদাই’ সিনেমার জন্য এক লাফে এই নায়িকার পারিশ্রমিক ওঠে এক কোটি রুপি।
তেজাব হিট হওয়ার পর মাধুরী দিক্ষিত ৩০ থেকে ৪৫ লাখ রুপি পারিশ্রমিক পাচ্ছিলেন। এরপর ‘সাজান’, ‘দিল’, ‘বেটা’, ‘খলনায়ক’ হিট সিনেমার তালিকায় নামও লেখালে মাধুরী দীক্ষিতের পারিশ্রমিকও বাড়ে। ১৯৯৪ সালের ’আনজাম’ সিনেমার জন্য মাধুরী এক কোটি রুপি পান।
বলা হয়, মাধুরীই প্রথম অভিনেত্রী যিনি এক কোটি রুপি পারিশ্রমিক পেয়েছেন।
এরপর ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’ সিনেমাও হিট হয়। মাধুরীর পারিশ্রমিক বাড়তে বাড়তে ২ কোটি ৭০ লাখের ঘরে পৌঁছে। ওই সময় না কি তিনিই ছিলেন সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রী।
এখন বলিউডের অনেক অভিনেত্রীর ন্যূনতম পারিশ্রমিকই ৩ কোটি; আর সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক অনেকেরই ২৫ কোটি ছাড়িয়ে যায়। এরপরও নায়িকারা পারিশ্রমিকে নায়কের চেয়ে পিছিয়ে আছেন। আর এই বৈষম্য নিয়ে সরব হওয়া একজন হলেন অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া।
বলিউড থেকে হলিউডে পাড়ি জমিয়ে আগের মতো হিন্দি সিনেমায় সরব নেই; এরপরও আগের চেয়েও বেশি পারিশ্রমিক হাঁকছেন এই ‘দেশি গার্ল’।
নায়কের সমান পারিশ্রমিক নেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া?
২০০২ সালে একটি তামিল সিনেমায় কাজ করেছিলেন, তবে পরের বছর ‘দ্য হিরো: লাভ স্টোরি অব এ স্পাই’ সিনেমা দিয়ে বলিউডে যাত্রা শুরু করেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। ২০১৯ সালে ‘দ্য স্কাই ইজ পিংক’ সিনেমায় বলিউড দর্শকরা তাকে শেষ বার পেয়েছিল।
কারণ কী?
আমেরিকান গায়ক নিক জোনাসকে বিয়ে করে বিদেশ থাকার পাশাপাশি হলিউডে নিজের ব্যস্ততা বাড়িয়ে তুলেছেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া।
আর এরপর থেকে হু হু বেড়ে গেছে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার পারিশ্রমিক।
হলিউডে গিয়েই প্রথম নায়কের সমান পারিশ্রমিক চাওয়ার অভিজ্ঞতা হয় এই নায়িকার।
প্রিয়াঙ্কা তখন অকপটেই জানান, বলিউডে তার এই অভিজ্ঞতা হয়নি কখনও।
“আমি বলিউড সিনেমায় নায়কের পারিশ্রমিকের মোটে ১০ শতাংশ পেতাম।”
ফোর্বসের প্রতিবেদন বলছে, হলিউড দেখার পর ভারতীয় এই অভিনেত্রী এখন ভারতে প্রতি কাজে সম্মানী চান ৪০ কোটি রুপি; যা ৫ মিলিয়ন ডলারের মতো।
আমেরিকায় ‘কোয়ান্টিকো’ টিভি সিরিজের ৪৪ পর্বের জন্য তিনি ৭৫ লাখ ডলার পেয়েছিলেন। ’বেওয়াচ’ এর তৃতীয় সিজনের প্রতি পর্বে তাকে ৩ লাখ ডলার দেওয়া হয়েছিল, এমন কথাও শোনা যায়।
অ্যামাজন প্রাইমে ‘সিটাডেল’ শো করে তিনি পুরুষ সহকর্মীর সমপরিমাণ অর্থ বাগিয়ে নিতে পেরেছেন। অভিনয় জীবনের ২৩ বছরে এমন প্রথম ঘটেছে বলে জানিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা।
অথচ আইএমডিবি অনুসারে, বলিউডে এই বিশ্ব সুন্দরীকে ১৪ থেকে ২০ কোটি রুপি পারিশ্রমিক দেওয়া হয়।
২০১০ সালেও প্রিয়াঙ্কার নাম ছিল বলিউডের উপরের সারিতে। ‘মেরি কম’, ‘বাজিরাও মাস্তানি’ এবং ‘দিল ধারকানে দো’ সিনেমাগুলো যখন তাকে আলোচনায় রেখেছিল ওই সময় হলিউড পাড়ি জমালেন তিনি।
হলিউডে প্রিয়াঙ্কার প্রথম সাফল্য ধরা দেয় ২০১৭ সালে। এই সাফল্য আসে ‘বেওয়াচ’ সিনেমার হাত ধরে।
একে একে তার নামের পাশে জুড়ে যায় ‘আ কিড লাইক জ্যাক’, ‘ইজ নট ইত রোমান্টিক’, ‘উই ক্যান বি হিরোজ’, ‘দ্য ম্যাট্রিক্স রিসারেকশন’, এবং ‘ল্যাব এগেইন’ সিনেমার নাম; যদিও এসব সিনেমার কোনোটিই বাণিজ্যিক ভাবে সফল ছিল না।
এদিকে হিন্দি ‘দ্য স্কাই ইজ পিংক’ সিনেমাও হিট হয়নি; তবে এই সিনেমার জন্য ৬৫ তম ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে প্রিয়াঙ্কা মনোনয়ন পান ‘বেস্ট অ্যাকট্রেস’ ক্যাটাগরিতে।
ভারতে বেশিরভাগ শুটিং সেরে লাস ভেগাসে প্রিমিয়ার, তারপর যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের পর ২০২১ সালে নেটফ্লিক্সে আসে ‘দ্য হোয়াইট টাইগার’; এতে কাজ করেছেন প্রিয়াঙ্কা।
২০২৩ সালে অ্যামাজন প্রাইমে আসে ‘সিটাডেল’; এতে মুখ্য চরিত্রে আছেন প্রিয়াঙ্কা। থ্রিলারধর্মী এই ওয়েব সিরিজে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যেও কাজ করেছেন এই নায়িকা। সিটাডেল নিয়ে দর্শকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও অ্যামাজন প্রাইমে সবচেয়ে বেশিবার দেখা হয়েছে প্রিয়াঙ্কা অভিনীত এই ওয়েব সিরিজটি।
নায়িকারা কে কত পান
বলিউড পাড়ায় এখন দীপিকা পাডুকোন এবং আলিয়া ভাটেরই জয় জয়কার।
যদিও পারিশ্রমিকে এরা কেউই প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার হলিউড আয়কে ছাপিয়ে যেতে পারেননি।
বলিউডে দীপিকা পাডুকোন নিচ্ছেন ১৫ থেকে ৩০ কোটি রুপি। মেট গালা জয় করে আসা ‘গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি’ অভিনেত্রী আলিয়া ভাট বলিউডে পান ১০ কোটি থেকে ২০ কোটি রুপি।
কঙ্গনা রানাউত এবং ক্যাটরিনা কাইফ প্রতি সিনেমায় নিচ্ছেন ২৫ কোটি রুপি পর্যন্ত।
কারিনা কাপুর, আনুশকা শর্মা এবং ঐশ্বরিয়া রায় নিচ্ছেন ১০ থেকে ২০ কোটি রুপি।