উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচলের আনজাউ জেলায় চীনা সেনাদের অনুপ্রবেশের খবর নাকচ করে দিয়েছে ভারতের সেনাবাহিনী।
চীন সীমান্তের আনজাউ জেলার কাপাপু এলাকায় চীনা সেনারা ঢুকে পড়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে অরুণাচলের স্থানীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যমেও খবর প্রকাশিত হয়েছিল।
অরুণাচলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম নিউজফাই বলে, অরুণাচল প্রদেশের প্রায় ৬০ কিলোমিটার গভীরে ঢুকে পড়েছে চীনের সৈন্যরা। ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে কাপাপু এলাকায় ক্যাম্পও করেছে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএএল)।
দ্য ডনলিটপোস্ট-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাপাপু এলাকায় গভীর বনে আগুন ধরানো, পাথরের গায়ে রং ব্যবহার করে লেখা চীনের নাম এবং চীনা খাদ্যসামগ্রীর ছবি দেখে বোঝা যায়, সেখানে প্রায় এক সপ্তাহ আগে চীনের সেনারা ঢুকেছিল।
একটি ছবিও এসেছিল প্রতিবেদনের সঙ্গে, যাতে দেখা যায়, পাথরের গায়ে ইংরেজিতে ২০২৪ সাল লেখা রয়েছে।
তাদের বরাতে কলকাতার আনন্দবাজারের প্রতিবেদনেও বলা হয়, আনজাও জেলার কাপাপু এলাকায় চীনের সেনা ক্যাম্পের খোঁজ মিলেছে।
ভারতের অরুণাচল রাজ্যকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ মনে করে চীন। ফলে ভারতীয় ভূখণ্ডে নিজেদের মালিকানা দাবি করার অংশ হিসেবে অনুপ্রবেশের পর চীনা সেনাবাহিনী এসব কৌশল ব্যবহার করে বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
ইন্ডিয়া টুডের (নর্থইস্ট) একটি প্রতিবেদনেও (পরে আর প্রতিবেদনটি পাওয়া যায়নি) দাবি করা হয়েছিল, সপ্তাহখানেক আগে থেকেই নাকি ওই অঞ্চলে ঘাঁটি করেছে চীনের সেনারা। ৬০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছিল চীনের সেনারা।
এসব খবরের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা বলছে, এমন কোনও অনুপ্রবেশ ঘটেনি।
ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি সূত্র অরুণাচল টাইমসকে বলেছে, “ওই এলাকায় মোতায়েন আমাদের বাহিনী কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার দাবির সত্যতা যাচাই করেছে, যেগুলো কিছু মিডিয়া হাউসেও প্রচার করা হয়। কিন্তু তাদের দাবির সত্যতা মেলেনি। যাচাই করার পর আমরা তাদের দাবি খারিজ করে দিয়েছি। আনজাও জেলায় এই ধরনের কোনও অনুপ্রবেশ ঘটেনি।”
অরুণাচল পশ্চিম লোকসভা আসন থেকে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুও চীনা সেনাদের অনুপ্রবেশের খবর নাকচ করে দিয়েছেন।
ভারতে অনুপ্রবেশের বিষয়ে চীনের কোনও বার্তা সেদেশের সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।
আনজাও জেলায় ভারতীয় ভূখণ্ডে চীনা অনুপ্রবেশের খবর এই প্রথম নয়। অতীতেও এমন অনেক দাবি উঠেছিল। চীনের সেনাবাহিনী তাওয়াং সেক্টরে মোতায়েন থাকায় অতীতে পূর্ব সেক্টরে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বিজেপির এমপি তাপির গাও দাবি করেছিলেন, চীনা সেনাবাহিনী আনজাও জেলায় অনুপ্রবেশ করেছে এবং একটি নদীর উপর একটি অস্থায়ী কাঠের সেতু তৈরি করেছে।
গাও দাবি করেছিলেন, চীনের সেনাবাহিনী ছাগলগাম সার্কেলের কিওমরু নালার উপর একটি সেতু তৈরি করেছে এবং কিছু স্থানীয় যুবক তা দেখেছে।
সেই সময়েও ভারতের সেনাবাহিনী চীনা সেনাদের অনুপ্রবেশের খবর নাকচ করে দেয়।
তবে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আনজাওয়ের প্লাম পোস্টে সত্যি সত্যিই চীনা সেনাদের অনুপ্রবেশের একটি ঘটনা ঘটেছিল। সেসময় প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, চীনা সেনারা ভারতীয় ভূখণ্ডের ৪৫ কিলোমিটার ভেতরে প্লুম পোস্টে একটি অস্থায়ী তাঁবু স্থাপন করেছে।
ভারতের সেনাবাহিনী এবং ভারত-তিব্বত বর্ডার পুলিশ (আইটিবিপি) তাদের উপস্থিতি শনাক্ত করেছিল এবং তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিল।
২০১৮ সালের অক্টোবরেও চীনা সেনারা পাহাড়ি উপত্যকা জেলা দিবাং দিয়ে ভারতের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিল। তারা মাথু ও এমরা নদীর তীরে ক্যাম্প করেছিল বলে জানা গেছে। তবে পরে আবার সরে যায়।
২০১৯ সালে চীন-অরুণাচল সীমান্তে আমাকো ক্যাম্পের কাছে দইমরু নালার উপর কাঠের অস্থায়ী ব্রিজ বানিয়েছিল চীন। ২০২০ সালে দিবং জেলায়ও ফের ঢুকে পড়েছিল চীনা বাহিনী।
২০২১ সালে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, অরুণাচল প্রদেশে ভারতীয় ভূখণ্ডের ভেতরে কমপক্ষে ৬০টি ভবনের দ্বিতীয় ক্লাস্টারের নির্মাণ কাজ পরিচালনা করছে চীনা সামরিক বাহিনী।
২০২২ সালের আগস্টে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, পিএলএ সেনারা অরুণাচলের হাদিগ্রা লেকের কাছে অবকাঠামোগত কার্যক্রম তদারকি করছে, যেখানে তিনটি এক্সক্যাভেটর খনন কাজ করছিল।
ভারত ও চীনের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে কেবল বিরোধপূর্ণ অরুণাচলের সঙ্গে চীনের সীমান্ত রয়েছে এক হাজার ১২৬ কিলোমিটার। তবে এই সীমান্তে কোনও কাঁটাতারের বেড়া নেই। ফলে উভয় পক্ষ প্রায়ই একে অপরের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করে। চীন অরুণাচল প্রদেশকে দক্ষিণ তিব্বতের অংশ বলে দাবি করে।
ভারতের একজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটে থাকে। পিএলএ সেনারা ভারতীয় ভূখণ্ডের ৬০ কিলোমিটার ভেতরে অনুপ্রবেশ করেছে এটি মিথ্যা। এখানকার সীমানা সঠিকভাবে চিহ্নিত না হওয়ায় প্রায়ই এমনটি ঘটে থাকে। দুই পক্ষের সেনারা টহল দেওয়ার সময় একে অন্যের ভূখণ্ডে না বুঝেই ঢুকে পড়ে। তারা কখন যে শত্রুর ভূখণ্ডে রয়েছে তা বুঝতে পারে না।
তথসূত্র: অরুণাচল টাইমস, এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া