ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি আগামী সপ্তাহ নাগাদ বাংলাদেশ সফরে আসবেন। এটি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঢাকায় ভারতীয় কোনও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার প্রথম সফর।
দুটি পক্ষই সফরের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা দেয়নি। তবে মিশ্রি ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি এলে ওইদিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক পরামর্শ সভায় অংশ নেবেন। সফরের প্রস্তুতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
বিক্রম মিশ্রির সফরটি এমন সময় হতে চলেছে, যখন ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি টানাপোড়েন চলছে।
বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন এবং সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃঞ্চ দাস ব্রহ্মচারীকে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেপ্তারের কারণে ঢাকা-দিল্লি উত্তেজনার পারদ চড়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে হিন্দুদের ওপর হামলার অভিযোগে সক্রিয় হয়ে আলোচনায় আসেন চিন্ময়। এরপর ইসকন থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
চিন্ময়কে গ্রেপ্তারের পর বাংলাদেশ লাগোয়া ভারতের কয়েকটি রাজ্যে বিক্ষোভ চলছে। সোমবার ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই কমিশনে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামের একটি সংগঠনের প্রতিবাদ সভা-পরবর্তী হামলার ঘটনা ঘটে; সেখানে বিজেপির সহ-সভাপতি সুবল ভৌমিকও ছিলেন।
এই হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার ভারতের দূত প্রণয় ভার্মাকে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডেকেছিল। সেখানে প্রণয় বলেন, দুই দেশের বহুমুখী সম্পর্ক কেবল একটি বিষয়ে ব্যক্ত হতে পারে না।
বিক্রম মিশ্রির সফরটি মূলত গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের মধ্যে এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর দুই দেশের মধ্যে সেটি ছিল প্রথম উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ।
ভারতীয় এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, পররাষ্ট্র সচিব ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সফরে আসবেন। তবে সফরটি এক সপ্তাহ পর শুরু হতে যাচ্ছে। বর্তমান সম্পর্কের অবস্থা বিবেচনা করে দেখতে হবে কীভাবে পরিস্থিতি আগায়।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে আক্রমণ এবং ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক নিয়ে উত্তেজনা—এসবই কূটনৈতিক চাপের কারণ। হাসিনার ভারতে উপস্থিতি নিয়ে ঢাকায় উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। ইউনূস এবং অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যান্য নেতারা ভারত থেকে হাসিনাকে প্রত্যর্পণের কথা বলেছেন।
২০২৩ সালের নভেম্বরে নয়া দিল্লিতে উভয় দেশের মধ্যে শেষ পররাষ্ট্র দপ্তর পরামর্শ সভা হয়। এবারের সভায় ভারতের অর্থায়ন করা উন্নয়ন প্রকল্পের পুনরায় শুরু, ভিসা নীতি সহজ করা, অধিক সরাসরি ফ্লাইট এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
হিন্দুস্থান টাইমসকে অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, সফরটি সফলভাবে শেষ হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার আগ্রহী। কারণ, একে দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিরসন এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের স্বাভাবিকতা পুনঃস্থাপনের সুযোগ হিসাবে দেখা হচ্ছে। এই সফর হলে মিশ্রি ও ইউনূসের মধ্যে বৈঠকও হতে পারে।
হাসিনার আমলেই বাংলাদেশ-ভারত সবচেয়ে কাছের সহযোগী হয়ে ওঠে বলে কূটনৈতিক মহলে আলোচিত হয়। দুই দেশ বাণিজ্য, জ্বালানি ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। কলকাতা থেকে ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে মালামাল পরিবহনের জন্য চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে ভারতের প্রবেশাধিকার দিয়েছিল হাসিনা। এছাড়া তার সময়ে বেশ কয়েকটি সীমান্তবর্তী ট্রেন ও বাস সার্ভিস পুনরায় চালু করা হয়।