Beta
শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫

আমদানি বন্ধ, ভারতীয় পেঁয়াজ আসছে কোত্থেকে

চোরাপথে আসা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
চোরাপথে আসা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

ভারত সরকার অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। গত ডিসেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি । তবে চট্টগ্রামের পাইকারি থেকে শুরু করে খুচরা বাজার, এমনকি ভ্রাম্যমাণ গাড়িতেও মিলছে ভারতীয় পেঁয়াজ। এসব পেঁয়াজের দাম আবার কয়েকদিন ধরে বাড়ন্ত।

প্রশ্ন উঠেছে, মোদি সরকারের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ভারতীয় পেঁয়াজ এদেশে ঢুকছে কীভাবে? এর জবাব সকাল সন্ধ্যার প্রতিবেদককে দিয়েছেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের কাঁচাপণ্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস।

তিনি বলেছেন, “ভারত থেকে চোরাপথে এই পেঁয়াজ দেশে আসছে। আমরা শুনেছি, সিলেটের সুনামগঞ্জ ও তামাবিল দিয়ে এই পেঁয়াজ দেশে ঢুকছে। কয়েক হাত ঘুরে এই পণ্য ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামে পৌঁছায়। কমপক্ষে একমাস ধরে এই পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে।”

খাতুনগঞ্জের হামিদ উল্লাহ মার্কেটে ইদ্রিসের আড়ত আছে। সেখানে অবশ্য ভারতীয় পেঁয়াজের দেখা মেলেনি। তবে পাশের বেশ কয়েকটি আড়তে ভারতীয় পেঁয়াজ পাওয়া গেছে।

নিজের আড়তে চোরাপথে আসা পণ্য রাখেন না দাবি করে কাঁচাপণ্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আমি এই পেঁয়াজ বিক্রি করি না, করতে কাউকে উৎসাহও দিই না। সীমান্ত এলাকার চোরাকারবারিদের সঙ্গে আমার কোনও সখ্য নেই।

“তবে শুনেছি কিছু ফড়িয়া প্রতিদিন খাতুনগঞ্জে ২০০ থেকে ৩০০ বস্তা পেঁয়াজ কয়েকটি আড়তে বিক্রি করেন। এই ফড়িয়া কারা এবং তাদের কাছ থেকে কারা পেঁয়াজ কেনেন, তার খোঁজ আমি নিইনি।”  

পুরো হামিদ উল্লাহ মার্কেটে ৪০টির মতো আড়ত আছে; যেখানে আদা, রসুন, পেঁয়াজের মতো কাঁচাপণ্য বিক্রি হয়। এসব আড়তে দেশি পণ্যের পাশাপাশি আমদানিকৃত পণ্যও পাওয়া যায়। আড়ত থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা এসব পণ্য কিনে নিজেদের দোকানে বিক্রি করেন।

মার্কেটটির ৪০টি আড়তের মধ্যে অন্তত ১২টিতে বিক্রি হচ্ছে চোরাপথে আসা ভারতীয় পেঁয়াজ।

গত বৃহস্পতিবার এসব আড়তে ভারতীয় নাসিক জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হয় কেজিপ্রতি ১০৫ টাকায়। তিন দিন পর সোমবার পেঁয়াজের মূল্য বেড়ে ১১৫-১২০ টাকা হয়। আর বুধবার বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে।

খাতুনগঞ্জে দেশীয় মুড়িকাটা পেঁয়াজ শনিবার বিক্রি হয় কেজিপ্রতি ১১০ টাকায়। সোমবার এর মূল্য ছিল ৯২-৯৫ টাকা এবং বুধবার বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকায়। অবশ্য মেহেরপুর থেকে আসা দেশীয় পেঁয়াজ (একটু ছোট আকারের) বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৭২-৭৫ টাকায়।

আড়ত থেকে কিনে নগরীর খুচরা বাজারে বুধবার ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। অন্যদিকে দেশীয় পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১০০-১২০ টাকা।

পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা। কারণ দামের উত্থান-পতনের মধ্যে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে চাইছেন না খুচরা ব্যবসায়ীরা।

খাতুনগঞ্জে বিসমিল্লাহ স্টোর নামের এক আড়তে ঢুঁ মারা হলে সেখানে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা যায়। সকাল সন্ধ্যার প্রতিবেদক তার পরিচয় গোপন রেখে আড়তটির বিক্রয়কর্মী রহমান উল্লাহর সঙ্গে কথা বলেন।

তিনি অকপটেই বলেন, “ভারতীয় পেঁয়াজ অন্তত দেড়মাস ধরে বিক্রি করছি আমরা। সুনামগঞ্জে কয়েকটি চালান ধরা পড়ায় কয়েকদিনে দাম একটু বেড়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দাম আবারও কমে আসবে।”

খাতুনগঞ্জের কাঁচাপণ্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিসের দাবি, ভারতীয় পেঁয়াজ দেশে অবৈধভাবে প্রবেশের বিষয়টি প্রশাসন জানে।

তিনি বলেন, “ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রির বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে প্রশাসনের লোকজন জানেন। আমি কেন আলাদাভাবে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব? অপ্রিয় সত্য হচ্ছে, ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে থাকায় দামের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও প্রতিযোগিতা আছে।”

খাতুনগঞ্জের বাজারে সপ্তাহখানেক ধরে হঠাৎ দেশীয় ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনও সুনির্দিষ্ট কারণ জানাতে পারেননি চট্টগ্রামের আড়তদাররা। তাদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন, সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ অনেকদিন ধরেই আসছে। তবে কয়েকদিন ধরে সেগুলোর একটি অংশ পুলিশের হাতে ধরা পড়ায় চোরাকারবারিরা একজোট হয়ে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর এলাকা থেকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক আটক করে পুলিশ। আটক হন এর সঙ্গে জড়িত ৮ কারবারি।

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) রাজন কুমার দাস সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “৪৫ হাজার ৪৮০ কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ, ৬টি ট্রাক ও ১টি পিকআপসহ ৮ চোরাকারবারিকে আটক করা হয়েছে। তারা চোরাচালানের মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে এসব পেঁয়াজ আনছিলেন।

“জব্দ হওয়া ভারতীয় পেঁয়াজের বাজারমূল্য আনুমানিক ১ কোটি ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ৮০০ টাকা। আটকের আগে চোরাকারবারিরা জব্দকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি-সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।”

এরপর শনিবার সুনামগঞ্জের তাহিরপুর বাদাঘাট সড়কে ট্রাকে করে পাচারের সময় ১২০ বস্তা ভারতীয় পেঁয়াজসহ দুই চোরাকারবারিকে আটক করে পুলিশ। জব্দ হওয়া পেঁয়াজের বাজারমূল্য ৪ লাখ টাকা। স্থানীয় ইউনিয়নের এক সদস্যও ওই সময় গ্রেপ্তার হন।

হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেন রায়হান ট্রেডিংয়ের কর্ণধার শহীদুল ইসলাম। পেঁয়াজের দামবৃদ্ধির পেছনে চোরাকারবারিদের কারসাজি রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, “অবৈধভাবে আসায় সরকার শুল্ক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর আমরা যারা ২ মাস ধরে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়ে বসে আছি, তারা বঞ্চিত হচ্ছি। এটা তো অন্যায়। তবে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ বাজারে দেশীয় মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ কমে আসা।”

ভারতে পেঁয়াজের দাম পড়তির দিকে জানিয়ে শহীদুল বলেন, “দেশটিতে (ভারত) অন্তত একমাস ধরে ৮-১০ রুপি কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ভারতের কৃষকরা রপ্তানি শুরুর জন্য তাদের সরকারকে চাপ দিচ্ছেন।

“ভারত সরকার যদি এখন রপ্তানি শুরুর অনুমতি দেয়, তাহলে দেশের বাজারে আমরা প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ টাকার নিচে বিক্রি করতে পারব।”

অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর মোদি সরকার পেঁয়াজ টনপ্রতি রপ্তানিতে দাম ৮০০ ডলার বেঁধে দেয়। গত বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই আদেশ বলবৎ থাকবে বলে বলা হয়। 

তবে তার আগেই গত ৮ ডিসেম্বর ভারত আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়। এতে পরের দিন বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজ খুচরায় প্রায় দ্বিগুণ দামে ২২০ টাকায় বিক্রি শুরু হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত