ডেটিং অ্যাপ বাদ দিয়ে আজকাল অনেক ভারতীয়ই নাকি লিংকডইনে মজেছেন প্রেমে! কারও কারও ধারণা লিংকডইনে যে কেউই তার সম্ভাব্য সঙ্গীর মিল অমিলগুলো সহজে খুঁজে পায়। যা কিনা ডেটিং অ্যাপে খুঁজে পেতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়। কারণ মনের মানুষ খুঁজে পাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ব্যক্তির জীবনের লক্ষ্য, ক্যারিয়ার, আশা- আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি নিয়ে জানা। যে সুযোগ সহজেই পাওয়া যায় লিংকডইনে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘লিংকডইন’ নিজেদের সবসময়ই দাবি করে আসছে ‘এক্সট্রিমলি প্রফেশনাল’ সাইট হিসেবে। কিন্তু একটি সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, মিলেনিয়াল মানে অর্থাৎ ৩৫ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মধ্যে ৬১ শতাংশ লিংকড ইন ব্যবহার করছেন সম্পর্ক গড়তে। এই প্রবণতা ২০ থেকে ৪০ বয়সীদের মধ্যে ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়ছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৫২ শতাংশ লিংকডইন এর মাধ্যমে প্রেম করার কথা জানিয়েছেন।
অনেকেই তাই ডেটিং অ্যাপ থেকে দলে দলে ভিড় করছেন লিংকডইনে। তাছাড়া ডেটিং অ্যাপে দিনের পর দিন মিস ম্যাচে হতাশ বেশিরভাগ মানুষ।
কেন লিংকডইনে জীবনসঙ্গী বাছাই?
অন্যদিকে ব্যক্তির জীবন এবং পেশাগত বৃত্তান্ত লিংকডইনে সবিস্তারে লেখা থাকায় আগ্রহীরা তার সমমূল্যবোধের মানুষ এখানে সহজেই পেয়ে যান। জীবন সঙ্গী খুঁজে পাওয়ার জন্য জরুরী বিষয় হলো, দৃষ্টিভঙ্গী ও মূল্যবোধ। লিংকডইনে ব্যক্তির প্রোফাইলে চোখ বুলিয়েই এই দুটি বিষয় সম্পর্কে আগাম ধারণা পাওয়া সম্ভব। যা পেতে ডেটিং অ্যাপে পেতে পাড়ি দিতে হয় লম্বা কথোপকথন। তাই লিংকডইন-ই আজকাল ভরসা।
সম্প্রতি বেশ কজন ভারতীয় নারী জানিয়েছেন, এই পেশাদার প্ল্যাটফর্মটিতে তারা পেশার বাইরে অন্য বিষয় সংক্রান্ত মেসেজ পেয়েছেন। তাদের কয়েকজন এ-ও জানিয়েছেন, মেসেজ পাঠানোদের কয়েকজনের সঙ্গে তাদের ডেটিং অ্যাপেও আলাপ হয়েছিল।
২০২৩ সালের এক সমীক্ষা দেখা গেছে, অসংখ্য মানুষ ডেটিং অ্যাপগুলোর ব্যাপারে রীতিমতো বিভ্রান্ত। কারণ অ্যাপগুলোতে যে পরিমাণ মেসেজ তারা পাচ্ছেন, সে তুলনায় পছন্দের মানুষ খুঁজে পাচ্ছেন কদাচিৎ। ফলে ব্যবহারকারীরা দিন দিন হয়ে পড়ছেন হতাশ। অতৃপ্তি তাদের ঘিরে ধরছে।
ডেটিং অ্যাপ কেন্দ্রিক ক্রমবর্ধমান এই হতাশাকে বলা হচ্ছে ‘ডেটিং অ্যাপ ফ্যাটিগ” বা ‘ডেটিং অ্যাপ ক্লান্তি’। এই ক্লান্তি অসংখ্য মানুষকে বাধ্য করছে বিকল্প পথ খুঁজে নিতে।
মুম্বাইয়ের সাইকলোজিস্ট অ্যাবসি স্যাম এর চোখ এড়ায়নি এই নতুন প্রবণতা।
তিনি আরও বলেন, “লিংকডইন আজকাল আরও অর্থপূর্ণ যোগাযোগ তৈরি করে বলে মনে হচ্ছে। এটি একটি নির্দিষ্ট পেশার মানুষদের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম, ফলে কেউ যখন বিশেষ কোন পেশার ভেতর সঙ্গী খোঁজে তখন সহজেই এই নেটওয়ার্কটি তাকে সহায়তা করে। তাছাড়া লিংকডইনে ব্যক্তির তথ্যের যে সত্যতা পাওয়া যায়, ডেটিং অ্যাপে প্রায়ই তা থাকে অনুপস্থিত। ডেটিং অ্যাপে মানুষ নিজেদের আসল ব্যক্তিত্বকেও উপস্থাপন করে না।”
সব মিলিয়ে হতাশার পারদ এমন জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে যে, ডেটিং অ্যাপে আর ভরসা খুঁজে পাচ্ছেন না অনেক ভারতীয় নারী-পুরুষ। আরেকটি মজার তথ্য হলো, বহু ভারতীয় লিংকডইন সাইটটিকে কনসার্ট এবং ক্রিকেট ম্যাচের টিকেট প্রাপ্তির জন্য ব্যবহার করছেন। পাশাপাশি অনেকেই আবার ব্যবহার করছেন স্রেফ বন্ধুত্ব পাতাতে।
লিংকডইনের জায়গায় ডেটিং অ্যাপ বাম্বল!
ডেটিং অ্যাপ টিন্ডার ও বাম্বল দুটোই ব্যক্তিগত সংযোগের ওপরে জোর দেয়। টিন্ডার ব্যবসায়িক সংযোগের ওপর একেবারেই জোর দেয় না। অন্যদিকে, বাম্বলের ইতিমধ্যে ‘বাম্বল বিজ’ নামে একটি মোড চালু করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বাম্বলের একজন মুখপাত্র বলেন, “ভারতে, বাম্বল ডেটিং (বাম্বল ডেট), বন্ধুত্ব (বাম্বল ফর ফ্রেন্ডস বা বিএফএফ) এবং পেশাদার নেটওয়ার্কিং (বাম্বল বিজ) এর মাধ্যমে মানুষকে সংযুক্ত করে৷ আপনি মোড বাছাই করে আপনার সেটিংসের মাধ্যমে বিএফএফ বা বিজ মোডে সুইচ করতে পারেন৷ এইভাবে, আপনার সমস্ত ব্যক্তিসংযোগ তালিকা ও চ্যাট ‘ডেইট’ মোডে থাকবে,” বলেছেন বাম্বলের একজন মুখপাত্র৷
মানুষ সহজাতভাবে সামাজিক প্রাণী, এবং যখন কারো সাথে দেখা করার বা ভালবাসার সন্ধান করার কথা আসে, সংযোগগুলি যে কোনও জায়গায় ঘটতে পারে – এমনকি সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত জায়গাতেও। বাম্বল এ কাজ খুঁজতে ঢোকা তাই বিচিত্র নয়, যেমনটি লিংকডইনে প্রেম! ভাগ্যবান হলে, যে কোনও প্ল্যাটফর্মে কোনও ব্যক্তি যা খুঁজছেন তা পেতে পারেন।