ভোটে জেতার দিনই চড় খেতে হলো বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউতকে; বিজেপির হয়ে লোকসভায় যাচ্ছেন তিনি। তাকে যিনি চড় মেরেছেন, তিনি একজন নারী কনস্টেবল। তার অভিযোগ, কয়েক বছর আগে আন্দোলনকারী কৃষকদের নিয়ে অসম্মানসূচক মন্তব্য করেছিলেন কঙ্গনা।
পদ্মফুল হাতে নিয়ে কঙ্গনা ভোটে জিতেছেন, তার দল বিজেপিও জয়ী হয়েছে। কিন্তু এই জয় স্বস্তি দিতে পারছে না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। কারণ দুই মেয়াদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার চালানোর পর এবার সেই ‘ম্যাজিক নম্বর’ হারিয়েছে তার দল।
ভারতের অষ্টাদশ জাতীয় নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল বুধবার প্রকাশের পর বিজেপি নেতাদের মনে যখন অস্বস্তি, তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন কৃষক নরেন্দ্র দাভানে। তার মনে হচ্ছিল, বিজেপির এই পিছিয়ে পড়া যেন তারই জয়। অথচ দেশটির মহারাষ্ট্র রাজ্যের যাভাতমাল জেলার এই কৃষক একসময় ছিলেন মোদীর বেশ ভক্ত।
মোদী রাজ্যটির বিদর্ভ অঞ্চলের কৃষকদের কৃষি ঋণসহ তাদের সমস্যাগুলোও সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রচারের সময় মোদী কৃষক দাভানের গ্রাম দাভাদিতে গিয়েছিলেন। বিদর্ভ অঞ্চলের ১৫ হাজার গ্রামের মধ্যে ওই গ্রামটিকেই মোদীর সফরের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু মোদীর ১০ বছরের শাসনের পর সেখানকার কৃষকদের সংকট আরও গভীর হয়েছে। এবছরের ফেব্রুয়ারিতে মোদী যখন যাভাতমাল সফর করছিলেন, তখন তার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন দাভানে। কিন্তু কিন্তু পুলিশ তাকে আটকে দেয়, কোনও প্রতিবাদও করতে দেয়নি।
লোকসভা নির্বাচনের চুড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার পর মহারাষ্ট্রে বিজেপির আসন সংখ্যায় নাটকীয় পতন দেখা যায়। এতে দাভানের মতো কৃষকদের অভিযোগই সত্য প্রমাণিত হলো।
রাজনৈতিকভাবে ভারতের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই রাজ্যে ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি ৪৮ আসনের মধ্যে ২৩টিতে জিতেছিল। কিন্তু এবার তাদের আসন কমে এসেেছ ৯টিতে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সেবার জিতেছিল ৪১টি আসন, সেখানে এবার ১৭টি।
ভারতের অন্যান্য কৃষিপ্রধান অঞ্চলগুলোতেও বিজেপির ফল প্রায় একই রকম। যা থেকে বোঝা যায়, ভারতের বৃহত্তম খাদ্য উৎপাদনকারী রাজ্যগুলোতে দাভানের মতো লাখ লাখ গ্রামীণ ভোটার এবার বিজেপিকে ভোট দেয়নি।
ভারতের রুটির ঝুড়ি হিসেবে পরিচিত হরিয়ানার ১০ আসনের ১০টিতেই ২০১৯ সালে বিজেপি জয় পেয়েছিল। সেই সংখ্যা এবার অর্ধেকে নেমে এসেছে। বাকি পাঁচটি আসন এবার কংগ্রেসের ঝুলিতে গেছে।
চাল ও গম উৎপাদক পাঞ্জাব রাজ্য এবার বিজেপিকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে।
গত ডিসেম্বরে রাজস্থানের বিধানসভায় জিতেছিল বিজেপি। সেখানেও এবার লোকসভার ২৫ আসনের মধ্যে পেয়েছে ১৪টি। অথচ ২০১৯ সালে ২৫টিই ছিল বিজেপির।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) কৃষক নেতা আমরারাম রাজস্থানের এমন একটি আসনে বিজেপির ক্ষমতাসীন এমপির বিরুদ্ধে জিতেছেন, যেখানে বামরা আগে কখনও জেতেনি।
উত্তর প্রদেশে যেখানে জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ কৃষির ওপর নির্ভরশীল, সেখানেও বিজেপি ৮০টির মধ্যে মাত্র ৩৩টি আসন জিতেছে। অথচ বিজেপি সেখানে ২০১৯ সালে জিতেছিল ৬২টি এবং ২০১৪ সালে জিতেছিল ৭১টি আসন।
ভারতের জাতীয় দৈনিক দ্য হিন্দুর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, জাতীয়ভাবে গ্রামীণ এলাকায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের ভোট কমেছে ২.২ শতাংশ। অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের গ্রামীণ ও আধা-গ্রামীণ এলাকায় ভোট বেড়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ।
পাঞ্জাবভিত্তিক একজন কৃষি বিজ্ঞানী এবং প্রখ্যাত কৃষি বিশ্লেষক দেবিন্দর শর্মা বলেন, “গ্রামীণ এলাকায় বিজেপির খারাপ পারফরমেন্সের একটি বড় কারণ হল মোদী এবং বিজেপির প্রতি কৃষকদের ক্ষোভ।”
আল জাজিরা বিজেপির প্রচার বিভাগের প্রধান অনিল বালুনির কাছ থেকে তার দলের কৃষিনীতির সমালোচনা নিয়ে মন্তব্য চেয়েছিল। কিন্তু তিনি কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি।
মোদী সরকারের প্রতি কৃষকদের ক্ষোভের কারণ কী
ভারতের সরকারি তথ্য দেখায়, ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত প্রায় ৫৩ হাজার ৪৭৮ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। ঋণের চক্র থেকে মুক্তি না মেলা, উৎপাদিত ফসলের কম মূল্য ও নিম্ন পারিশ্রমিক এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উৎপাদন কমে যাওয়া, এসবের সঙ্গে মোদী সরকারের বৈরী কৃষি নীতির ফলে কৃষকদের নাভিঃশ্বাস উঠে যায়।
মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিদর্ভ অঞ্চলে সঙ্কট বহুগুণ বেড়ে যায়। অমরাবতীর বিভাগীয় কমিশনারেটের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস সরকারের দুই মেয়াদে ৯ হাজার ৬৭১ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছিল। অন্যদিকে, মোদীর অধীনে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আত্মহত্যা করে ১০ হাজার ১২২ জন কৃষক।
২০১৪ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসার আগে মোদী কৃষি খাতের সংস্কার এবং কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু মোদীর ১০ বছরে কৃষকদের অবস্থা আগের চেয়ে আরও খারাপ হয়। ২০২২ সালের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ভারতের কৃষকদের বার্ষিক গড় আয় ১০ হাজার ২১৮ টাকা বা দৈনিক মাত্র ২৮ রুপি (০.৩৪ ডলার)।
মোদীর সরকার ২০২০ সালে ভারতীয় কৃষিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কৃষকদের সঙ্গে কোনও পরামর্শ ছাড়াই তিনটি বিতর্কিত নতুন আইন করে। তার এই পদক্ষেপ সরকারের বিজেপি বিরুদ্ধে কৃষকদের বছরব্যাপী বিশাল আন্দোলনের সূত্রপাত করে।
কৃষকদের আশঙ্কা ছিল, এই আইনগুলো ভারতীয় কৃষি খাতে বড় বড় কোম্পানি ও কর্পোরেটদের একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে। এমনকি সরকার কৃষকদের জন্য ন্যূনতম মূল্য (এমএসপি) এবং সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্য দামে সরকারের কৃষি পণ্য কেনার মতো রাষ্ট্র-সমর্থিত রক্ষাকবচগুলোও বাতিল করবে।
কৃষকদের তীব্র আন্দোলনের মুখে মোদী সরকার শেষ পর্যন্ত সেই আইনগুলো বাতিল করে। কিন্তু আন্দোলনের সময় কৃষকদের গণহারে গ্রেপ্তার ও দমন-পীড়ন চালায়। কৃষকরা যাতে রাজধানী নয়া দিল্লিতে আসতে না পারে, সেজন্য মহাসড়কগুলোর ওপর ব্যারিকেড দেয়, শটগান ও পেলেট গুলি চালানোর পাশাপাশি নিরস্ত্র কৃষকদের উপর টিয়ার গ্যাস ছুড়তে ড্রোন ব্যবহার করে।
এবছরের ফেব্রুয়ারিতেও কৃষকরা ফের তাদের উৎপাদিত ফসলের জন্য ন্যূনতম মূল্যের (এমএসপি) আইনি নিশ্চয়তার দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় কোনও নিষ্পত্তি হয়নি।
কৃষকদের জাতীয় সংহতি
দেবিন্দর শর্মার মতো বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, উত্তর ভারতের কৃষকদের আন্দোলন-বিক্ষোভের ফলে দেশের অন্যান্য জায়গার কৃষকরাও জাতীয়ভাবে রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।
উদাহরণ স্বরূপ, পাঞ্জাবে কৃষকরা জমির উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। সঙ্গে চাষাবাদের খরচ বাড়ায় তাদের লোকসান হচ্ছে।
সাম্প্রতিক প্রতিবাদ আন্দোলন ওই কৃষকদের নিজেদের রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত করার এবং সম্মিলিতভাবে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করার একটি মঞ্চ দিয়েছে, বলেন শর্মা।
তার ভাষ্যে, “কৃষি আইন দেশের কৃষকদের মধ্যে একটি নতুন গতি সঞ্চার করেছে। কৃষকদের মধ্যে তাদের রাজ্য সম্পর্কে ক্ষোভ ছিল, কিন্তু যখন তাদের ওপর বৈরী আইনগুলো চাপিয়ে দেওয়া হয়, তখন জাতীয় সরকারের ওপরও তাদের ক্ষোভ তৈরি হয়।”
পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মতো রাজ্যের কৃষকরা তাদের প্রতিবাদ মিছিলকে দিল্লিতে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় বিজেপি সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়। ফলে তারা নির্বাচনের আগে প্রচার করতে আসা বিজেপি প্রার্থীদের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ করেন। এমনকি কয়েকটি গ্রামে বিজেপি প্রার্থীদের ঢুকতেও বাধা দেওয়া হয়।
পাঞ্জাবের পাতিয়ালা শহর থেকে নির্বাচন করে হেরে যাওয়া বিজেপি এমপি প্রনীত কৌরও স্বীকার করেছেন, রাজ্যটি ‘কৃষক বনাম বিজেপি’ প্রতিযোগিতা দেখেছে।
শুধু পাঞ্জাব নয় উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, হরিয়ানা, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলোতেও বিজেপির কম ভোট পাওয়ার একটি কারণ কৃষকদের ক্ষোভ।
মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ অঞ্চলের কৃষক এবং আইনজীবী বৈভব পণ্ডিত যাভাতমাল জেলার তরুণ কৃষকদের সঙ্গে কাজ করেন। জেলাটি তুলা উৎপাদনের জন্য পরিচিত। কিন্তু গত এক বছর ধরে সেখানে তুলার দাম কমছে। আর রাষ্ট্র-নির্ধারিত এমএসপি প্রতি কুইন্টালে ৬৬২০ রুপিও (৭৯ ডলার) চাষাবাদকে টেকসই করার জন্য যথেষ্ট নয়। তা বাড়িয়ে অন্তত ১০ হাজার রুপি (১২০ ডলার) করা উচিৎ।
কিন্তু মোদী সরকার ভারতে উন্নত মানের তুলা আমদানির ওপর থেকে ১০ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে নেওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। কৃষকরা বলছেন, এতে আমদানি বেড়ে বাজারে তুলা সরবরাহ বাড়ায় তাদের তুলার দাম আরও কমে যায়।
বৈভব পণ্ডিত বলেন, “এই সমস্ত সমস্যা বিদর্ভের ভোটের হিসাব-নিকাশ উল্টে দেয়। এমনকি যেই তরুণ কৃষকরা রাজনৈতিক মতাদর্শকে আগে গুরুত্ব দেননি, তারাও এতে ক্ষুব্ধ হন। যখন তারা দেখতে পান যে তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম কমছে, কিন্তু উৎপাদন খরচ ক্রমাগত বাড়ছে।
“উত্তর ভারতের কৃষকদের বিক্ষোভ হাজার হাজার কিলোমিটার দূরের মহারাষ্ট্রের বিদর্ভের কৃষকদের হতাশা এবং ক্ষোভকে আরও উস্কে দেয়।”
পণ্ডিত বলেন “সে সময় আমার চারপাশের তরুণ কৃষকদের পাঁচটি হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাস বার্তার মধ্যে একটি ছিল কৃষকদের প্রতিবাদ এবং আন্দোলনকে সমর্থন করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে।”
তার মতে, আন্দোলনের মূল দাবির চেয়ে বিক্ষোভরত কৃষকদের প্রতি সরকারের আচরণ নিয়ে তাদের মধ্যে বেশি ক্ষোভ জন্মায়। ফলে বিদর্ভ অঞ্চলটি ঐতিহ্যগতভাবে বিজেপি ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও এনডিএ জোট এবার সেখানকার ১০ আসনের মধ্যে মাত্র তিনটিতে জয় পায়।
পেঁয়াজচাষিদের ক্ষোভ
পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ায় মহারাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে ৫০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পেঁয়াজচাষিদের ক্ষোভও এবারের নির্বাচনের ফলাফলে প্রতিফলিত হয়। মাত্র একটি পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা ছাড়া বাকি সবকটিতেই মোদীর দল বিজেপি ও এনডিএ জোটের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছে।
মহারাষ্ট্র রাজ্য পেঁয়াজচাষি সমিতির প্রধান ভরত দিঘোলে বলেন, েভাটের ফল দেখে তিনি বিন্দুমাত্র অবাক হননি।
গত কয়েক বছর ধরেই পেঁয়াজচাষিরা করুণভাবে কম দামের ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। গত বছর একজন পেঁয়াজচাষি ৫১২ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করে নিট মুনাফা হিসাবে মাত্র ২.৯০ টাকা (০.০৩ ডলার) আয় করেছেন বলে জানা গেছে। এর জন্য সরকারি নীতিকেই দায়ী করছেন কৃষকরা।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরে যখন দাম বাড়তে শুরু করেছিল, মোদী সরকার তখন পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করে, যার ফলে দাম পড়ে গিয়েছিল।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে পেঁয়াজের দাম কমে প্রতি কেজিতে ২২ রুপিতে (০.২৬ ডলার) নেমে আসে, যা কৃষকদের বিশাল ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয়।
দিঘোলে বলেন, কৃষকরা মোদী সরকারের ওই পদক্ষেপে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল, কিন্তু তাদের অভিযোগে কান দেওয়া হয়নি।
“গত নির্বাচনে মোদী সরকার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। আর একারণে হয়ত তারা ভেবেছিল যে, তাদের জীবিকার বিষয়েও কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার আগে কৃষকদের সঙ্গে পরামর্শ করার দরকার নেই,” বলেন দিঘোলে।
মোদী যখন এই পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকায় এবারের নির্বাচনী প্রচারে যান, তখন দিঘোলে স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ রেখেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাকে যেন দুই মিনিটের হলেও একটি বৈঠকের সুযোগ দেওয়া হয়। রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা কীভাবে স্থানীয় কৃষকদের ক্ষতি করছে, সে সম্পর্কে মোদীকে জানাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সুযোগ পাননি তিনি।
দিঘোলে বলেন, মোদী যেদিন এলাকায় এসেছিলেন, স্থানীয় কর্মকর্তারা সেদিন তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছিল। এই ঘটনায় কৃষকরা ক্ষুব্ধ হয়।
দিঘোলে বলেন, “তিনি ১০ বছর ধরে আমাদের শাসন করছেন, কিন্তু আমাদের জন্য তার কাছে দুই মিনিটও সময় নেই? ওই ঘটনার পর এটাই ছিল কৃষকদের প্রশ্ন।”
ভোটের একদিন আগে মোদী সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়, কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
“কৃষকরা সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল, আর বিরোধীরা সেই ক্ষোভ থেকে লাভবান হয়েছে,” বলেন দিঘোলে।
মহারাষ্ট্রের প্রবীণ কৃষক নেতা বিজয় জাওয়ান্ধিয়া বলেছেন, বিজেপিকে তার কৃষি নীতির জন্য চড়া মূল্য দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, “বিজেপি সরকারের প্রতি কৃষকদের সমর্থন কখনোই টলবে না, সবার মধ্যেই এমন একটি ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। বিজেপিও ভেবেছিল, কৃষকরা কখনোই তাদের দলকে ত্যাগ করবে না।”
পেঁয়াজচাষি সমিতির প্রধান দিঘোলে বলেন, “একজন কৃষক তার অন্যান্য পরিচয় দিয়েও প্রভাবিত হন, যা তার জাত বা ধর্মও হতে পারে। এ কারণে বহু বছর ধরে কৃষকরা পেশাগত বা অর্থনৈতিক স্বার্থের পরিবর্তে জাতপাত ও ধর্মের ভিত্তিতে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল।”
কিন্তু ২০২৪ সালে এসে সেই কৃষকরা বদলে গেছে।
“এবার কৃষকরা অন্য সব কিছুর চেয়ে তাদের পেশাগত পরিচয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছেন এবং সর্বাগ্রে কৃষক হিসেবেই ভোট দিয়েছেন।”
তথ্যসূত্র : আল জাজিরা