বাসে-ট্রেনে-উড়োজাহাজে চলাচলের সময় যাত্রীদের ঘুমিয়ে পড়া নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তবে চালক যদি ঘুমিয়ে পড়েন? দুর্ঘটনা যে অনিবার্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ায় এমন এক ঘটনা ঘটেছে। স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, এতে কেউ হতাহত হয়নি।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৫ জানুয়ারি। সেদিন ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপ থেকে রাজধানী জাকার্তার উদ্দেশে রওনা দেয় স্থানীয় উড়োজাহাজ সংস্থা বাটিক এয়ারের একটি উড়োজাহাজ। সেটিতে যাত্রী ছিল ১৫৩ জন। আর ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ছিলেন চার জন।
উড্ডয়নের পর প্রায় আধ ঘণ্টা উড়োজাহাজটির ককপিটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয় জাকার্তা উড়োজাহাজ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
এ নিয়ে তদন্তে নামে ইন্দোনেশিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয়। তারা একটি কমিটি করে, যার নাম ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি কমিটি (কেএনকেটি)।
এই কমিটি শনিবার তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। এতে বলা হয়, সুলাওয়েসি দ্বীপ থেকে রওনা দেওয়ার প্রায় আধ ঘণ্টা পর ৩২ বছর বয়সী পাইলট তার কো-পাইলটকে বলেছিলেন, তার বিশ্রামের প্রয়োজন। এই সময় কো-পাইলট যেন উড়োজাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেন।
পাইলটের কথায় রাজি হন কো-পাইলট। তবে ফ্লাইটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর একপর্যায়ে তিনি নিজেও ঘুমিয়ে পড়েন। এভাবে সাড়াশব্দহীনভাবে কেটে যায় ২৮ মিনিট। এরপর পাইলটের ঘুম ভাঙ্গে। ঘুম থেকে উঠে তিনি দেখেন, কো-পাইলট ঘুমাচ্ছেন এবং উড়োজাহাজটি রুট থেকে কিছুটা দূরে সরে গেছে।
পাইলট তখন কো-পাইলটের ঘুম ভাঙ্গান এবং তারা দুজনে রাজধানী শহরে নিরাপদে উড়োজাহাজটি অবতরণ করান।
কো-পাইলটের এমন ঘুমের কারণ হিসেবে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার স্ত্রী একমাস আগে এক যমজ সন্তানের জন্ম দেন। স্ত্রীর পাশাপাশি তাকেও নবজাত শিশুদের লালন-পালন করতে হচ্ছে।
এ ঘটনায় দুই পাইলটকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
কেএনকেটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, আকাশে সব মিলে দুই ঘণ্টা ৩৫ মিনিট ছিল উড়োজাহাজটি। পাইলট দুজন মাঝপথে ঘুমিয়ে পড়ায় যাত্রী বা অ্যাটেনডেন্ট কেউই আহত হননি। উড়োজাহাজটিরও কোনও ক্ষতি হয়নি।
আকাশে ওড়ার আগে পাইলটদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার নিয়ম। ২৫ জানুয়ারি উড্ডয়নের আগে বাটিক এয়ারের ওই দুই পাইলটেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাদের রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন ছিল স্বাভাবিক। তাদের শরীরে মদের উপস্থিতিও পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ উড়োজাহাজ চালানোর মতো শারীরিকভাবে সক্ষম ছিলেন তারা।
তাহলে পাইলটরা ঘুমিয়ে পড়লেন কেন?
এ বিষয়ে বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ অ্যালভিন লাই বলেন, “ফ্লাইটের আগে পাইলট দুজন বিশ্রাম নিয়েছেন বলে মনে হলেও তাদের বিশ্রাম পর্যাপ্ত ছিল কি না, তা স্বাস্থ্য পরীক্ষা থেকে জানা সম্ভব নয়।”
আকাশে মাঝপথে পাইলটদের ঘুমিয়ে পড়ার ঘটনায় বাটিক এয়ারকে কড়া ভাষায় তিরস্কার করেছে ইন্দোনেশিয়ার পরিবহন কর্তৃপক্ষ।
দেশটির উড়োজাহাজ চলাচলের প্রধান এম কৃস্টি এনদাহ মুরনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাটিক এয়ারের উচিত তাদের কর্মীদের বিশ্রামের সময়ের দিকে আরও মনোযোগী হওয়া।
২০১৯ সালে বাটিক এয়ারের আরেকটি ঘটনাও বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। সে বছর উড়ন্ত অবস্থায় তাদের একজন পাইলট জ্ঞান হারিয়ে ফেলায় উড়োজাহাজের জরুরি অবতরণ করতে হয়েছিল।
তথ্যসূত্র : বিবিসি, সিএনএন