৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারত ও পাকিস্তান সিন্ধু অববাহিকার ছয়টি নদীর পানি নিজেদের মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে ভাগাভাগি করে আসছিল। নিজেদের মধ্যে চারটি যুদ্ধ এবং অবিরাম উত্তেজনা থাকা সত্ত্বেও সিন্ধু পানি চুক্তির মাধ্যমে তারা সীমান্তের উভয় পাশের জমি উর্বর রাখতে সক্ষম হয়।
কিন্তু সেই চুক্তি ঘিরে এবার নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে নতুন করে বিরোধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ সম্প্রতি ভারত চুক্তিটির শর্তগুলোতে পরিবর্তনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য পাকিস্তানকে একটি নোটিস পাঠিয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮ সেপ্টেম্বর ভারত পাকিস্তানকে একটি আনুষ্ঠানিক নোটিস পাঠায়। এতে জনসংখ্যার বেড়ে যাওয়া, পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ এবং অন্যান্য কারণসহ বিভিন্ন উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে ভারত চুক্তিটির পুনর্মূল্যায়নের অনুরোধ করেছে।
নোটিসে বলা হয়, “মৌলিক এবং অপ্রত্যাশিত কিছু পরিবর্তনের ফলে চুক্তির বিভিন্ন ধারার অধীনে উভয় পক্ষের বাধ্যবাধকতাগুলোর পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন।”
প্রশ্ন উঠেছে, এই নোটিসের অর্থ আসলে কী? কেন সিন্ধু পানি চুক্তি দেশ দুটির জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ? এর পরে কী ঘটতে পারে?
সিন্ধু পানি চুক্তি কী?
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অনেক বিষয়ের মতো সিন্ধু পানি চুক্তিরও সূচনা ১৯৪৭ সালের আগস্টে ভারত ভাগের সময়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন অবসানের পর ভারত ও পাকিস্তান দুটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। দুটি দেশই হিমালয় থেকে প্রবাহিত নদীগুলোর পানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
উভয় জাতি সেচ ও কৃষির জন্য একই নদী প্রবাহের উপর নির্ভর করে, যার ফলে পানি সম্পদের সুষম বণ্টনের জন্য আলোচনার জরুরি প্রয়োজন দেখা দেয়। বিশেষ করে পাঞ্জাবের সমন্বিত সেচ ব্যবস্থা পরিচালনার সমস্যা সমাধানের জন্য একটি চুক্তি জরুরি হয়ে পড়ে।
পাঞ্জাবে ব্রিটিশরা প্রচুর বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু ভারত ভাগের সময় পাঞ্জাবও দুই ভাগ হয়ে যায়, প্রদেশটির মাঝখান দিয়ে ভারত ও পাকিস্তানকে পৃথককারী নতুন সীমান্ত রেখা টানা হয়।
১৯৫১ সাল থেকে শুরু করে দীর্ঘ নয় বছর আলোচনার পর বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরে সিন্ধু পানি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
সিন্ধু পানি চুক্তিতে ভারতকে হিমালয় থেকে আসা সিন্ধু উপত্যকার পূর্বাঞ্চলের সুতলেজ, বিয়াস ও রাভি নদীর পানির ওপর একচেটিয়া অধিকার দেওয়া হয়, যার পরিমাণ বার্ষিক ৩৩ মিলিয়ন একর-ফুট (এমএএফ)। আর পাকিস্তানকে দেওয়া হয় পশ্চিমের সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব নদীর পানির অধিকার, যার পরিমাণ ১৩৫ মিলিয়ন একর-ফুট (এমএএফ)।
চুক্তি অনুযায়ী ভারত সীমিত কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া পশ্চিম দিকে প্রবাহিত নদীগুলোর পানি অবাধে পাকিস্তানে প্রবাহিত হতে দিতে বাধ্য। তবে ভারতকে কিছু শর্তে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত নদীগুলোতে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরিরও অনুমতি দেওয়া হয়।
ভারতের সেই প্রকল্পগুলোকে অবশ্যই ‘রান-অফ-দ্য-রিভার’ হতে হবে, যার অর্থ তারা উল্লেখযোগ্যভাবে পানির প্রবাহ বা সঞ্চয়স্থান পরিবর্তন করতে পারবে না। যাতে পাকিস্তানের পানির অধিকার নিশ্চিত হয় এবং নিচের দিকের নদী প্রতিকূলভাবে প্রভাবিত না হয়।
এ ছাড়া ভারতকে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো নির্দিষ্ট নকশা ও পারিচালন পদ্ধতি মেনেই বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যদিকে, পাকিস্তানকে ভারতীয় প্রকল্পের নকশা নিয়ে আপত্তি করার অধিকার দেওয়া হয়।
কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে ভারতের সবচেয়ে বড় অভিযোগগুলোর মধ্যে একটি হলো, পাকিস্তানের আপত্তির কারণে তারা সুতলেজ, বিয়াস ও রাভিতে জলাধার বা বাঁধ তৈরি করতে পারছে না। অথচ চুক্তিতে বলা আছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে ভারত চাইলে তার নদীগুলোতে বাঁধ তৈরি করতে পারবে।
কিন্তু ভারতের অভিযোগ, এই ধরনের যে কোনও প্রচেষ্টায় পাকিস্তান বাধা দেয়। জম্মু ও কাশ্মিরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত এই নদীগুলো ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি অমীমাংসিত সমস্যা হিসেবেই রয়ে গেছে।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতেও ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি সংশোধনের জন্য পাকিস্তানকে নোটিস দিয়েছিল। নোটিসটি সিন্ধু পানি কমিশনারের মাধ্যমে পাঠানো হয়।
নয়া দিল্লির প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ইসলামাবাদ গত প্রায় পাঁচ-ছয় বছর ধরে ঝিলাম নদীতে ভারতের কিষাণগঙ্গা ও রটল হাইড্রো ইলেকট্রিক প্রকল্পের সমস্যা সমাধানে আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল।
ভারত এখন কী চায়?
ভারত বলেছে, তারা চুক্তির শর্তাবলী নিয়ে পুনরায় আলোচনা করতে চায়। নয়া দিল্লির রাজনৈতিক বিশ্লেষক অনুত্তমা ব্যানার্জির মতে, ভারত বিশ্বাস করে যে চুক্তির বর্তমান শর্তগুলো তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়।
পাকিস্তানকে দেওয়া ঝিলাম, চেনাব ও সিন্ধু নদীর চেয়ে ভারতকে দেওয়া রাভি, সুতলজ ও বিয়াসের পানি অনেক কম।
ব্যানার্জি বলেন, কার্যত চুক্তির আওতায় থাকা মোট পানির মাত্র ২০ শতাংশ ভারত পায় আর পাকিস্তান পায় ৮০ শতাংশ পানি। পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকা নদীগুলোতে পানি অনেক বেশি।
ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকা নদী তিনটিতে পানি অনেক কম হওয়ায় তা ভারতের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে পারছে না। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেও ভারত পানির ঘাটতিতে পড়েছে।
তবে ভারত চুক্তিতে ঠিক কী পরিবর্তন আনতে চায়, তা সুনির্দিষ্টভাবে এবং স্পষ্ট করে বলেনি। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, নয়া দিল্লি পশ্চিম দিকে প্রবাহিত নদীগুলোতে জলবিদ্যুৎ এবং অন্যান্য অবকাঠামো তৈরির বিষয়টি আরও সহজ করতে চায়।
পাকিস্তান কী বলছে?
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা সত্ত্বেও ১৯৯০-র দশকের শেষভাগ পর্যন্ত চুক্তিটি নিয়ে কোনও বিতর্ক তৈরি হয়নি। ওই সময় ভারত জম্মু-কাশ্মীরে চেনাব নদীর উপর বাগলিহার জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এরপর কয়েক বছর আগে ভারত ঝিলাম নদীর উপর কিষাণগঙ্গা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে।
লাহোর-ভিত্তিক পরিবেশ আইনজীবী আহমেদ রাফায় আলম বলেন, “পাকিস্তানের যুক্তি হলো, ভারত যেভাবে এই বাঁধগুলো ডিজাইন করছে তা চুক্তির লঙ্ঘন। কারণ এর ফলে নদীগুলোর অবাধ পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে।”
অন্যদিকে, ভারত জোর দিয়ে বলে যে, তাদের প্রকল্পগুলো চুক্তির শর্তাবলী মেনেই ডিজাইন করা হয়েছে। আলম বলেন, “ভারত যুক্তি দেয় যে, তারা যদি পানির প্রবাহকে বাধা দিতে চায়, তাহলে তাদেরকে নিজেদের অঞ্চলে বন্যা সৃষ্টি করতে করতে হবে, যা অবাস্তব।”
গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুমতাজ জাহরা বালোচ বলেন, সিন্ধু পানি চুক্তি দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ‘স্বর্ণ মানদণ্ড’ এবং পাকিস্তান তা বাস্তবায়নের জন্য ‘পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।
জাহরা বালোচ তার সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “পাকিস্তান বিশ্বাস করে, পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখা, পরিবেশ রক্ষা করা এবং পরিবেশের জন্য বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এমন ব্যবস্থা এড়ানো দুদেশের সম্মিলিত দায়িত্ব। দুই দেশের সিন্ধু কমিশনারদের একটি বিশেষ কৌশল বা পদ্ধতি রয়েছে এবং আমরা বিশ্বাস করি যে এই চুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত বিষয় সেই পদ্ধতিতে আলোচনা করা সম্ভব।”
বৃহত্তর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে চুক্তিটির অবস্থান কোথায়?
চুক্তিটি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি একটি প্রযুক্তিগত বিষয়কে কেন্দ্র করে হলেও শেষ পর্যন্ত এটি মানুষের জীবনের জন্য অপরিহার্য উপাদান পানির সঙ্গে সম্পর্কিত। বিষয়টি ভূ-রাজনীতিরও একটি ইস্যু।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে কিছু সশস্ত্র ব্যক্তি ভারত-শাসিত কাশ্মিরের উরিতে একটি ভারতীয় সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালায়। এতে অন্তত ১৯ জন সেনা নিহত হয়। হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। তবে ইসলামাবাদ এতে তাদের কোনো ভূমিকা অস্বীকার করে।
ওই হামলার পর ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইঙ্গিত দিয়েছেন, নয়া দিল্লি সিন্ধু উপত্যকার নদীগুলোর পানির উপর বিধিনিষেধের মাধ্যমে পাকিস্তানকে শাস্তি দেওয়ার কথা ভাবছে।
কর্মকর্তারা একাধিক ভারতীয় সাংবাদিককে বলেন মোদী তাদের বলেছিলেন, “রক্ত এবং জল একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না।”
টাফটস ইউনিভার্সিটির টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির প্রভাষক ইরুম সাত্তার বলেন, পাকিস্তানের অবস্থান হল পশ্চিম দিকে প্রবাহিত নদীগুলোর ওপর তার ঐতিহাসিক অধিকার রয়েছে, যেমনটি চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ঔপনিবেশিক যুগ থেকে পাকিস্তান তার বিশাল কৃষি অবকাঠামো বজায় রাখতে এই নদীগুলোর উপর নির্ভর করে আসছে।
তবে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ভারতের অবস্থান ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়েছে এবং তারা পশ্চিম দিকে প্রবাহিত নদীগুলোর পানির ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণের জন্য আরও অবকাঠামো তৈরির চেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, “ভারত যুক্তি দেখায় জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সেই উন্নয়নের জন্য নির্ভরযোগ্য ও ‘সবুজ’ বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নদীগুলোর ওপর তাদের আরও নিয়ন্ত্রণ দরকার। তার মানে ভারত নিজেদের সুবিধা আদায়ে চুক্তিটির শর্তগুলোতে বদল আনতে চায়।”
আইনজীবী রাফায়ে আলম বলেছেন, এই চুক্তিটি পৃথিবীর একমাত্র আন্তঃসীমান্ত পানি চুক্তি যাতে কোনও অভিন্ন নদীর পানি নয় বরং আস্ত নদী ভাগাভাগি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “পৃথিবীর সমস্ত চুক্তিতেই একাধিক দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীর পানি ভাগাভাগি করা হয়। কিন্তু এটিই একমাত্র চুক্তি যেখানে পানির পরিবর্তে আস্ত নদী ভাগাভাগি করা হয়।”
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তান তাদের ভাগে পড়া নদীতে ভারতের নির্মিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো নিয়ে বারবার আপত্তি তোলে এবং বিষয়টি নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত স্থায়ী সালিশি আদালতে (পিসিএ) নিয়ে যায়। ভারত তখন চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে পাকিস্তানকে ‘অনিচ্ছুক’ বলে অভিযুক্ত করে।”
পাকিস্তানের সঙ্গে এই বিরোধের বিষয়ে ভারত পিসিএ-র এখতিয়ার প্রত্যাখ্যান করে। ভারতের যুক্তি হল পাকিস্তান প্রথমে সিন্ধু পানি চুক্তির অন্যান্য বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়াগুলো শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
চুক্তির অধীনে বিরোধ নিষ্পত্তির পদ্ধতি বা কৌশল কী?
সিন্ধু পানি চুক্তির অধীনে ভারত ও পাকিস্তান যৌথভাবে একটি স্থায়ী সিন্ধু কমিশন প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে উভয় পক্ষ থেকে একজন করে কমিশনার থাকেন।
ছোটখাটো বিরোধ কমিশনের মাধ্যমে সমাধান করা হয়, তবে অমীমাংসিত সমস্যাগুলো বিশ্বব্যাংকের নিযুক্ত একজন নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো যেতে পারে। বিশ্বব্যাংক এই চুক্তির বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ায় সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
পাকিস্তান প্রথমে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত নদীগুলোতে ভারতীয় প্রকল্প নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একজন নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞের নিয়োগ চেয়েছিল কিন্তু পরে পিসিএ-র কাছে নালিশ করে। এরপর ভারতও তখন একজন নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞের নিয়োগ চেয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংক ২০২২ সালে সিদ্ধান্ত নেয় উভয়ই একজন নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করবে এবং পিসিএ-তে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেবে। ভারত শুধুমাত্র নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের মধ্যস্থতায় অংশ নেয়।
চুক্তিটি কতটা সফল
ইরুম সাত্তারের মতে, সিন্ধু পানি চুক্তি অনেকাংশেই সফল হয়েছে। তবে যখন ভূখণ্ড নিয়ে বিরোধের সমস্যাগুলো, বিশেষ করে কাশ্মীর সম্পর্কিত সমস্যাও এতে জড়িয়ে পড়ে তখন পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
কাশ্মীর নিয়ে ১৯৪৭ সাল থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একাধিক যুদ্ধ হয়েছে। উভয় দেশই এই অঞ্চলটিকে নিজেদের বলে দাবি করে। অঞ্চলটি এখনো দুদেশের মধ্যে ভাগ হয়ে আছে। সিন্ধু পানিচুক্তি হওয়ার পরও মোট তিন বার ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে পাকিস্তান।
ইরুম সাত্তার বলেন, “সিন্ধু পানি চুক্তি কাশ্মীর সংঘাতকে বৃহত্তর সংঘাতে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা এবং পানি নিয়ে সমস্যাগুলোর কিছুটা হলেও সমাধান নিশ্চিত করার জন্য করা হয়েছিল।”
রাফায়ে আলমও বলেন, তার বিশ্বাস গত ছয় দশকে চুক্তিটি অনেকাংশেই তার উদ্দেশ্য পূরণ করেছে।
সিন্ধু পানি চুক্তির ভবিষ্যৎ কী
২০১৯ সালের আগস্টে ভারত তার নিয়ন্ত্রণে থাকা জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার পর থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে তার সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে।
ইরুম সাত্তারের বিশ্বাস, চুক্তিটিকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সর্বোত্তম উপায় হল এর মূল ‘চেতনায়’ ফিরে যাওয়া যার ভিত্তিতে এটি মূলত আলোচিত হয়েছিল।
তিনি বলেন, তথাপি ভারতের বৈশ্বিক প্রভাব বাড়তে থাকায়, পাকিস্তান সম্ভবত আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে তার পানি-সম্পর্কিত দাবিগুলো আদায় করতে চাইবে। অন্যদিকে ভারত তার সুবিধা আদায় করার জন্য তার ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বকে কাজে লাগাবে।
তথ্য সূত্র : আল জাজিরা