এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে গত জুলাইয়ে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখেছিল বাংলাদেশ। এরপর রাজনৈতিক পালাবদল হলে নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে অর্থনীতি। যার প্রভাবেই আগস্টে এসে কিছুটা কমেছে মূল্যস্ফীতি, যদিও এখনও দুই অঙ্কের ঘরেই রয়েছে তা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ওয়েবসাইটে রবিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্ট মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে দেশের সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
জুলাইয়ে এই মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা এর আগের ১৩ বছরের মধ্যে রেকর্ড।
সে হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি কমেছে ১ দশমিক ১৭ শতাংশীয় পয়েন্ট।
বছর বা মাসের ব্যবধানে খাদ্য, কাপড়, পোশাক, বাড়ি, সেবা ইত্যাদি বিভিন্ন উপাদানের মূল্য বৃদ্ধির যে পার্থক্য, তাকেই বলা হয় মূল্যস্ফীতি।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাই মাসের শুরু থেকে আন্দোলনে পথে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই আন্দোলন ছাত্র থেকে ছড়ায় জনতায়। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে দেওয়া হয় ব্লকেড, যাতে অচল হয়ে পড়ে দেশ। ভেঙে পড়ে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা। ফলে ঢাকাসহ সারাদেশের বাজার ব্যবস্থায় অস্থিরতা তৈরি হয়। যার কারণে বেড়ে যায় নিত্যপণ্যের দাম।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। ৮ আগস্ট দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে থাকে পরিস্থিতি, স্থিতিশীল হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা।
আর এর হাত ধরেই কিছুটা কমল মূল্যস্ফীতি।
যদিও আগস্ট মাসের এই মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত বছরের একই মাসের তুলানায় শুন্য দশমিক ৫৭ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি। গত বছরের আগস্ট মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।
খাদ্য উপখাতে জুলাই মাসের তুলনায় মূল্যস্ফীতি ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ কমে আগস্টে ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। তবে আগস্টে খাদ্য বহির্ভূত উপখাতে মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়ে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ হয়েছে। জুলাই মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
আগস্টে শহরের তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি ছিল। জুলাইয়ে গ্রামীণ এলাকায় সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য উপখাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ আর খাদ্য বহির্ভূত উপখাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
অন্যদিকে গতমাসে দেশের শহরাঞ্চলে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য এক শতাংশ। এরমধ্যে খাদ্য উপখাতে মূল্যস্ফীতি হয় ১১ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত খাতের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ২০ শতাংশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিবিএসের মূল্য ও মজুরি উইংয়ের এক কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বিবিএস মূল্যস্ফীতি বাড়া-কমার কারণ নির্ণয় করে না। দেশের সব জেলা ও বাছাই করা কিছু উপজেলা বাজার থেকে মূল্য সংগ্রহ করে মূল্যস্ফীতির হিসাব করা হয়।
“তবে আমাদের মনে হয়েছে জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের কারণ সারাদেশে গণ পরিবহণ চলাচল ব্যাহত হয়েছে। এর ফলে দেশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পণ্যপরিবহণ বাধাগ্রস্থ হয়েছে। যার কারণে বিশেষ করে খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে গিয়েছিল।”
তবে আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর থেকে গণ পরিবহণ অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসায় বাজার জোগান বেড়েছে, এরফলে মূল্যও কিছুটা কমেছে; উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা।