বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত ও উদ্বেগজনক সূচক এখন মূল্যস্ফীতি। বাজারের আগুনে মূল্যস্ফীতির পারদ চড়ছেই।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে দেশে গড় মূল্যস্ফীতির হার এখন ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। নতুন বাজেটে এই সূচক ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রায় আট লাখ কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন, তাতে তিনি এই আশার কথা শুনিয়েছেন।
এটি মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট। এক সময়ের ঝানু কূটনীতিক মাহমুদ আলী তার প্রথম বাজেটের শিরোনাম দিয়েছেন ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’।
বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য থাকলেও তা সম্ভবপর হয়নি; গত ১৫ মাস ধরে অর্থনীতির স্পর্শকাতর এই সূচক ৯ শতাংশের উপরে অবস্থান করছে।
বিবিএস এই সপ্তা্হে মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, মে মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৯ দশমিক ১৯ শতাংশ।
আগের মাস এপ্রিলে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
মার্চে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ; যার মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ; খাদ্যবহির্ভূত ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
মে মাসে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ সার্বিক মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো ২০২৩ সালের মে মাসে দেশের মানুষ যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিল, গত মে মাসে তা কিনতে ১০৯ টাকা ৮৯ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো ২০২৩ সালের মে মাসে দেশের মানুষ যে খাদ্যপণ্য ১০০ টাকায় পেয়েছিল, এই বছরের মে মাসে তার জন্য ১১০ টাকা ৭৬ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
এদিকে গত ৯ মে খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ে যে তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস), তাতে দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ।
বিআইডিএসের একটি জরিপের তথ্য প্রকাশ অনুষ্ঠানে মহাপরিচালক বিনায়ক সেন এতথ্য জানিয়ে বলেন, “সম্প্রতি বিআইডিএসের পক্ষ থেকে দেশের সব জেলা থেকে তথ্য নিয়েছি। এরপর একটি পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতি হিসাব করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১৫ শতাংশ।”
সাধারণত মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করে বিবিএস। তবে বিআইডিএস পৃথক পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতির এই হিসাব করেছে।
বিনায়ক সেন মনে করেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে শুধু সুদহার বাড়ানো বা এ রকম পৃথক পদক্ষেপ নিলে হবে না। এর সঙ্গে শুল্ক কমানোসহ সমন্বিতভাবে বেশ কিছু উদ্যোগ নিতে হবে।
বিবিএসের তথ্য বলছে, ১২ মাসের গড় হিসাবে (২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের মে) দেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
গত অর্থবছরের একই সময়ে (২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের মে) গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
৯ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ গড় মূল্যস্ফীতি নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছর (২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন) শেষ হয়েছিল।
তার আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার।
কিন্তু অর্থবছর শেষে দেখা যায়, বাজেটের লক্ষ্যের চেয়ে ৩ দশমিক ৪২ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি মূল্যস্ফীতি নিয়ে অর্থবছর শেষ হয়।
২০০৮-০৯ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ওই সময়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ।
১৫ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি
গত বছরের মার্চে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ শতাংশে ওঠে। এরপর তা আর কোনও মাসেই ৯ শতাংশের নিচে নামেনি। অর্থাৎ ১৫ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে।
গত বছরের আগস্টে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে ওঠেছিল। খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে উঠেছিল।
পরের মাস সেপ্টেম্বরে অবশ্য সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশে নেমে আসে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি নেমে আসে ১২ দশমিক ৩৫ শতাংশে।
অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে ওঠে; খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ।