Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫

হাসপাতালে হাসপাতালে আহত রোগী, গুলিতেই নিহত বেশি 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় বিকাল ৫টার দিকে কোটা বিরোধীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় সোমবার বিকাল ৫টার দিকে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া চলে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

দেশের মানুষের বড় ভরসার জায়গা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সেখানেও স্বাস্থ্যসেবায় দেখা গেছে বিপর্যয়। কোটা আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতায় আহত রোগীর চাপে ঠাঁই মেলেনি অনেকের।  

কাগজে কলমে আড়াই হাজার শয্যার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাধারণ সময়ে রোগী ভর্তি থাকে চার হাজারের মতো। নির্ধারিত শয্যার বাইরে রোগীদের থাকতে হয় মেঝেতে, বাথরুমের দরজার পাশে, সিড়িতে, সিড়ির নিচের ফাঁকা জায়গায়। চিকিৎসকরাও এতে অভ্যস্ত।

তবে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার সেই ঢাকা মেডিকেলেও যেন অতীতের সব বিপর্যয় ছাপিয়ে যায়, রোগীর চাপে ঠাঁই ছিল না কোথাও; যার রেশ চলছে এখনও।

গত ২৩ জুলাই সরেজমিনে ঢাকা মেডিকেলের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও মর্গে গিয়ে চোখে পড়ে স্বজনদের আহাজারি, আহতদের কাতরতা; আর ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত চিকিৎসকদের।  

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তানভীর মোল্লা ভর্তি রয়েছেন দুই চোখে গুলি নিয়ে। তানভীর জানালেন, তার আলিম পরীক্ষা চলছে, দেশের এ অবস্থায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তিনি পরীক্ষায় আর বসতে পারবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কিত।

কীভাবে আহত হলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত শুক্রবার নরসিংদীতে বাবার সঙ্গে খালার বাসায় যান তিনি। সেখান থেকে অটোরিকশায় ওঠার পর গুলি লাগে তার দুই চোখে, এরপর অনেকটা পথ পেরিয়ে ঢাকা মেডিকেলে ঠাঁই হয় তার।

ঢাকা মেডিকেলের চক্ষু বিভাগে মঙ্গলবার পর্যন্ত ভর্তি ছিলেন ৪১ জন, তাদের সবার চোখে গুলির আঘাত।

এ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোশতাক আহমেদ জানালেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩২ জনের চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে, অনেকেরই আবার চোখেরে ভেতরে বুলেট রয়ে গিয়েছে। অনেকের আবার ক্ষত এতোটাই যে সেগুলো আর বের করা যাবে না। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান মঙ্গলবার জানান, মোট এক হাজার ৭১ জন মঙ্গলবার পর্যন্ত এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মৃত অবস্থায় এখানে আনা হয়েছে ৬০ জনকে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৯ জন। হাসপাতালে ভর্তি থাকা ২০৮ জনের অবস্থা গুরুতর; আর এখন পর্যন্ত (মঙ্গলবার) ময়নাতদন্ত হয়েছে ৭৫ জনের।

এই আহতরা সবাই যে সংঘর্ষে অংশ নিয়েছেন এমন নয়, অনেকেই সংঘর্ষের ভেতরে বা পরে আহত হয়েছেন বলে জানান চিকিৎসকরা।

তারা বলছেন, গত সোমবার (১৫ জুলাই) থেকেই ঢাকা মেডিকেলে রোগীরা আসতে শুরু করে। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেদিন সন্ধ্যা থেকেই এ হাসপাতালের সব ইউনিটের চিকিৎসকদের জরুরি ভিত্তিতে দায়িত্ব পালনের জন্য ঢাকা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, ১৫ জুলাই পর্যন্ত গুলির রোগী ছিল না। তখন মাথা ফাটা, হাত ভাঙা, নাক মুখ ভাঙা রোগীরা আসতে থাকে। অর্থাৎ লাঠির আঘাতে আহত রাগীরাই ছিলেন।

তবে সবচেয়ে মর্মান্তিক হচ্ছে, হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে, হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে জরুরি বিভাগের বাইরে যাওয়া এবং হাসপাতালের প্রধান ফটকেও অনেককে আবার পেটানো হয়েছে জানান এই চিকিৎসক।

চলতি জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন অনেকটা ‘সহনীয়’ পর্যায়ে থাকলেও গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) তা সহিংস হয়ে ওঠে। সেদিন ঢাকা মেডিকেলে যেন তিল ধারণের জায়গা ছিল না।

কেবল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালই নয়, রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও আহত রোগীদের ব্যাপক চাপ ছিল। এমনকি বিশেষায়িত জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়তে থাকে।

হাসপাতালগুলো থেকে বিচ্ছিন্নভাবে মোট রোগী ও মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোট কতজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং মোট কতজনের মৃত্যু হলো, তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।

কোটা সংস্কার আন্দোলন গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চললেও সংঘর্ষ শুরু হয় গত ১৬ জুলাই থেকে। এরপর সেটা ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। এর প্রেক্ষিতে গত ১৭ জুলাই সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়, ১৯ জুলাই রাত ১২টা থেকে দেশে কারফিউ জারি হয়, মাঠে নামে সেনাবাহিনী।

বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছে, প্রথমদিকে লাঠির আঘাতে আহত রোগীরা এলেও এরপর থেকে গুলিতেই আহত রোগী বেশি এসেছে হাসপাতালে, মৃত্যুও হয়েছে গুলির আঘাতেই।

সরেজমিন ১০১-১০৪ নম্বর ওয়ার্ড

ঢাকা মেডিকেলের ১০১ ও ১০৪ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, সেখানে কেবলই গুলিতে আহত রোগী।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক ও নার্স জানান, জরুরি বিভাগের তিনটি ওয়ার্ডে শতাধিক রোগী এসেছে গুলিবিদ্ধ অবস্থায়, সেখানে রয়েছে শিশুও।

হাসপাতালে বিছানা না পেয়ে মেঝে-বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন রোগীরা। গুলিবিদ্ধ পা নিয়ে ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের মেঝেতে শুয়ে রয়েছে ১০ বছরের শিশু আলিফ।

আলিফের মা আসমা বেগম বলেন, “ছেলে খেলতে খেলতে রাস্তায় চলে গেছিল, পরে ফোন পাই তার গুলি লাগছে।”

উত্তরার আজিমপুর এলাকার একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করেন ২০ বছরের সোহাগ। গত শুক্রবার দুপুরে দোকান বন্ধ করে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। সোহাগ জানান, রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় হঠাৎ হেলিকপ্টার থেকে ছোঁড়া একটি গুলি তার পেটে এসে লাগে।

লাশ কাটা ঘরে হৃদয়, মা জানেন ছেলে ঘুমাচ্ছে

মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র হৃদয় চন্দ্র তরুয়ার। এরপর তার মরদেহ নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে।

দুপুর ৩টায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনদের ভিড়। হৃদয়ের মরদেহ যখন লাশ কাটা ঘরে, তখন তার মা পাশের চত্বরেই একটা গাড়িতে। তাকে বলা হয়েছে, তার ছেলেকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে, নিজ জেলা পটুয়াখালীর হাসপাতালে তার চিকিৎসা হবে।

মর্গে গিয়ে দেখা যায়, হৃদয় চন্দ্র তরুয়ার সহপাঠী বন্ধুরা বসে রয়েছেন মর্গের সামনেই। বাবা রতন চন্দ্র তরুয়া তখন দৌড়াদৌড়ি করছেন ছেলের এই কাগজ সেই কাগজ নিয়ে।

এক সহপাঠীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাসনিয়া নামের একজন জানালেন, তিনি হৃদয়ের বন্ধুর চাইতে বরং বোন বেশি। হৃদয়রা এক ভাই এক বোন। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর বন্ধুত্ব ছাপিয়ে তাসনিয়া আর হৃদয়ের সর্ম্পকটা হয়ে ওঠে ভাই-বোনের।

তাসনিয়া সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান হৃদয়। টিউশনি করে লেখাপড়াসহ নিজের খরচ চালাতেন, বাড়িতেও টাকা দিতেন। বন্ধুরা যখন কোনও জায়গায় খেতে যেতাম, তখন হৃদয় টিউশনিতে যেত। বাজে খরচ করতো না সে। বরং সেই টাকা বাড়িতে পাঠাতো।

“হৃদয় বলতো, আমি আমার পরিবারকে তুলবো, বাবা অনেক কষ্ট করে, বাবার কষ্ট দূর করতে হলে আমাকে লেখাপড়া শেষ করতে হবে, ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। মা অনেক কষ্ট করেছে জীবনভর, মায়ের কষ্ট দূর করতে হবে।”

“কিন্তু সারাজীবনের জন্য যে মাকে কষ্ট দিয়ে চলে গেল হৃদয়, এই কষ্ট এখন কীভাবে দূর হবে?”  

তাসনিয়া বলেন, “গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে গুলিবিদ্ধ হয় হৃদয়। ও টিউশনি করে ফিরছিল, কিন্তু মাঝপথে বন্ধুদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ দেখতে পায়, বন্ধুদের দেখতে পেয়ে সে নিজেও যায়। এরপর গুলি লাগে তার।

“গুলি লাগার পর প্রথম চট্টগ্রামের এক বেসরকারি হাসপাতালে, এরপর ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তাকে। হৃদয়ের শ্বাসনালী, খাদ্যনালীতে গুলির আঘাত ছিল, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফুসফুস। সব কিছু মিলিয়ে কোনও একক হাসপাতালে চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছিল না। ব্যক্ষব্যাধী থেকে নিউরো সায়েন্সেস এবং সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেলে আনা হয় তাকে। কিন্তু এতকিছু করার পরও বাঁচানো গেল না হৃদয়কে। মঙ্গলবার ভোরে মৃত্যু হয় তার।”

হৃদয়ের বাবা রতন চন্দ্র তরুয়া পেশায় কাঠমিস্ত্রি। সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “বড় আশা ছিল ছেলেটা সংসারের হাল ধরবে।

ছেলে কইতো, বাবা আর কয়টা দিন, লেখাপড়া প্রায় শেষ। তোমার সব ঋণের বোঝা আমি হালকা কইরে দেব।

“কিন্তু দুনিয়ার সবচেয়ে ভারী বোঝা আইজ আমার কান্ধে। এই বোঝা আমার মৃত্যু পর্যন্ত বইতে হইবো, কোনোদিন কি হালকা হবে, বলেন?”

মর্গ থেকে সব কাজ শেষ হওয়ার পর লাশবাহী ফ্রিজারে করে হৃদয়কে নিয়ে তারা গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর দিকে রওনা হয়।

ছয়জন এখনও অজানা

গত বৃহস্পতিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত অবস্থায় আসা ছয়জনের লাশ রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। তাদের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআিইড) তাদের আঙুলের ছাপ নিচ্ছেন।

নাম না জানিয়ে একজন কর্মকর্তা সেখানে বলেন, “আমরা পাঁচজনের আঙুলের ছাপ নিতে পেরেছি, একজনের শরীরের চামড়া পুড়ে যাওয়ায় ছাপ নেওয়া সম্ভব হয়নি।”

এ দায়িত্বে থাকা একজন জানালেন, “ইন্টারনেট না থাকার কারণে লাশ শনাক্তে দেরি হচ্ছে, আমরা ম্যানুয়ালি আঙুলের ছাপ নিচ্ছি, ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া গেলে শনাক্ত হবে সবার পরিচয়। সে পর্যন্ত মর্গেই লাশ রাখা হবে।”

জীবিত বা মৃত রাসেলের খোঁজে লাবণী

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে দেখা মেলে তরুণী লাবণীর। কালো বোরকা আর হলুদ সুতি ওড়নায় মুখ ঢেকে চাপা কান্নারত ছিলেন তিনি। স্বামী রাসেলের খোঁজে এখানে এসেছেন। মর্গে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য তাকে মর্গের ভেতরে থাকা অজ্ঞাতদের দেখাতে তাকে ডেকে নিলেন। কিন্তু লাবণী ভেতর থেকে ফিরে এসে বলেন, “এখানে ও নাই। আর কোথায় গেলে তারে পাব, কোথায় খুঁজব?”

লাবনী ও রাসেল দম্পতি থাকেন শনির আখড়ায়। প্রেসে কাজ করেন রাসেল। ছয়দিন ধরে রাসেল নিখোঁজ। লাবণী জানান, ভাসুরের মেয়ে তাকে জানিয়েছেন, মোবাইলে একটা কল আসে, এরপর সে চলে যায়।

“সেদিন দুপুর বেলায় ভাত খেতে চাইলো, ভাত বেড়ে দিয়ে আমি ছাদে গেলাম কাপড় আনতে। ঘরে ঢুইকা দেখি ভাত ভাতের মতো পইড়া আছে, তিনি ঘরে নাই। এরপর থেকে তার আর খোঁজ নাই।”

স্বামীর খোঁজে বিভিন্ন থানা, হাসপাতাল, মর্গে গেছেন তবে, এখন পর্যন্ত রাসেলকে পাননি লাবণী। তিনি বলেন, “যাত্রাবাড়ি থানার কোনও কর্মকর্তা নিখোঁজের বিষয়ে কথা বলেননি, মুগদা হাসপাতালের মর্গে নাই। ঢাকা মেডিকেলের ভেতরে গেছি, কোথাও নাই, এখানেও দেখলাম, নাই।

“বাসার গেইটের একটা চাবি থাকে রাসেলের কাছে। দেরি হলে সে চাবি নিয়ে যায়, সেদিন তালাও দেয় নাই, চাবিও নেয় নাই। তাইলে সে কই গেল?”

অন্য হাসপাতালেও রোগীর ভিড়

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও রোগীর চাপ রয়েছে।

হাসপাতালের পরিচালক শফিউর রহমান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, এ হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ৫১৮ জন চিকিৎসা নিয়েছেন, আর বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ৬০ থেকে ৬৫ জনের মতো। মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। তবে সব মৃত্যুই ব্রট ডেড। অর্থাৎ হাসপাতালে আনার আগেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।

শফিউর রহমান বলেন, মারা যাওয়া এবং আহত রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ। তবে ১৩ জনের ময়নাতদন্ত হয়নি।

কেন হয়নি—প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সুযোগ ছিল না।”

ঢাকার ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার ১৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়। আর পরের দিন ভর্তি হয় ১০ জন, তাদের মধ্যে দুইজনের মৃত্যু হয়।

বেসরকারি হাসপাতাল

বৃহস্পতিবার সকালের দিকে উত্তরাতে শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে আহত অনেক শিক্ষার্থীকে নেওয়া হয় উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ খান সকাল সন্ধ্যাকে জানান, এখন পর্যন্ত এই হাসপাতালে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এখানে চিকিৎসা নিয়েছে দুই শতাধিক রোগী, বর্তমানে ভর্তি রয়েছে একজন।

সাব্বির আহমেদ বলেন, “রোগী এবং মৃত্যু হওয়াদের মধ্যে গুলিতে আহতই বেশি।”

রাজধানীর বাড্ডা এলাকার বেসরকারি একটি হাসপাতালের এক চিকিৎসক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, গত বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার ৩০টি মৃতদেহ আনা হয়েছে হাসপাতালটিতে। বৃহস্পতিবার পাঁচজন, শুক্রবার ২০ জন, আর শনিবার পাঁচজনের মৃতদেহ আনা হয়েছে। হাসপাতালে আনার আগেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।  

আর এই হাসপাতালে প্রায় সাড়ে পাঁচশো রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, বর্তমানে কেউ ভর্তি নেই বলেও জানান তিনি।

চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন গুলিবিদ্ধ। আর এই হাসপাতালে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন ২০৮ জন, আর বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৬ জন। বেশিরভাগই গুলিতে আহত। এরপর রয়েছে লাঠির আঘাত, টিয়ার শেলের গ্যাসের কারণে।

আহত সহস্রাধিক পুলিশ

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশের সহস্রাধিক সদস্য আহত হয়েছেন। আহত পুলিশ সদস্যদের বেশিরভাগ চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সোমবার রাতে ঢাকার কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি জানান, গত কয়েকদিনের সহিংসতায় এক হাজার ১১৭ জন পুলিশ আহত হয়েছেন। নিহত হয়েছেন তিনজন। 

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত