কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় নিরাপরাধ কেউ যেন গ্রেপ্তার না হয়, সেদিকে চোখ রাখতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান রেখেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় জড়িত নয় এমন নিরপরাধী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার এড়াতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগ আয়োজিত যৌথসভা শুরুর আগে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর দক্ষিণ ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সকল অঙ্গ-সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিয়ে এ যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডাকা এক যৌথ সভার শুরুতে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “কেউ যেনো অতি উৎসাহি হয়ে গ্রেপ্তারের সংখ্যা বাড়াতে গিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তি যেনো গ্রেপ্তার না হয়, এটা যেনো কোন অবস্থাতেই না হয়। সে ব্যাপারে আমরা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আমরা আকর্ষণ করছি।”
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ভিডিও ফুটেজ দেখে অপরাধীদের চিহ্নিত করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কোন নিরপরাধ ব্যক্তিকে আমাদের জানামতে আটক করা হচ্ছে না। দ্বিতীয় কথা সাধারণ শিক্ষার্থীগণ যেনো হয়রানির শিকার না হন সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে।”
কাদের বলেন, “আমরা বলতে চাই, নিরপরাধ ব্যক্তিগণ গণ গ্রেপ্তারের নামে যেনো অপরাধী সাব্যস্ত না হয়, গ্রেপ্তার না হয় সে ব্যাপারে আমাদেরও সিদ্ধান্ত রয়েছে।”
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “বিএনপি মহাসচিব বেশ কিছু দিন ধরে বলছে অসহায়, নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের আটক করছে, এই ব্যাপারে সরকারের নীতি সমালোচনা করতে গিয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন।”
মির্জা ফখরুলকে প্রশ্ন করে কাদের বলেন, “তার কাছে সবাই নিরপরাধ, সবাই অসহায় তাহলে প্রশ্ন এই ধ্বংসযজ্ঞ চালালো কারা। কারা অগ্নিসংযোগ করলো, কারা রাষ্ট্রের সম্পদ ভস্মিভূত করলো, বাংলাদেশে যে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে এটা কারা করেছে?”
আজকে কথা কথায় সরকার ও আওয়ামী লীগের দোষারোপ করা হয় উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, “আমি পরিষ্কার বলতে চাই এই ঘটনা প্রবাহে আমরা আওয়ামী লীগের কর্মীরা আক্রান্ত, আমরা আক্রমণকারী ছিলাম না এখন অপবাধ দেয়া হচ্ছে আক্রমণকারী বলে। আমরা তো আক্রমণকারী ছিলাম না, আমাদের হাতে অস্ত্র ছিলো না।”
তিনি বলেন, “আজকে অনেকেই বলে পার্টির লোকজন কম ছিলো, অনুপস্থিত ছিলো, আমি বলতে চাই, আমরা তো আমাদের লোকজনকে অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করে কোন অবস্থান নিতে বলিনি। আমরা তো আক্রান্ত হয়েছি। নিরস্ত্ররা সশস্ত্র ব্যক্তিদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।”
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, “আজকে সেতুভবন, বিটিভি ভবন, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, হানিফ ফ্লাইওভারের দিকে তাকান, ফখরুল সাহেব এইগুলো কি আমরা করেছি?”
কারা এই নারকীয় বর্বরতার আশ্রয় নিয়েছে প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, “তাদের সঙ্গে আপনি জাতীয় ঐক্য করছেন। স্বাধীনতায় যারা বিশ্বাস করে না। আজকে নরসিংদী কারাগার থেকে অস্ত্রাগারের গুলি, অস্ত্র কারা নিয়ে গেছে? কোন জঙ্গী শক্তি? ফখরুল সাহেব আপনাদের বন্ধু, আপনাদের দোসর সেজন্য আজকে ইগনোর করছেন।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, “সারা দেশ দেখেছেন, জাতি দেখেছেন কি করেছেন আপনারা নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, গাজিপুর, চট্টগ্রামে। ছয়তলা ভবন থেকে কিভাবে ফেলে দেয়া হলো আমাদের কর্মীদের, হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এই সবে কি ফখরুল সাহেব আপনার চোখ পড়েনি? ছাত্র আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে আন্দোলনকে কারা হাইজ্যাক করেছে? কারা শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।”
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত করে কারা সরকার পতন আন্দোলনে রূপ দেয়ার অপচেষ্টা করেছ প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “শুনেন ফখরুল সাহেব, সব তথ্যই আমাদের কাছে আছে। কোত্থেকে নির্দেশ এসেছে, উস্কানি এসেছে। কারা কোথায় কোথায় বৈঠক করেছেন, অর্থ যুগিয়েছে, কোন কৌশলে অর্থ পাঠিয়েছে সবই আমরা জানি। সকল ষড়যন্ত্রই এখন জাতির কাছে দিবালোকে মত স্পষ্ট। আজকে আবোল তাবোল বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ নাই।”
জামায়াত নিষিদ্ধে শীঘ্রই সরকারের পদক্ষেপ : জামায়াত নিষিদ্ধের জন্য আইনি বিষয়টি ভালভাবে দেখে সরকার শীঘ্রই পদক্ষেপ নিবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “যাতে কোন ফাক ফোকর দিয়ে এই অপশক্তি স্বাধীন বাংলাদেশে আর কোন সুযোগ না পায়।”
১৪ দলের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে জামায়াত, শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সে প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, “অনেক দিন থেকেই সে দাবি করে আসছিলো অনেকে। জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, পরবর্তী গণজাগরণ মঞ্চ থেকেও এই দাবি জানানো হয়েছিলো। সর্বোচ্চ আদালতের রায়েও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়।”
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে কাদের বলেন, “হিটলারের নাৎসি পার্টি জার্মানিতে রাজনীতি করতে পারে না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে জামায়াত যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে রায় আছে।”
কোটা সংস্কারে নিহতদের স্মরণ করে পালন করা শোক দিবস নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আজকের দিনটি ঠিক রাষ্ট্রীয় শোক দিবস নয়, এটা সরকারিভাবে শোক পালন জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় নয়।”