পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) দ্বন্দ্বে ভুগছেন বাংলাদেশের গ্রাম এলাকার কোটি মানুষ। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখায় তাদের যেমন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে, তেমনি হচ্ছে মামলা। গ্রেপ্তারও হতে হচ্ছে পবিসের অনেক কর্মকর্তাকে।
সরকারি সংস্থা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি দেশের গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। আর দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে ঘরে ঘরে নিরবচ্ছিন্ন, সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে আরইবি।
নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরেই আরইবি ও পবিসের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। সবশেষ নিজেদের দাবি আদায়ে গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন শুরু করেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা। এতে তাদের দ্বন্দ্ব নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা।
দেশের সব পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সঙ্গে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের একীভূতকরণ এবং চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মীদের চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যেই গত বুধবার পবিসের ২০ জিএম, ডিজিএম ও এজিএমের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপ ছাড়াও নির্দেশনা অবজ্ঞাসহ কয়েকটি অভিযোগ এনে চাকরি অবসানের আদেশ দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা আরইবি।
পরদিন বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগে পবিসের ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে খিলক্ষেত থানায় আলাদা দুটি মামলা করেন আরইবির খিলক্ষেত থানার পরিচালক প্রশাসন (আইন শাখার) আরশাদ হোসেন। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের অভিযোগ আনা হয়।
এই দুই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে যায় পবিস। দেশের অর্ধেকের বেশি জেলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন গ্রাহকরা।
এ বিষয়ে পবিসের এক কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “নিয়োগ, বদলি, ক্রয়-বিক্রয়সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আরইবির সঙ্গে পবিসের দ্বন্দ্ব নতুন নয়। গত জানুয়ারিতে পবিসের কর্মীরা বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে সেই দ্বন্দ্বই প্রকাশ্যে আসে। এরপর থেকেই স্মারকলিপি দেওয়া, অবস্থানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন পবিস কর্মীরা।
“বিপরীতে আন্দোলনে অংশগ্রহণকে অসদাচরণ বলে পবিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি, অন্য দপ্তরে সংযুক্ত করাসহ বিভিন্নভাবে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করছিল আরইবি। এরই মধ্যে সরকার বদল হয়েছে। কিন্তু দ্বন্দ্বের অবসান ঘটেনি। উল্টো বিদ্যুৎ বন্ধ করে গ্রাহক হয়রানি, মামলা, গ্রেপ্তারের মতো ঘটনায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।”
ওই কর্মী আরও বলেন, “পবিস গ্রামের ১৪ কোটি মানুষের কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। অথচ সারাদেশে থাকা ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিরি জন্য নিয়োগ, বদলি, খুঁটি, ক্যাবল, মিটার কেনাসহ সব প্রশাসনিক কাজ করে আরইবি। কথায় কথায় বদলিসহ বিভিন্নভাবে পবিসের কর্মীদের তটস্থও রাখে তারা।
“তাছাড়া পবিসের কর্মীর নিয়োগ অস্থায়ী এবং চুক্তিভিত্তিক। মূল ব্যাপার হলো আরইবি পবিসের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সেজন্য তারা নানা ধরনের অন্যায়ও করার সুযোগ পায়। এ অবস্থায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের যৌক্তিক দাবি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানকে যেকোনোভাবে দমন করতে চায় তারা।”
পবিসের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ও কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মাঠ পর্যায়ে কাজ না করেও পবিসের ওপর খবরদারি করেন, যার কারণে তৈরি হয়েছে বিরাট বৈষম্য। আর পবিসের এই আন্দোলন শুরু হয়েছে সাবেক সরকারের আমলেই, তাই এটিকে কোনও সরকারবিরোধী আন্দোলন বলতেও নারাজ সংশ্লিষ্টরা।
পল্লী বিদ্যুতের আরেক কর্মী বলেন, “আন্দোলনটা মূলত গ্রাহক সেবার মান উন্নয়নের জন্য। পল্লী বিদ্যুতের নামে যে এত বদনাম তার জন্য কারা দায়ী এবং সেই বদনাম থেকে কীভাবে বের হয়ে আসা যায়, সেটাই আন্দোলনের লক্ষ্য। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বেতন বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করছে না। জনগণ যেন টেকসই, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা পায়, ভালো মিটার, তার, ট্রান্সফরমার, যন্ত্রপাতি পায়, সেজন্যই এই আন্দোলন।”
পবিসের কর্মীদের দাবি পূরণ হলে দেশে হাজার হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হবে, গ্রাহকরা ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাবেন, ঝড়-বৃষ্টিতেও বিদ্যুৎ যাবে না; বলছেন আন্দোলন সংশ্লিষ্টরা।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কয়েকজন কর্মী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, আরইবি মাঠ পর্যায়ে কোনও কাজ না করলেও গ্রাহক সেবার লক্ষ্যে ট্রান্সফর্মার, মিটার, খুঁটি, ইনসুলেটরসহ সব মালামাল কেনে। কিন্তু তাদের কেনা এসব সামগ্রী নিম্নমানের হওয়ায় হালকা ঝড়-বৃষ্টি বা বাতাসেই নষ্ট হয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অথচ বিদ্যুৎ চলে গেলে গ্রাহকরা ক্ষিপ্ত হন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর।
তারা বলেন, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কমিশন বাণিজ্য করে নিম্নমানের মিটার কেনে বলে অভিযোগ রয়েছে, যা সংযোগ দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়। সেখানেও গ্রাহকের রোষের শিকার হন পবিসের কর্মীরা।
আন্দোলনের শুরু থেকে বর্তমান
গত ২৮ জানুয়ারি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর কর্মকর্তাদের পদবি পরিবর্তনসহ পদমর্যাদা নির্ধারণের জন্য ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম ও ডিজিএমের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
সেখানে বলা হয়, “জেলা/ উপজেলা পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর/ অফিস হচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয়গুলো। সরকারি অন্যান্য দপ্তরের সঙ্গে সার্বক্ষণিক সমন্বয় করে প্রতিনিয়ত কাজ করতে হয়। সরকারি অন্যান্য দপ্তর এমনকি বিদ্যুৎ বিভাগের অন্যান্য দপ্তরেও এজিএস/ ডিজিএম/ জিএম নামে কোনও পদ নেই। যার কারণে প্রশাসনিকভাবে দাপ্তরিক কাজে অনেক জটিলতা তৈরি হয়।
“এর ফলে পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমে আমাদের অন্যায় সরকারি দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। তাই আমরা বাংলাদেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সকল এজিএম ও ডিডিএমগণ কর্মক্ষেত্রে আমাদের পদবি পরিবর্তন করে পদমর্যাদা পুনর্গঠনের জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।”
স্মারকলিপিতে কর্মকর্তাদের গ্রেড উন্নীত করার দাবিও জানানো হয়।
এই স্মারকলিপি দেওয়ার পরদিনই অসাদাচরণের অভিযোগে ভোলা পবিসের এজিএম (আইটি) এসকে সাকিল আহমেদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় আরইবি। এই ঘটনায় ওইদিনই একটি প্রতিবাদলিপি দেন পবিসের কর্মীরা।
সেখানে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রত্যাহার ও পরবর্তী সময়ে কোনও কর্মকর্তাকে হয়রানি না করার অনুরোধ জানানো হয়। তা না হলে কর্মবিরতিসহ বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য মাঠে নামার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
এরপর ৩১ জানুয়ারি আরইবি এক অফিস আদেশ জারি করে। যেখানে বলা হয়, একটি স্বার্থান্বেষী মহল বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাফল্যকে ম্লান করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কিছু কর্মকর্তা/কর্মচারী এই স্বার্থান্বেষী মহলের অপচেষ্টায় শামিল হয়েছে, যা আরইবির নজরে এসেছে।
চাকরিবিধির পরিপন্থী যেকোনো কাজ থেকে বিরত থাককে পবিসের কর্মীদের নির্দেশনাও দেয় আরইবি।
এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি আরেক আদেশে এসকে সাকিল আহমেদসহ পবিসের দুই কর্মকর্তাকে অন্যত্র সংযুক্ত করা হয়। ২৯ এপ্রিল এসকে সাকিল আহমেদ ও ভোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী জেনারেল ম্যানেজার সুকদেব বাড়ৈকে চাকরি থেকে সাময়কি বরখাস্ত করে আরইবি। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে অনত্র বদলি কিংবা সংযুক্ত করে পদায়ন করা হয়।
সেদিনই পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে বৈষম্য নিরসনসহ কয়েকটি দাবিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বরাবর আরেকটি স্মারকলিপি দেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মচারীরা।
এরপর ২ মে পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে নেওয়া যেকোনো বেআইনি কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সমিতিকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড।
যার ধারাবাহিকতায় ৪ মে কর্মস্থল থেকে মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তৎকালীন এজিএম (ইঅ্যান্ডসি) রাজন কুমার দাসের ডেস্কটপ কম্পিউটার নিয়ে যায় আরইবি।
এ ঘটনায় মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রাজন। জিডিতে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের মনিটরিং ও ব্যবস্থাপনা পরিচালন (কেন্দ্রীয় অঞ্চল) পরিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) একে এম এসকান্দার আলীর (৪৮) নাম উল্লেখ করেন তিনি।
এই জিডি করার দুদিন পরই গত ৭ মে রাজন কুমার দাসকে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে সংযুক্ত করা হয়। একই দিন কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি- ১ এর তৎকালীন ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার দীপক কুমার সিংহসহ আরও কয়েকজনকে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে সংযুক্ত করা হয়।
এরপর ৯ মে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দেওয়া আরেকটি অফিস আদেশে বলা হয়, “সমিতির প্রধান হিসেবে সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার/জেনারেল ম্যানেজার তার অধিক্ষেত্রে সুষ্ঠু কর্ম পরিবেশ তথা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখাসহ গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। তার অধিক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের কর্মবিরতি, উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড ও বক্তব্য প্রদান, চাঁদা আদায়, জোরপূর্বক কাজে বাধা দান ইত্যাদি বেআইনি কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে তিনি অনতিবিলম্বে স্থানীয় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আইন-২০১০ এর ধারা ৩০ অনুযায়ী ‘পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা’ একটি জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
“এ অবস্থায়, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিভুক্ত এলাকায় যেকোনো ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ডে সহায়তা ও প্ররোচনায় দায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সিনিয়র জিএম/জিএম অনতিবিলম্বে বিভাগীয় এবং ফৌজদারী অপরাধের ক্ষেত্রে স্থানীয় থানায় ফৌজদারী মামলা দায়ের করবেন। উক্ত মামলার বিস্তারিত তথ্যাদি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে যত দ্রুত সম্ভব লিখিতভাবে অবহিত করবেন।”
ওই আদেশের পরদিন ১০ মে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন আরইবি চেয়ারম্যান অজয় কুমার চক্রবর্তীসহ ৬ কর্মকর্তা। ওই সভায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা/কর্মচারীরা সাত কর্মদিবসের মধ্যে তাদের দাবিগুলো লিখিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আরইবি সদস্যের (সমিতি ব্যবস্থাপনা) কাছে পাঠাবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। একইসঙ্গে পরবর্তী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে আরেকটি সভা করার সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর ২৩ মে পবিসের কর্মচারীদের পক্ষে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে লিখিতভাবে নিজেদের দাবিগুলো তুলে ধরেন প্রকৌশলী রাজন কুমার দাস।
পরে গত ১২ জুন ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পক্ষে দেওয়া এক জরুরি বার্তায় প্রকৌশলী রাজন কুমার দাস জানান, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ কার্যদিবস শেষ হলেও বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ বিভাগকে অবহিত না করে গোপনে মিটিং করেছে, যা বিদ্যুৎ বিভাগের গত ১০ মে সভার লিখিত সিদ্ধান্তের সাথে সাংঘর্ষিক এবং বিদ্যুৎ বিভাগের আদেশ অমান্য করা হয়েছে। চলমান পরিস্থিতি সমাধানের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ তথা প্রধানমন্ত্রী ব্যতীত পল্লী বিদুতায়ন বোর্ডের কোনও সিদ্ধান্তের প্রতি দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা/কর্মচারীদের আস্থা নেই বলেও জানান তিনি।
এরপর গত ২৪ জুন একটি প্রতিবাদলিপি দেন তারা। পরে ৩০ জুন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও পাঠানো হয়, যেখানে দুই দফা দাবিতে ১ জুলাই থেকে কর্মবিরতি ঘোষণা করা হয় (বিদ্যুৎ সরবরাহ ও জরুরি গ্রাহক সেবা সচল রেখে)।
এই ঘটনার পর ৭ জুলাই পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সভা ডাকলেও তাতে অংশ নেননি সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরপর আরও একাধিকবার সভা ডাকা হলেও বিভিন্ন কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি। এরইমধ্যে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়ে যায়।
যা বলছে দু’পক্ষ
বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন আন্দোলনরত পবিসের কর্মকর্তারা। একইসঙ্গে শৃঙ্খলা ফেরাতে মামলা প্রত্যাহার ও চাকরিচ্যুতদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়াসহ চার দফা দাবি জানিয়েছেন তারা।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভুক্তভোগীদের পরিবার ও সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীর ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা পবিস-১ এর জুনিয়র প্রকৌশলী (আইটি) তামজিদুল ইসলাম বলেন, “বিদ্যুৎ সরবরাহ শাটডাউন করার বিষয়টি পরিকল্পিত ছিল না। ওইদিন সকালে নেত্রকোণা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাকে আটক করলে ক্ষুব্ধ অফিসাররা স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়। এরপর মামলা ও ২০ জন কর্মকর্তাকে অব্যাহতির খবর ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। ক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্থানীয়ভাবে সমিতির কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। আমরা এ জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।”
আরইবি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছে এমন অভিযোগ এনে পল্লী বিদ্যুৎ খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে মামলা প্রত্যাহার করে ২৪ জনের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া ও স্ট্যান্ড রিলিজ এবং সংযুক্ত দুইজনকে পদায়ন করার দাবি জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। আমরা আশা করছি, সেখানে সমঝোতা হবে। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলোর সমাধান করা হবে। কিন্তু এরই মধ্যে কর্মসূচি প্রত্যাহার করার পরেও আরইবি কর্তৃক সংস্থার চাকরিবিধির বাইরে গিয়ে কোনো প্রকার তদন্ত, কারণ দর্শানো বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং হয়রানি করা দুঃখজনক। বর্তমানেও গ্রেপ্তার আতঙ্কে আমাদের অনেক কর্মকর্তা স্টেশনে অবস্থান করতে পারছেন না। এতে করে আবারও গ্রাহক ভোগান্তির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মূলত আরইবির স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের কারণেই এই সংকট তৈরি হয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ডিজিএম আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, “শহর ও গ্রামের বিদ্যুৎ বৈষম্য নিরসন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও উন্নত গ্রাহক সেবার জন্য পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সংস্কার প্রয়োজন। সরকারের কাছে আবেদন, প্রকৃত সত্য আড়াল করে কারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে, তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনুন। নিরীহ পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপদ ও বৈষম্যহীন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করুন।”
সরকার কী করছে
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ মাহফুজ আলম গত বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোকজনের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তাদেরকে আলোচনায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন। সেইসাথে, তিনি সমিতির কর্মীদের সমস্যার সমাধান এবং আটকদের ছেড়ে দেওয়া আশ্বাস দিয়েছেন।
মাহফুজ বলেন, “তাদের অধিকাংশ ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও বিদ্যুতায়ন বোর্ডের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব হচ্ছে। আশা করছি ন্যায্যতার ভিত্তিতে যতটুকু সম্ভব প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের পক্ষ থেকে এটা সমাধান করা হবে। আগামী সপ্তাহে আমরা তাদের সঙ্গে বসব।”