বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুত্ববাদী গণতন্ত্রে উত্তরণের পরিবেশ তৈরি করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার মতে, বহুত্ববাদী গণতন্ত্রের পরিবেশ তৈরি হলে তা অবাধ নির্বাচনের পথ তৈরি করবে।
শনিবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘থার্ড ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট-২০২৪’ এর ইনঅগারাল লিডার্স অধিবেশনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বহুত্ববাদী গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং একটি পরিবেশ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যার মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।”
ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি এই সম্মেলনে যুক্ত হন ড. ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে শপথ নেওয়ার পর এবারই প্রথম কোনও বহুপক্ষীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন তিনি। রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান পর্যায়ে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অধিবেশনের সঞ্চালনা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। সেদিনই জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান।
৮ আগস্ট সেই সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যার সঙ্গে রয়েছেন আরও ২০ জন।
বাংলাদেশের নতুন সরকারের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম কোনও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিয়ে টেকসই ভবিষ্যত বিনির্মাণ ও নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে গ্লোবাল সাউথের কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে তরুণ ও ছাত্রদের রাখার আহ্বান জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, “তরুণরা নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারেও উপদেষ্টা হিসেবে স্থান পেয়েছেন দুই তরুণ। যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব থেকে সরকার পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছেছেন।
গ্লোবাল সাউথের অন্তর্ভূক্ত দেশগুলো আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের। মূলত এসব দেশে মাথাপিছু আয় উন্নত দেশের তুলনায় কম।
তিনি গ্লোবাল সাউথ নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমাদের কৌশলগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে অবশ্যই তরুণ এবং ছাত্রদের রাখতে হবে, যারা গ্লোবাল সাউথের জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশ। আমাদের জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ তরুণ এবং তারা সমাজের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ।”
বাংলাদেশের তরুণদের প্রশংসা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বীর ছাত্রদের নেতৃত্বে বাংলাদেশে গত ৫ আগস্ট দ্বিতীয় বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে। আর জনগণের যোগদানের মাধ্যমে এই বিপ্লব গণঅভ্যূত্থানে রূপ নেয়। যার ফলস্বরূপ গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে।”
বাংলাদেশের তরুণরা বৈপ্লবিক পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে আন্দোলন করেছিল এবং তাদের সেই আকাঙ্ক্ষা দেশবাসীকে প্রভাবিত করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এখন গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে অর্থবহ সংস্কার জরুরি। যার মাধ্যমে ভঙ্গুর হয়ে পড়া রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে পুনরুদ্ধার করা হবে।”
গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশে নানা পরিবর্তনের কথা তুলে ধরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্লোবাল সাউথ নেতাদের ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান।
তিনি বলেন, “তরুণ ছাত্র এবং ১২-১৩ বছর বয়সী শিশুরা ৪০০ বছরের শহরের দেয়ালে একটি নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ছবি আঁকছে। এর জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা নির্দেশনা তাদের নেই। কারও পক্ষ থেকে বাজেট সমর্থনও নেই।
এটি দ্বিতীয় বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষার প্রতি তাদের আবেগ এবং অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।”
ড. ইউনূস বলেন, “বিশ্বব্যাপী তরুণরা আলাদা। তারা সক্ষম এবং প্রযুক্তিগতভাবে আগের প্রজন্মের তুলনায় অনেক এগিয়ে। তারা সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। তারা উদ্যোক্তা। কিন্তু তারা চাকরি চায়, কারণ দেশে দেশে এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, যা তাদেরকে চাকরির জন্য প্রস্তুত করে। অথচ সকল মানুষের মধ্যে সৃজনশীলতা রয়েছে।”
কেবলমাত্র চাকরিপ্রার্থী তৈরি করে এমন শিক্ষা ও আর্থিক ব্যবস্থা নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
এবারের গ্লোবাল সাউথ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হলো, ‘অ্যান এমপাওয়ারড গ্লোবাল সাউথ ফর এ সাসটেইনেবল ফিউচার’।