Beta
মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে নয়, সংস্কারে চোখ দলগুলোর

ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পরদিন জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে ছিল এমন চিত্র। সকাল সন্ধ্যা
ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পরদিন জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে ছিল এমন চিত্র। সকাল সন্ধ্যা
Picture of খাইরুল বাশার

খাইরুল বাশার

বাংলাদেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর। গত ৭ জানুয়ারির ‘প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের’ মাধ্যমে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তবে ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে দলটির। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সাংবিধানিক নিয়মের বাইরে গিয়ে গঠিত এ সরকারের মেয়াদ কতদিন তা ঠিক হয়নি। অন্তর্বর্তী এই সরকার নির্বাচন কবে করবে, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাওয়ার মধ্যে সে বিষয়টি গত ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নিজেই তোলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।

‘ফ্যাসিবাদী শাসনের’ অবশেষ থেকে দেশকে মুক্ত করতে সংস্কারের জন্য সময় চেয়ে রাতারাতি পরিবর্তন প্রত্যাশা না করে সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তিনি। নির্বাচনের দিনক্ষণ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু না বলে ড. ইউনূস জানান, দেশবাসী যতদিন চাইবে, ততদিনই ক্ষমতায় থাকবে তার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার একটি রূপরেখা তুলে ধরেন। ব্যাংক খাতে সংস্কার, পুলিশ কমিশন গঠন, ন্যায়পাল নিয়োগসহ নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পূর্ণ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা হবে।

এমন প্রেক্ষাপটে ঠিক কতদিন পর রাজনৈতিক দলগুলো সে সিদ্ধান্ত নেবে- সে বিষয়ে একমত না হলেও ‘সংস্কার’ প্রশ্নে একাট্টা সবাই। অন্তর্বর্তী সরকার যে ‘সংস্কার’ উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রস্তাবও আহ্বান করা হয়েছে।

এরই মাঝে ভোট নিয়ে বিএনপির আলোচনার দাবির মধ্যে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময়ও করছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। গত ১২ আগস্ট রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপিসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। শনিবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করার কথা রয়েছে তার।

বাংলাদেশের সংবিধানে এক সময় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছিল। সেই সরকারের দায়িত্ব ছিল তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করা। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর সংবিধান থেকে সেই ব্যবস্থা বাদ পড়ে।

কিন্তু এবার সরকারের বিদায় ও সংসদ বিলুপ্তির ঘটনাটি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কারণে হওয়ায় সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সংস্কার ও নির্বাচনের সময় নিয়ে দেশের নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছে সকাল সন্ধ্যা।

শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশ।
ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সংস্কারের জন্য বর্তমান সরকারকে কোনও কোনও দল দুই থেকে তিন বছর সময় দিতে চায়। কোনও কোনও দল বলছে, সংস্কার একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। এ জন্য ‘অনন্তকাল’ সময় দেওয়া যাবে না।

কোনও কোনও দল বলছে, যত দ্রুত সম্ভব বা ‘যৌক্তিক সময়ে’ নির্বাচন দিয়ে সরে দাঁড়াতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। সেই যৌক্তিক সময় নির্ধারণে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে দ্রুতই সংলাপে বসতে হবে সরকারকে।

নির্বাচনের আগে পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন বলেও মনে করছে কোনও কোনও দল। তবে নির্বাচনী সংস্কার, বিচার বিভাগ, প্রশাসনিক সংস্কারসহ প্রশাসনের দলীয়করণ বন্ধে সংবিধানে পরিবর্তন আনার পক্ষে দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে কোনও সাংবিধানিক সংকট নেই বলেও মনে করছে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। তাদের মতে, জনগণ যেহেতু ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু তাই এই সরকারের বৈধতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠার সুযোগ নেই।

নির্বাচনের সময় বিএনপি একা চাপিয়ে দেবে না : ফখরুল

নির্বাচনের সময় বিএনপি একা চাপিয়ে দেবে না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি মনে করেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন প্রয়োজন। সেই নির্বাচন যৌক্তিক সময়ে হতে হবে। সেই যৌক্তিক সময় কতদিনের- সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে দ্রুত সংলাপে বসা প্রয়োজন বর্তমান সরকারের।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রশাসনিক সংস্কার, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।

এক প্রশ্নের জবাবে সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। ছাত্র-জনতা সেখানে মূল ভূমিকা রেখেছে। তাদের ইচ্ছায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসেছেন। আমরা আগেও বলেছি, এর সমর্থন আমাদের আছে।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “নির্বাচন আমাদের অধিকার। ক্রান্তিলগ্নে একটি রাষ্ট্রের রি-বিল্ডাপের প্রয়োজন, তা জনগণের অধিকারকে প্রায়োরিটি দিয়ে। প্রশাসনিক যে ভঙ্গুর ব্যবস্থা ছিল, সেখানে বড় সংস্কার আনতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য সাধারণ জনজীবন ব্যাহত ছিল- এগুলোয় ফোকাস দিতে হবে।”

বর্তমান সরকারকে নির্বাচনের জন্য কতদিন সময় দিতে চান এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এই সময় নির্ধারণ তো একপাক্ষিক না। বিএনপি একা চাপিয়ে দেবে না। যৌক্তিক সময়ের কথা জানিয়েছি। আহ্বান করে আসছি। সেই যৌক্তিক সময় কতদিনের সে সিদ্ধান্ত নিতে সংলাপে বসতে হবে। আলোচনায় বসে, পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে আমাদের চাওয়া, তাদের চাওয়া, জনগণের চাওয়া- সমস্ত কিছু বিবেচনায় রেখে সময় নির্ধারণ করতে হবে।’’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সে জন্য বলেছি বর্তমান সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর অতি দ্রুত আলোচনা হওয়া দরকার। খুব জোর দিয়ে বলেছি, আজকেও বলছি। নইলে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়।”

অতীতে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার করেছে রাজনৈতিক সরকার আসার পর সেগুলো টেকেনি। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল বলেন, “যৌক্তিক সংস্কার যদি জনগণের কল্যাণে হয়, দেশের কল্যাণে হয়- তা বাদ দেওয়ার কারণ দেখি না।”

সংস্কারে ২-৩ বছর লাগলেও দেওয়া উচিত: চুন্নু

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তার দলের সমর্থন রয়েছে। সংস্কারের জন্য দুই থেকে তিন বছর সময় লাগলেও এ সরকারকে তা দেওয়া উচিত বলেন মনে করেন তিনি।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য রাজনীতিবিদদের দায় আছে মন্তব্য করে সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “গত দুই তিন দশকে যারাই ক্ষমতায় এসেছে- আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি সবার দায় আছে।”

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। ফাইল ছবি

নির্বাচন কমিশন সংস্কার প্রয়োজন জানিয়ে চুন্নু বলেন, “সিস্টেম পরিবর্তন করা দরকার। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি নিয়ে আসা দরকার। বিচার বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, বিচারপতি নিয়োগসহ প্রশাসনিক দলীয় নিয়োগ বন্ধ করতে হবে। সংবিধানের ১১৬, ৪৮ ও ৭০ অনুচ্ছেদে সংস্কার প্রয়োজন। পাশাপাশি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।”

বর্তমান সরকারকে নির্দলীয় উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, “দলীয় সরকার ক্ষমতায় আসলে তারা এই কাজগুলো করতে চাইবে না। বর্তমান সরকার ভালো কাজগুলো করতে পারবে। রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে আইন করে নিয়ে সংসদে তা পাস করানোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে।”

বর্তমান সরকারকে কতদিন সময় দিতে চান এমন প্রশ্নে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, “আমি একটা সত্য কথা বলি সংস্কারগুলো আসলে প্রয়োজন। যতটুকু সময় দরকার। সেটা নির্দিষ্ট করে বলতে পারবো না। ওনারা চিন্তা করে বলুক। তবে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগলেও সংস্কারের প্রয়োজনে তা দেওয়া উচিত।”

সংস্কারগুলো রাজনৈতিক সরকার আসলে টেকে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এক এগারোর সরকারের সঙ্গে এই সরকারের রাতদিন পার্থক্য। বর্তমান সরকারের পাওয়ার অনেক বেশি। এক এগারোর সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয় নাই।”

বর্তমান সরকারের বৈধতা নিয়ে সাংবিধানিক কোনও সংকট দেখছেন না এই রাজনীতিবিদ।

তিনি বলেন, “সংবিধান জনগণের জন্য। জনগণ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দিয়েছে। এটা নিয়ে কোনও সমস্যা নাই। আমার মনে হয়, আওয়ামী লীগ ছাড়া সব রাজনৈতিক দলের সমর্থন আছে। যার ফলে কোনও সমস্যা হবে না।”

অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘অনন্তকাল’ সময় দেওয়া যায় না : প্রিন্স

অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কারের জন্য ‘অনন্তকাল’ সময় দেওয়া যায় না বলে মনে করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।

এক প্রশ্নের জবাবে সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার এসেছে। তার নাম দেওয়া হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাকে আমরা সমর্থন করি। এই সরকার আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করলেও আমরা তাকে শুভকামনা করি”

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। ফাইল ছবি

দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, “বাংলাদেশ শাসন করবে জনগণের নির্বাচিত সরকার। বর্তমান সরকার প্রথমে সংস্কারের কথা বলবে। তারা রোডম্যাপ নির্ধারণ করবে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার প্রয়োজন। তারা এই কাজ না করলে আমরা আমাদের বিকল্প করণীয় ঠিক করব।”

সংস্কারের জন্য সরকারকে কতদিন সময় দিতে চান এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই- তারা রোডম্যাপে কী করতে চায়? তিন দিন সময় লাগলে দিব, যদি চারদিন লাগে তাহলে চারদিন দিব। অনন্তকাল সময় দেওয়া যায় না”

রাষ্ট্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ- আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের সংস্কার প্রয়োজন মন্তব্য করের  তিনি বলেন, “নির্বাচনী সংস্কার কখনও শেষ হয় না, এটা গতিশীল প্রক্রিয়া।”

এক এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নির্বাচনী ব্যবস্থার কিছু সংস্কার হয়েছিল জানিয়ে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “সব সংস্কার তারা করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ বিএনপি মেরুকরণের বাইরে গিয়ে যদি বাম শক্তি ক্ষমতায় বসে তাহলেই এই সংস্কারগুলো টিকবে”

সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের উদ্যোগ নিলে ফল ভালো হবে না : ইসলামী আন্দোলন

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ মনে করেন, পরিস্থিতির কারণে অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে। সংস্কার ছাড়া তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের উদ্যোগ নিলে সে ফল ভালো হবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকার হয়েছে, যা দেশের প্রয়োজন ছিল। আগামীতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে যেন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে ভোট হয়।”

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ। ফাইল ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা আসার পুরো প্রক্রিয়ায় রাজনীতিবিদদের যে দায় তার পুরোটা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর দিয়েছেন এই ইসলামী দলের নেতা।

গত ১৬ বছরের শাসন আমলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “চরম দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার হয়েছে। প্রশাসনে দলীয়করণ হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে অস্পষ্টতা বিরাজ করছে। দলীয়করণ সংস্কার করা দরকার।”

সংস্কার ও নির্বাচন আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তত দুই বছর সময় লাগতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

সকাল সন্ধ্যার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা চাইলাম তিন মাস। বাস্তবে তো সেটা সম্ভব না। সংস্কারটা আগে। সংস্কার করতে যদি লম্বা সময় লাগে, তারা যদি সচেষ্ট হন তাহলে অল্প সময়ে সম্ভব। দুই বছরও সময় লেগে যেতে পারে। সংস্কার ছাড়া তড়িঘড়ি করে উদ্যোগ নিলে সে ফল ভালো হবে না।”

রাজনৈতিক সরকার আসলে সংস্কারগুলো বাদ দেয় কেন- এ প্রশ্নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব বলেন, “অনিয়মের সঙ্গে যেসব মানুষ লিপ্ত, সেসব খারাপ মানুষ যদি সংসদে যায়, তাহলে ভালো জিনিস বাদ পড়ে যায়।”

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে ভোট চায় বলে সকাল সন্ধ্যাকে জানান দলটির মহাসচিব ইউনুছ।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যার রাজনৈতিক সচেতন, তারা জানেন যেকোনো বিপ্লবের পর সবকিছু সিস্টেমের মধ্যে আনা দরকার।”

সেই সময় আর বর্তমান সময় এক না : পার্থ

এই অন্তর্বর্তী সরকার আসার পেছনে রাজনীতিবিদদের যে দায় তা নিয়ে বই লেখা যাবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ। তিনি মনে করেন, অতীতে অন্তর্বর্তী সরকারের আনা সংস্কারগুলো না টিকলেও এবার টিকে যাবে। কারণ, সেই সময় আর বর্তমান সময় এক না।

আন্দালিব রহমান পার্থ

এক প্রশ্নের জবাবে আন্দালিব রহমান পার্থ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বর্তমান সরকারকে ইতিবাচকভাবে দেখছি। এই সরকার আসার লক্ষ্যটাই হলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করা। লোক দেখানো কোনও গণতন্ত্রের জন্য নয়, জনগণের জন্য আসছে এই সরকার।”

অন্তর্বর্তী সরকার কী কী সংস্কার করতে পারে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজেপি চেয়ারম্যান বলেন, “কী কী সংস্কার করতে চান সেটা ওনারা বলতে পারবেন। আগে থেকেই আমরা বলব না। ওনারা বলবেন।”

পূর্বের সংস্কারগুলো টিকছে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আসলে সেই সময় আর বর্তমান সময় এক না। বর্তমান সময়ে মানুষ রাজনৈতিক সচেতন হয়েছে। সে সময়ের চেয়ে বর্তমান সময়ে মানুষ অনেক বেশি সোচ্চার, যার ভিত্তিতে এই সরকার এসেছে।

বর্তমান সরকারের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, “সে আলোচনা তো আগেও ছিল। যা হয়েছে ভালোর জন্য হয়েছে। সংবিধানের চেয়ে দেশ বড়। দেশ অনেক বড়।”

অন্তর্বর্তী সরকারের সময় এখনই বলা সম্ভব না : সাকি

পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে কতদিন সময় দিতে চান সে প্রশ্নের জবাব এখনই দেওয়া সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।

জোনায়েদ সাকি। ফাইল ছবি

এক প্রশ্নের জবাবে জোনায়েদ সাকি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। একটা ফ্যাসিস্ট রেজিমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে জনগণ তার গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে।”

বর্তমান সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তবে শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু।”

অন্তর্বর্তী সরকার আসার পেছনে রাজনীতিবিদদের যে দায় তার পুরোটাই আওয়ামী লীগকে দিতে চান জোনায়েদ সাকী।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ কায়েম করার কারণে; আওয়ামী লীগের গণতান্ত্রিক আচরণ না করার ফলে এই পরিস্থিতি হয়েছে।”

পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন মন্তব্য করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আইন, সংবিধানসহ মৌলিক নীতি সংস্কার জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে এই সরকার।”

অন্তর্বর্তী সরকারকে কতদিন সময় দিতে চান- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা তো এখনই বলা সম্ভব না। তারা কতগুলো কাজ করবে, সে অনুযায়ী সময় লাগবে। তারাও বলবে। রাজনৈতিক দলগুলো এবং ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তা হবে।”

জোনায়েদ সাকি বলেন, “জনগণ হচ্ছে সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণ এই সরকারকে বৈধতা দিয়েছে। যার ফলে সাংবিধানিক সংকট নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।”

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব দ্রুত নির্বাচন দিয়ে চলে যাওয়া : জামায়াত

বর্তমান সরকারের দায়িত্ব যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন দিয়ে চলে যাওয়া বলে মনে করে জামায়াতে ইসলামী। সকাল সন্ধ্যার এক প্রশ্নে এ মন্তব্য করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ।

জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ। ফাইল ছবি

তিনি বলেন, “ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন হয়। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে। রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের কাছে রেফারেন্স চেয়েছেন। রাষ্ট্রের শূন্যতা পূরণে এই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে সরে দাঁড়াবে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আসবে।”

অন্তর্বর্তী এই সরকার রাষ্ট্র ও জনগণের প্রয়োজনে সবকিছু তারা করতে পারবে বলে মনে করেন এই জামায়েত নেতা।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সংস্কার প্রয়োজন। বিচার বিভাগেও সংস্কার প্রয়োজন। যারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে তাদের সময় পাঁচ বছর। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিয়ে চলে যাওয়া।”

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে সুপ্রিম কোর্ট মত দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আইন তাদেরকে সাপোর্ট করেছে। তারা সংবিধান সমুন্নত রেখে সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে প্রশ্ন ওঠার সুযোগই থাকবে না।”

জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বিশ্বাস করেন, এই সরকার জনবিরোধী কাজ করবে না। জনগণও তাদের সমর্থন দেবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত