Beta
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে নতুন নেতৃত্ব, আছে ৩০ মামলা

international crime tribunals
[publishpress_authors_box]

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে।

বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম হাইকোর্ট বিভাগে ফিরে যাওয়ায় ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন।

২০১০ সালে গঠিত এই ট্রাইব্যুনালে এখন ৩০টি মামলা বিচারাধীন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এখন এই সব মামলার বিচারে নেতৃত্ব দেবেন আবু আহমেদ।

বিচারপতি শাহীনুর ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

তিনি হাইকোর্টে ফেরত যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি তাকে হাইকোর্টে ফেরত চেয়েছিলেন। সেই চাওয়া মেনে মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে আইন ও বিচার বিভাগের প্রজ্ঞাপন আসে।

তাতে বিচারপতি শাহীনুর চলে যাওয়ায় ট্রাইব্যুনালের বর্তমান সদস্য বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদারকে চেয়ারম্যান করা হয়।

তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের সদস্য পদে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অবসরোত্তর ছুটিতে থাকা জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভুইয়াকে। আরেক সদস্য বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম তার পদে বহাল থাকছেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কর্মরত থাকার সময় বিচারপতি শাহিনুর ইসলামকে দেওয়া নিরাপত্তাসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য সুবিধা বজায় থাকবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এবং সদস্যরা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত বিচারপতির সমমর্যাদার বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন।

মামলা বাকি ৩০

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই পযন্ত ৫৫টি মামলার রায় হয়েছে, যাতে জামায়াত-বিএনপির নেতারাও দণ্ডিত হন।

২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি পলাতক আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির দণ্ড দেওয়ার মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণা শুরু হয়।

প্রসিকিউটররা জানান, ট্রাইব্যুনাল থেকে যে ৫৫টি মামলার রায় হয়েছে, সেখানে মোট আসামি ১৬৯ জন। এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত ১৪৯ জন। আর রায়ের আগে মারা যান ১৮ জন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা ১০৬, আমৃত্যু কারাদণ্ড পেয়েছেন ২৫ জন, যাবজ্জীবন সাজা পেয়েছেন ১২ জন। যুদ্ধকালীন সময়ে শিশু বয়স বিবেচনায় খালাস পেয়েছেন ১ জন। আর অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পেয়েছেন ১ জন।

এসব মামলা আটক হওয়া আসামির সংখ্যা ৮১, পলাতক আসামি ৬৮ জন।

প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন জানান, বর্তমানে ৩০টি মামলার বিচার চলছে। তার মধ্যে অনেকগুলো সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে।

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর্যায়ে রয়েছে।

রেজিয়া সুলতানা জানান, ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যার অভিযোগের মামলাটিতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী ৩০ এপ্রিল দিন ঠিক করা আছে। যুক্তিতর্ক শেষ হলেই রায় ঘোষণা করা যাবে।

এছাড়া সাতক্ষীরার আকবর আলী শেখসহ ৪ আসামির মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য শেষ হয়ে সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করা আছে। এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যার দুটি অভিযোগ রয়েছে।

অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল নিষ্পত্তি হয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে।

আপিল বিভাগে ৯টি মামলার চুড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ ৬ জনের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের ১৪ বছর

একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ বিচারপতি নিজামুল হককে চেয়ারম্যান, বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ এ কে এম জহির আহমেদকে সদস্য করে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সরকার।

তাদের নেতৃত্বে শুরু হয় একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার।

মামলার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দু্ই বছর পর ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা একটি বাড়ানো হয়। বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরকে চেয়ারম্যান করে ২০১২ সালের ২৩ মার্চ দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। তিন সদস্যের দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই বিচারক হন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান (বর্তমানে প্রধান বিচারপতি) এবং ট্রাইব্যুনালের নিবন্ধক মো. শাহীনুর ইসলাম।

২০১২ সালের আগস্টে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বিচারক জহির আহমেদ পদত্যাগ করেন। তখন হাইকোর্ট বিভাগ থেকে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনকে ট্রাইব্যুনাল-১ এর সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার।

এরপর বিচারপতি নিজামুল হক পদত্যাগ করেন। তখন বিচারপতি ফজলে কবীরকে ১ নম্বর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি অবসরে যাওয়ার পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারক) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয় সরকার। এই ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য ছিলেন জাহাঙ্গীর হোসেন (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারক) ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।

দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ পান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান (বর্তমানে প্রধান বিচারপতি)। তার সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. শাহীনুর ইসলাম।

আলোচিত মামলাগুলোর রায় ঘোষণা পর ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা আবার একটিতে কমিয়ে আনা হয়। তার নেতৃত্বে ছিলেন বিচারপতি আনোয়ারুল হক। তার মৃত্যুর পর ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর বিচারপতি শাহিনুর ইসলামকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত