Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
একান্ত সাক্ষাৎকারে ফাহাদ রহমান

‘অন্যরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের কাছে ট্রেনিং নেয়, আমার কিছুই নেই’

অবশেষে ৫ বছর পর প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নর্ম পেলেন ফাহাদ রহমান। ছবি: সংগৃহীত।
অবশেষে ৫ বছর পর প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নর্ম পেলেন ফাহাদ রহমান। ছবি: সংগৃহীত।
Picture of বদিউজ্জামান মিলন

বদিউজ্জামান মিলন

ফাহাদ রহমান আন্তর্জাতিক মাস্টারের খেতাব পান ২০১৯ সালে। কিন্তু গ্র্যান্ডমাস্টারের প্রথম নর্মটির জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হল ৫ বছর। অবশেষে রবিবার ভিয়েতনামে অনুষ্ঠিত গ্র্যান্ডমাস্টার টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে পেলেন প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নর্ম। এই অর্জনের পর হ্যানয় শহর থেকে মুঠোফোনে সকাল সন্ধ্যার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক বদিউজ্জামান মিলনকে জানালেন নিজের এতদিনের পথচলার লড়াই-সংগ্রামের কথা। জানালেন আগামীর স্বপ্ন ও প্রত্যাশার কথাও।  

প্রশ্ন : অবশেষে প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নর্মটা পেলেন।

ফাহাদ রহমান : অনেক চেষ্টার পরে.. (হাসি)।

প্রশ্ন : আপনি তো আন্তর্জাতিক মাস্টার হয়েছিলেন ৫ বছর আগে। কিন্তু গ্র্যান্ডমাস্টার নর্ম পেতে এতটা সময় লাগল কেন?

ফাহাদ : সত্যি বলতে এখন গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়া আগের চেয়েও কঠিন। ১০ বছর আগেও কঠিন ছিল। কিন্তু এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়েছে। সবারই এখন কোচ আছে। তাছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতাও বেড়েছে। এরপর অনেক পরিশ্রম করতে হয়।

পরের দুটি টুর্নামেন্টেই বাকি দুই নর্ম তুলে নিতে চান ফাহাদ রহমান। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন : সেটা কেমন?

ফাহাদ : বর্তমানে ওপেনিং নিয়ে অনেক থিওরি বেড়ে গেছে। হাজার হাজার চাল মুখস্থ রাখতে হয় ওপেনিংয়ে। নইলে ওপেনিংয়েই হেরে যাবো এ রকম পরিস্থিতি হয়। সব কিছু মিলিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ১০ বছরের তুলনায় অনেক কঠিন বর্তমানে। এটার জন্যই মূলত বেশি সময় লেগেছে নর্ম পেতে। দ্বিতীয়ত আমি ৬-৭ বার নর্মের খুব কাছে গিয়েও হেরে গেছি। আসলে মানসিক সমস্যার কারণেও এতদিন অনেকগুলো নর্ম মিস করেছি। এবারও কিন্তু আমার শেষ রাউন্ডে জেতা লাগতো। জিতলেই নর্ম হবে এমন একটা পরিস্থিতি ছিল। এবার কিন্তু ঠিকই জিতেছি। তো এমন অনেক সিচুয়েশন এসেছে যে আমার শেষ রাউন্ডে জেতাই লাগতো। হয়তো তখন শেষ রাউন্ডে হেরে গেছি। বা ড্র করেছি।

প্রশ্ন : মানসিক এই সমস্যা কি এখন কেটেছে?

ফাহাদ : মানসিক এই সমস্যা আশা করি এখন আর থাকবে না। কারণ যেহেতু এখন প্রথম একটা নর্ম হয়েছে। নর্ম না থাকলে প্রথমে একটু সমস্যা হয় সবারই।

প্রশ্ন : এক সময় ভারতে গিয়ে রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ, নিহাল সারিনদের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন। আপনার অনেক আগেই ওরা গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছেন। এটা ভেবে কি কখনও খারাপ লাগতো?

ফাহাদ :  খারাপ লাগাটাই তো স্বাভাবিক। ওরা যে সুযোগ সুবিধা পেয়েছে সেই অনুসারে পারফরম্যান্স করেছে। ওরা বিশ্বনাথন আনন্দের (৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন) সঙ্গে অনুশীলন করে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের কাছে ট্রেনিং নেয়। সেই তুলনায় আমার কিছু নেই। আমার নিজেকে কঠোর পরিশ্রম করে এতটা পথ আসা লেগেছে। খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই।

 প্রশ্ন : এ পর্যন্ত আসতে দাবা ফেডারেশন কেমন সহযোগিতা করেছে?

ফাহাদ : সত্যি বলতে ফেডারেশন থেকে তেমন সহযোগিতা পাইনি। আইএম (আন্তর্জাতিক মাস্টার) হওয়ার আগেও পাইনি। পরেও পাইনি। আইএম হওয়ার পর সর্বোচ্চ ১টা টুর্নামেন্ট খেলিয়েছে কিনা মনে করতে পারছি না। তবে বাংলাদেশ পুলিশ বেশ কবার সহযোগিতা করেছে। এজন্য পুলিশকে ধন্যবাদ। কিন্তু নিজের টাকায় অনেকগুলো টুর্নামেন্ট খেলেছি।

নিজের টাকায় বিভিন্ন দেশে টুর্নামেন্ট খেলতে যাচ্ছেন ফাহাদ। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন : নিজের টাকা বলতে..।

ফাহাদ : নিজের টাকা বলতে পুরো খরচ- বিমান ভাড়া, হোটেল ভাড়া, সব কিছু। তো প্রতি টুরে আমার ৩-৪ লাখ টাকা খরচ হয়। শেষ ৫-৬ টা টুর্নামেন্ট নিজের টাকায় খেলতে হলো। এবারও আমিই পুরো টাকা খরচ করেছি। কিন্তু পুলিশ থেকে বলেছে নর্ম করেছি বলে ওরা এবারের খরচটা দিয়ে দেবে। সেই হিসেবে এবারের স্পনসর করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।

প্রশ্ন : এবার যে নর্ম পাবেন সে ব্যাপারে কতখানি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন?

ফাহাদ : আসলে এখানে দুটি টুর্নামেন্ট খেলেছি। তো প্রথমটা এত খারাপ খেলেছি যে আসলে কোনও আত্মবিশ্বাসই ছিল না। খুবই ডিসটার্বড ছিলাম। আসলে ভাবিনি যে দ্বিতীয়টাতে নর্ম হবে। কিন্তু পরে হয়ে গেল শেষ মেস।    

প্রশ্ন : পরের দুটো নর্ম নিশ্চয় দ্রুতই করতে চান?

ভিয়েতনামের গ্র্যান্ডমাস্টার টুর্নামেন্টে শেষ রাউন্ডে জয় তুলে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ফাহাদ। ছবি: সংগৃহীত।

ফাহাদ : অবশ্যই। আমি নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম এ বছরের মধ্যেই জিএম হবো। তো প্রথম নর্মটা তো হলো। শুরুটা ভালো হয়েছে আর কি..। বাকি ২ নর্ম এই বছরের মধ্যেই পেতে চাই। যদি এমন পারফরম্যান্স করতে পারি তাহলে পরের দুটি টুর্নামেন্টেই হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।    

প্রশ্ন : এই যে বারবার কাছে গিয়েও হচ্ছিল না নর্ম। এটা নিয়ে হতাশা কাজ করতো?

ফাহাদ : ৫ বছরের কথা বলব না। কারণ আইএম হওয়ার পর জিএম হওয়ার মতো সেই পর্যায়ের দাবাড়ু আমি ছিলাম না। আমি বলব শেষ ২ বছর জিএম নর্ম পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। আর হতাশ বলতে গেলে অবশ্যই আমি হতাশ। কারণ গত বছর ভিয়েতনামে শেষ রাউন্ডে জিতলেই নর্ম হতো। তো ওটা দুর্ভাগ্যজনকভাবে জিততে পারিনি। তখন আমি খুব হতাশ হয়েছিলাম। কিন্তু তারপরও জীবন থেমে থাকে না। সব কিছু মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি।

প্রশ্ন : জিএম হওয়ার জন্য আপনার পরিবারের যথেষ্ট চেষ্টা রয়েছে। অনেকে তো সেই সহযোগিতাও পাচ্ছে না..।

ফাহাদ : আসলে এটা দুঃখজনক যে আমাদের দেশে সব রকম খেলাধুলায় এরকম খারাপ অবস্থা। সহযোগিতা নেই বলেই বাংলাদেশে ভালো অ্যাথলেট নেই। যদিও প্রতিভা আছে। কিন্তু ভালো অ্যাথলেট তৈরি হচ্ছে না। কারণ সুযোগ সুবিধা ছাড়া আসলে এত কিছু সম্ভব না। আসলে আমার মতো সবার পরিবার না। সবাই যখন দেখবে যে কোনও সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না তখন তারা খেলা ছেড়ে দেবে বা খেলায় পুরো নজর দেবে না। এটা দুঃখজনক। কিন্তু এটাই বাস্তবতা। জানিনা এর সমাধান কি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত