Beta
মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫

‘প্রত্যয়’ পেনশন স্কিমের আদ্যোপান্ত

সঞ্চয়ের প্রতীকী ছবি
সঞ্চয়ের প্রতীকী ছবি
[publishpress_authors_box]

সরকারি সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোয় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করতে চালু হলো নতুন স্কিম ‘প্রত্যয়’।

বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই স্কিমের রূপরেখা ঘোষণা করা হয়।

সে অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠানে যাদের অন্তত ১০ বছর চাকরিজীবন বাকি রয়েছে, তারা চাইলে এখন প্রত্যয় স্কিমে অংশ নিতে পারেন।

তবে আগামী জুলাইয়ের পর স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থার চাকরিতে যারাই যোগ দেবেন, বাধ্যতামূলকভাবে তাদের প্রত্যয় স্কিমে যুক্ত করা হবে।

যেভাবে শুরু হবে প্রত্যয় স্কিম

এই স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর প্রাপ্ত মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা (দুটির মধ্যে যেটির পরিমাণ কম) কেটে নেওয়া হবে। সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা দেবে।

এরপর মোট অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত কর্মকর্তা বা কর্মচারীর কর্পাস হিসাবে জমা করবে। এ প্রক্রিয়ায় কর্মকর্তা–কর্মচারীর পেনশন ফান্ড গঠিত হবে। এই ফান্ডের অর্থ জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করবে এবং সেখান থেকে পাওয়া মুনাফা এবং চাঁদা হিসাবে জমাকৃত অর্থের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পেনশন দেওয়া হবে।

বর্তমানে দেশে কনট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড বা সিপিএফ ব্যবস্থায় পেনশন দেওয়া হয়। যেখানে কর্মচারীর মূল বেতনের ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হয়। যার সঙ্গে প্রতিষ্ঠান যুক্ত করে মূল বেতনের ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

প্রত্যয় স্কিমের সঙ্গে সিপিএফের পার্থক্য হলো প্রত্যয়ে প্রতিষ্ঠান মূল বেতনের ১০ শতাংশ দেবে; সিপিএফ থেকে যা ১ দশমিক ৬৭ বেশি।

যেমন হবে টাকার অঙ্ক

ধরা যাক, একজন ব্যক্তির বেতনের ১০ শতাংশের পরিমাণ ২ হাজার ৫০০ টাকা। প্রত্যয় স্কিমে যদি তিনি অংশ নেন তাহলে প্রতিমাসে তার বেতন থেকে কাটা যাবে আড়াই হাজার টাকা, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানও দেবে একই পরিমাণ অর্থ।

৩০ বছর চাঁদা দিয়ে যাওয়ার পর যখন তিনি অবসরে যাবেন অর্থাৎ ৬০ বছর বয়স থেকে তিনি মাসে ৬২ হাজার ৩৩০ টাকা হারে পেনশন পাবেন।  

এছাড়া এই ৩০ বছরে তার বেতন থেকে দেওয়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়াবে নয় লাখ টাকা, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানও জমা করবে ৯ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে তার চাঁদার পরিমাণ হবে ১৮ লাখ টাকা।

তিনি যদি ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন, তবে ৬০ বছর বয়স থেকে পরবর্তী ১৫ বছরে মোট পেনশন পাবেন ১ কোটি ১২ লাখ ১৯ হাজার ৪০০ টাকা। যা তার নিজ জমার ১২ দশমিক ৪৭ গুণ।

যেহেতু পেনশনের সুবিধা আজীবন মিলবে, তাই এই অঙ্ক আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্য মুনাফার হার বৃদ্ধি পেলে মাসিক পেনশনের পরিমাণও বাড়বে।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের যাবতীয় খরচ সরকার বহন করবে করবে বলে চাঁদাদাতার কর্পাস হিসাবে জমাকৃত অর্থ এবং বিনিয়োগ লব্ধ আয় সম্পূর্ণ চাঁদাদাতার অ্যানুইটি হিসাবায়নের মাধ্যমে মাসিক পেনশন নির্ধারণ করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, প্রত্যয় স্কিম চালুর ফলে বিদ্যমান কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে না; বরং তাদের বিদ্যমান পেনশন বা আনুতোষিক সুবিধা অক্ষুণ্ন থাকবে।

বিদ্যমান ব্যবস্থায় খুব কমসংখ্যক স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা ও তাদের অধীনস্থ অঙ্গপ্রতিষ্ঠানে পেনশন স্কিম আছে। এ ধরনের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীরা আনুতোষিক স্কিমের আওতাভুক্ত এবং তাদের জন্য সিপিএফ ব্যবস্থা প্রযোজ্য।

এ ব্যবস্থায় কর্মচারীরা চাকরি শেষে অবসর–সুবিধা হিসেবে এককালীন আনুতোষিক পান; কিন্তু মাসিক পেনশন পান না। ফলে অবসরোত্তর–জীবনে প্রায় ক্ষেত্রেই আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েন।

প্রত্যয় স্কিম তাদের সেই অনিশ্চয়তা দূর করবে। বিজ্ঞপ্তিতে তাই বলা হয়েছে, কর্মচারীদের অবসরোত্তর জীবনের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা দিতে বিদ্যমান ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে সরকার ‘প্রত্যয়’ স্কিম প্রবর্তন করেছে।

এই স্কিমে জমা হওয়া চাঁদার ওপর বিনিয়োগ রেয়াত পাওয়া যাবে এবং প্রাপ্য পেনশন আয়করমুক্ত হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

প্রত্যয় স্কিম রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টিযুক্ত হওয়ায় এটিকে শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

যারা এই স্কিমে অংশ নেবেন তারা পেনশনযোগ্য বয়সে উপনীত হওয়ার পরবর্তী মাস থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ব্যাংক হিসাবে মাসিক পেনশনের অর্থ পেয়ে যাবেন। মোবাইল ফোনে মেসেজের মাধ্যমে তাদের এ বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।

এ ক্ষেত্রে তার জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনও দপ্তরে যাওয়ার বা কোনও ধরনের প্রমাণ দেখাতে হবে না।

‘সুখে ভরবে আগামী দিন, পেনশন এখন সর্বজনীন’-এই স্লোগান নিয়ে গত বছরের ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিম কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুরুতে যে স্কিমগুলো চালু করা হয়েছিল সেগুলো হলো-‘প্রবাস’, ‘প্রগতি’, ‘সুরক্ষা’ ও ‘সমতা’। সেসময়ই প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য আরেকটি স্কিম চালু করা হবে।

সেই ঘোষণা অনুযায়ী, বুধবার নতুন সরকারি চাকরিজীবীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ চালু করা হলো।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত