Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

অভিযোগপত্র দাখিল, জুলাই হত্যাকাণ্ডের ‘মাস্টারমাইন্ড’ শেখ হাসিনা

শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা।
[publishpress_authors_box]

শেখ হাসিনাকে জুলাই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসাবে চিহ্নিত করে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত এই ট্রাইব্যুনালে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকার নেওয়ার পর পুনর্গঠিত তদন্ত সংস্থা তদন্ত শুরু করে।

সেই তদন্ত প্রতিবেদন রবিবার ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শুনানি শেষে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল সেই অভিযোগপত্র আমলেও নেয়।      

অভিযোগপত্র দাখিলের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এক ফেইসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, “আবু সাঈদ, মুগ্ধ আর ওয়াসিমের পরিবারের (এবং আমাদের সবার) বিচারের প্রতীক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। নির্বিচারে হত্যার অপরাধে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে আনুষ্ঠানিকভাবে।”

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছরের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে রাজপথে যে সংগ্রামের সূচনা, তা কঠোর হাতে দমনের পথ নিয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।

ব্যাপক রক্তক্ষয়ের পর সেই আন্দোলন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রূপ নেয়, তাতে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ছাত্র জনতার আদালতে ফ্যাসিবাদের প্রতীকি ফাঁসি কর্মসূচিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসহ কুশপুতুল তৈরি করে তা ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো হয়। ছবি : জীবন আমীর
অভ্যুত্থানের পর ছাত্র জনতার আদালতে ফ্যাসিবাদের প্রতীকী ফাঁসি কর্মসূচিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসহ কুশপুতুল তৈরি করে তা ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো হয়। ফাইল ছবি

এরপর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে শেখ হাসিনাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর উদ্যোগ নেয়।

এই অভ্যুত্থান দমনে আওয়ামী লীগ সরকার ৮৩৪টি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল বলে গত জানুয়ারিতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক গেজেটে হিসাব দেওয়া হয়। তবে সংখ্যাটি আরও বেশি বলে দাবি করছেন অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণরা।

সেই হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচারে ট্রাইব্যুনালে রবিবার দেওয়া অভিযোগপত্রে শেখ হাসিনার সঙ্গে আরও দুজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

এরমধ্যে আসাদুজ্জামান কামাল বিদেশে পালিয়ে গেলেও সাবেক আইজিপি আল-মামুন গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন।

অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।

তদন্ত প্রতিবেদনে শেখ হাসিনাকে জুলাই হত্যাকাণ্ডের ‘মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার’ উল্লেখ করা হয়েছে।

আদালতের শুনানি বিটিভির মাধ্যমে সরাসরি সম্পচার করা হয়।

জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত শুরু করতে অভ্যুত্থানের পক্ষের বিভিন্ন সংগঠন দাবি করে আসার মধ্যে গত ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা তাদের প্রতিবেদন প্রধান প্রসিকিউটরের কাছে জমা দেয়।

জুলাই হত্যাকাণ্ড ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে একটি আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনার নিয়ে; অন্যটি ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশকন্দ্রিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে।

তার মধ্যে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারই আগে শুরু হলো।

ফেইসবুক পোস্টে আসিফ নজরুল লিখেছেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ও তদন্ত টিম দিনরাত পরিশ্রম করে গণহত্যার বিচারের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। আমরা এই বিচারে সকল ডিউ প্রসেস অনুসরণ করব। সুষ্ঠুভাবে বিচার করেই শেখ হাসিনা ও অন্যান্য অপরাধীদের দোষ প্রমাণ করা হবে।”

শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই এই বিচার শুরু হলো। তাকে ফেরত পাঠাতে ভারত সরকারকে গত ডিসেম্বরেই চিঠি দিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। তবে তার জবাব ছয় মাসেও মেলেনি।

এদিকে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গণহত্যার দায়ে এই দলটির বিচারের দাবিও রয়েছে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের।    

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত