রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় সাজেক ভ্যালি পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রে আগুনে ৯০টির বেশি স্থাপনা পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের উৎস ও কারণ উদ্ঘাটন এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধকল্পে সুপারিশ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহর সই করা এক অফিস আদেশে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। তদন্ত কমিটিতে প্রয়োজনে এক বা একাধিক সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার কথাও আদেশে উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়, আগুনের ঘটনা তদন্তে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মো. মোবারক হোসেনকে কমিটির আহ্বায়ক ও বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরীন আক্তারকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
কমিটির বাকি ৩ সদস্য হলেন রাঙ্গামাটির সহকারী পুলিশ সুপার (বাঘাইছড়ি সার্কেল), রাঙ্গামাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (দীঘিনালা) সহকারী প্রকৌশলী।
জেলা প্রশাসনের সবশেষ প্রতিবেদন ও স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে, সোমবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে সাজেক ভ্যালি পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রের ‘অবকাশ ম্যানুয়েল রিসোর্ট’ ও এর আশপাশের এলাকায় হঠাৎ আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয়দের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলা ও খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট আগুন নেভাতে আসে। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাজেক ভ্যালিতে ছড়িয়ে পড়া আগুনে ৯০-৯৫টির বেশি রিসোর্ট, কটেজ, দোকানপাট, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্থাপনা পুড়ে যায়। তবে এ ঘটনায় হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য এখন পর্যন্ত নিরূপণ করা যায়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পর্যটনকেন্দ্র সাজেকের কোথাও আগুন লাগলে তা নিয়ন্ত্রণে আনার মতো পর্যাপ্ত পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা সেখানে নেই। পানির অভাবে তাই তারা আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তা নেভাতে পারেনি।
তার ওপর খাগড়াছড়ির দীঘিনালাসহ অন্যান্য উপজেলা থেকে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি করায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
আগুনে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সাজেক রিসোর্ট ও কটেজ মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিজয় ত্রিপুরা বলেন, “আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ক্ষয়ক্ষতি কী পরিমাণ হয়েছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। সঠিক তথ্য জানতে সময় লাগবে।”
ভুক্তভোগী রাঙ্গামাটির ১৬৭ নম্বর রুইলুই মৌজার প্রধান লাল থাঙ্গা লুসাই বলেন, “আগুনের ঘটনায় আমার বসতবাড়িসহ আশপাশের সব স্থাপনা পুড়ে গেছে। কথা বলার অবস্থায় আমি নেই।”
সোমবার রাতে রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রুহুল আমীন জানান, সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগুনে সাজেকে ৯০-৯৫টির মতো স্থাপনা পুড়ে গেছে। হেলিকপ্টারের মাধ্যমে আগুন নেভানোর কথা থাকলেও বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণ আসায় হেলিকপ্টার আসতে মানা করা হয়।
আগুনের কারণ সম্পর্কে রাঙ্গামাটির ডিসি মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, “যতটুকু জানা গেছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে পরে তা নিশ্চিতভাবে জানা যাবে। এখন ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে।”
এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সাজেক ভ্যালি ভ্রমণে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করেছে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন।