Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

৩ দ্বীপ নিয়ে ইরান-আমিরাত দ্বন্দ্ব, জড়িয়েছে ইইউও

আবুমুসা দ্বীপ; এর মালিকানার দাবিদার ইরান, আমিরাত দুই পক্ষই।
আবুমুসা দ্বীপ; এর মালিকানার দাবিদার ইরান, আমিরাত দুই পক্ষই।
[publishpress_authors_box]

পারস্য উপসাগরে হরমুজ প্রণালীর প্রবেশ মুখে তিনটি দ্বীপের মালিকানা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ইরানের বিরোধ অর্ধ শতকের।

পারস্য উপসাগর থেকে ওমান উপসাগর হয়ে আরব সাগরে যাওয়া তেলের ট্যাঙ্কারগুলোর চলাচলের পথে এই দ্বীপ তিনটি। নাম আবু মূসা, গ্রেটার তুন্ব ও লেসার তুন্ব।

সম্প্রতি দ্বীপগুলোর ওপর নিজের মালিকানার দাবি প্রতিষ্ঠায় ইরান ১৩০ বছর আগে তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কেস অব স্যালিসবারির নির্দেশে আগে আঁকা মানচিত্রের উল্লেখ করছে। ওই মানচিত্রে তিনটি দ্বীপকে ইরানের ভূখণ্ড হিসাবে দেখানো আছে।

কিন্তু এই বিরোধের জেরে উপসাগরীয় অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ইরানের চলমান প্রচেষ্টা হুমকিতে পড়ে গেছে। এই বিরোধ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক উন্নয়নের পথেও একটি বাড়তি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিষয়টি ইরানের অভ্যন্তরে অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং আরও জরুরি হয়ে ওঠে যখন ইইউ গত মাসে উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) সঙ্গে তার প্রথম শীর্ষ সম্মেলন শেষে একটি যৌথ বিবৃতি দেয়।

বিবৃতিতে দ্বীপগুলো দখল করায় ইরানের নিন্দা করা হয় এবং বলা হয়, ইরানের এই দখলদারত্ব জাতিসংঘ সনদ এবং আমিরাতের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন।

আমিরাতের প্রতি ইইউর ওই সমর্থনের পর ইরানি কূটনীতিকরা ১৮৮৮ সালে যুক্তরাজ্যের আঁকা মানচিত্রের উল্লেখ করছেন। ওই মানচিত্রে দ্বীপগুলোকে ইরানের অংশ হিসাবে এবং বর্তমান সংযুক্ত আরব আমিরাতকে কেবল একটি জলদস্যু উপকূল হিসাবে দেখানো হয়।

আমিরাতের অঙ্গরাজ্য শারজাহ আবু মুসা দ্বীপের মালিকানা দাবি করে এবং রাস আল-খাইমাহ অন্য দুটি দ্বীপের মালিকানার দাবিদার। দুটি রাজ্যই ১৯৭১ সাল থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অংশ।

ব্রিটেন ১৯০৮ সালে দ্বীপগুলো দখল করেছিল। তবে ১৯৭১ সালে সুয়েজের পূর্বাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের অংশ হিসাবে দ্বীপগুলোরও নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়।

ব্রিটিশরা নিয়ন্ত্রণ ছাড়ার সময় আবু মুসার ভবিষ্যৎ মালিকানা নিয়ে একটি জটিলতা রেখে যায়। দ্বীপটিকে তারা যৌথভাবে শারজাহ ও ইরানের নিয়ন্ত্রণে দিয়েছিল।

ইরানে তখন শাহের নিয়ন্ত্রণে রাজতন্ত্র চলছিল। ব্রিটেনের প্রস্থানে ইরান দ্বীপগুলো দখল করে নেয় এবং দাবি করে যে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকেই সেগুলো পারস্য সাম্রাজ্যের অংশ ছিল।

সিআইএর তথ্য মতে, লেসার তুন্ব দ্বীপটির আয়তন মাত্র ১ বর্গ মাইল এবং এটি বিষাক্ত সাপদের আবাসস্থল।

১৯৯২ সালে ইরান আবু মুসায় বসবাসরত আমিরাতিদের বহিষ্কার করে এবং দ্বীপটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ৫ বর্গমাইল আয়তনের দ্বীপটিকে এখন হরমুজ প্রণালীতে ইরানের প্রতিরক্ষার প্রথম দেয়াল হিসাবে দেখা হয়। তিনটি দ্বীপেই এখন ইরানের সেনা মোতায়েন রয়েছে।

তিনটি দ্বীপে বেসামরিক বাসিন্দার সংখ্যা সব মিলিয়ে ২ হাজার জন। ইরানের সড়ক বিভাগ সম্প্রতি দ্বীপগুলোতে আরও বাড়ি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

তেহরান তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালত বা জাতিসংঘের সালিসি আদালতের মাধ্যমে দ্বীপগুলোর মালিকানা পেতে আমিরাত এখনও সফল হয়নি।

তবে আমিরাত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্যের কাছ থেকেই কূটনৈতিক সমর্থন জিতেছে, যাদের মধ্যে চীন ও রাশিয়াও রয়েছে। এটি একটি বিরল ঘটনা ইরান যেখানে চীন ও রাশিয়ার সমর্থন হারিয়েছে।

পারস্য উপসাগরে এই তিন দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ এখন ইরানের হাতে।

ইরান দ্বীপগুলোর ওপর নিজের মালিকানা দাবিতে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত হেনরি ড্রামন্ড উলফ কর্তৃক ইরানের শাহ নাসের আল-দিন শাহ কাজারকে দেওয়া একটি মানচিত্রেরও উল্লেখ করে।

১৮৮৮ সালের ২৭ জুলাই মানচিত্রটি ইরানকে দেয় যুক্তরাজ্য, যখন তারা রাশিয়ার সম্প্রসারণ প্রতিহত করা এবং বাণিজ্যে কর ছাড়ের জন্য ইরানের কাছে সহায়তা চেয়েছিল।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটির তৈরি মানচিত্র ব্যবহার করে ভারতের ভাইসরয় এবং গভর্নর-জেনারেল জর্জ কার্জন তার ১৮৯২ সালের পার্সিয়া অ্যান্ড দ্য পার্সিয়ান কোয়েশ্চেন বইয়ে লিখেছেন, দ্বীপগুলো ইরানের অংশ।

তবে আমিরাত বলেছে, ব্রিটিশদের এই দাবি ভুল। কারণ ব্রিটিশরা আসার আগে ঐতিহাসিকভাবে দ্বীপগুলো শারজাহর কাশেমি রাজবংশের অধীনে ছিল।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৫৭ অনুচ্ছেদের একটি বড় বিবৃতিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দাবিকে সমর্থন করায় ইরান সরকারের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তেহরানের কেন্দ্রে ভ্যালিয়াসার স্কোয়ারে দ্বীপগুলোর একটি বিশাল পোস্টার উন্মোচন করা হয়েছে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ইইউ-জিসিসির বিবৃতির নিন্দা জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি বলেন, “তিনটি দ্বীপ সর্বদাই ইরানের ছিল এবং চিরকাল থাকবে। আমাদের অঞ্চলে ইউরোপীয় ক্ষতিকারক ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ হস্তক্ষেপের যুগ শেষ হয়েছে।”

আরব রাষ্ট্রগুলোর পরিবর্তে ইউরোপের প্রতি তার নিন্দায় স্পষ্ট যে, তেহরান যখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি নতুন জোট গড়ার প্রক্রিয়ায় রয়ছে, তখন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে এখন বিরোধ এড়াতে চাইছে।

আরাগচি ইতোমধ্যে উপসাগরীয় রাষ্ট্র ওমান, কাতার, সৌদি আরব ও কুয়েত ছাড়াও জর্ডান, মিশর, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক ও তুরস্ক সফর করেছেন। ২০১৬ সালে দুই পক্ষের সম্পর্ক ছিন্ন করার পর গত সোমবার আরাঘচির বাহরাইন সফর ছিল দেশটিতে ইরানের কোনো মন্ত্রীর প্রথম সফর।

তবে ইরানের পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাগার গালিবাফ আরও কম কূটনৈতিক এবং আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছেন। তিনি উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোকে বলেছেন, “জায়নবাদী যুদ্ধযন্ত্রকে থামাতে শক্তি ব্যয় করার পরিবর্তে জিসিসি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা নিয়ে ভিত্তিহীন দাবি করে চলেছে।”

তথসূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত