ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে হামলার জবাবে দেশটি শনিবার রাতে ইসরায়েলে এই হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে।
দেশ দুটির মধ্যে বৈরিতা দীর্ঘদিনের হলেও এবারই প্রথম ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ইরানের মাটি থেকে সরাসরি হামলা চালানো হলো।
এক বিবৃতিতে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দখল করা ভূমিতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে টার্গেট করে হামলা চালানো হয়েছে’।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীও ইরানের হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ইরানের ছোড়া দুই শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী।
ইরানের পাশাপাশি লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিযবুল্লাহও ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে।
ইসরায়েলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জর্ডানের সামরিক বাহিনীও ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ধ্বংস করার কথা জানিয়েছে।
ইরানের এই হামলাকে ‘মারাত্মক ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেছেন ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) মুখপাত্র রিয়ার এডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি।
তিনি বলেন, “আমাদের সহযোগী ও অংশীদারদের সঙ্গে মিলে আমরা ইসরায়েল রাষ্ট্র ও জনগণকে রক্ষায় সর্বশক্তি নিয়োগ করেছি।”
ইরান দুইশর মতো ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে জানিয়ে হ্যাগারি বলেন, এসব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের বড় অংশই ইসরায়েল ও অঞ্চল জুড়ে তার সহযোগীরা রুখে দিয়েছে।
কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের অভ্যন্তরে আঘাত করেছে বলেও জানান তিনি। হ্যাগারি বলেন, একটি সামরিক ঘাঁটির সামান্য ক্ষতি হয়েছে। তবে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
তবে ইরানের হামলার পর পুরো ইসরায়েলজুড়ে সাইরেনের শব্দ এবং জেরুসালেমে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো গুলি করে কিছু বস্তুকে ভূপাতিত করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইসরায়েল, লেবানন ও ইরাক তাদের আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে। এর পাশাপাশি সিরিয়া ও জর্ডানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে রাখা হয়েছে সতর্কাবস্থায়।
ইরানি হামলা শুরুর পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। এছাড়া জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ইসরায়েলের নেতানিয়াহু বলেছেন, দেশটির সামরিক বাহিনী যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছে।
একইসঙ্গে পাশে থাকার জন্য ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, “আমার নীতি পরিষ্কার। যে আমাদের ক্ষতি করবে, আমরা তাদের ক্ষতি করব। যেকোনো হুমকির মুখে আমরা আমাদের রক্ষা করব।”
চলতি মাসের শুরুতে সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলায় শীর্ষস্থানীয় দুই জেনারেলসহ ইরানি রেভলিউশনারি গার্ডের সাতজন সদস্য নিহত হয়। ওই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে এর দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়ার ঘোষণা দেয় ইরান। এরপর শনিবার রাতে ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল ইরান।
এদিকে ইরান ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ডেলাওয়ারে তার সফর সংক্ষিপ্ত করে হোয়াইট হাউজে ফিরেছেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা দলের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি বলেন, “ইরান ও তার প্রক্সিদের হুমকি থেকে ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের অঙ্গীকারের প্রতি আমরা অবিচল।”
ইরানের হামলার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও। হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি ইসরায়েলের নিরাপত্তা অক্ষুণ্ণ রাখতে দেশটির পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
এছাড়া জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে হামলার নিন্দা জানিয়ে সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন।
সূত্র : বিবিসি ও আল জাজিরা