Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

কাদের ওপর কেন চড়াও ইরান-পাকিস্তান

POK
Picture of কল্লোল কর্মকার

কল্লোল কর্মকার

ইরান ও পাকিস্তান একে অপরের ভূমিতে হামলা চালিয়েছে। দুই দেশের মধ্যকার ৯০০ কিলোমিটার দীর্ঘ অস্থিতিশীল সীমান্তবর্তী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোই এসব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার লক্ষ্য। উভয় দেশই বলছে, নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে হামলা করা হয়েছে।

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের পাঞ্জগুর শহরে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে গত মঙ্গলবার রাতে হামলা চালায় ইরানের ‘প্রভাবশালী’ বাহিনী ইসলামী বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে বৃহস্পতিবার ভোরে ইরানের সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর আস্তানায় হামলা চালায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী।

এখন পর্যন্ত যা ঘটেছে

আইআরজিসি ইরানের শাসনব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু এটি দেশটির সেনাবাহিনী থেকে আলাদা, সর্বোচ্চ নেতার নিয়ন্ত্রণাধীন। ইরান সীমান্তে পাকিস্তানের একটি পাহাড়ি অঞ্চলে জইশ আল-আদল নামের সশস্ত্র গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করেই ড্রোন হামলা চালায় আইআরজিসি।

ইরান বলেছে, তাদের দক্ষিণ-পূর্বের দুই প্রদেশ সিস্তান ও বালুচিস্তানে সাম্প্রতিক হামলায় দায়ী ইরানি ‘সন্ত্রাসী’ গোষ্ঠীকে তারা লক্ষ্যবস্তু করেছে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান গত মঙ্গলবার বলেন, “পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের কিছু অংশে গোষ্ঠীটি আশ্রয় নিয়েছে। আমরা এ বিষয়ে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েকবার কথা বলেছি।”

আল জাজিরা জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে ধারণ করা ভিডিওতে একটি ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দৃশ্য ধরা পড়েছে।

ইরানি গণমাধ্যমে এই ভিডিও দিয়ে ‘সন্ত্রাসী আস্তানায়’ হামলার কথা বলা হয়েছে। জনগণের উল্লাসের চিত্রও রয়েছে তাদের খবরে। পাকিস্তান সরকার জানিয়েছে, আক্রমণে দুই শিশু নিহত হয়েছে। ইরান এবারই প্রথম পাকিস্তানের মাটিতে হামলা চালাল।

পাকিস্তান তেহরান থেকে প্রায় ১,৮০০ কিলোমিটার দূরে সারাভান শহরের একটি সীমান্তবর্তী গ্রামে রকেট হামলা চালায়। পাকিস্তানের দাবি, তারা বেলুচ ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ টার্গেট করেছে। আর তেহরান বলছে, হামলায় নয়জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৭ নারী ও শিশু।

উভয় দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে বলেছে, তারা একে অপরের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে। তবে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছে।

দুই দেশের নৌবাহিনীর এক দিনের যৌথ মহড়া শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরান হামলা চালায়।

সেসময়ে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনের ফাঁকে আলোচনা করেছিলেন। উভয় দেশই তাদের নিজেদের রাষ্ট্রদূতদের তলব করে। তবে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের মতো ঘটনা এখনও ঘটেনি।

ইরান গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের কাছে তার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বড় সামরিক মহড়ার আয়োজন করে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়েছে।

‘সন্ত্রাসীরা’ কারা

পাকিস্তানের ভেতরে ইরানের লক্ষ্য ছিল জইশ আল-আদল নামে পরিচিত একটি জাতিগত বেলুচ সুন্নি গোষ্ঠী। এটি ২০১২ সালে আত্মপ্রকাশ করে।

তেহরান এই সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী’ গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে। কারণ গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সীমান্তের কাছাকাছি ইরানি ঘাঁটি ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বহু প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে তারা। ইরানি কর্মকর্তারা একে ‘জইশ আল-জুলম’ – ‘অবিচারের সেনাবাহিনী’ বলেন।

দলটি ইরানি বেলুচ গোষ্ঠী জুন্দাল্লাহ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। তেহরানের অভিযোগ, জুন্দাল্লাহর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যোগাযোগ রয়েছে। দলটি একাধিক প্রাণঘাতী হামলার জন্য দায়ী। ২০০৯ সালে দলটির হামলায় আইআরজিসির ১২ সদস্য নিহত হয়েছিল।

জুন্দাল্লাহের নেতা আব্দুলমালাক রিগিকে ইরানি বাহিনী একটি চাঞ্চল্যকর অভিযানে গ্রেপ্তার করে। ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিরগিজস্তানে যাওয়ার পথে তাকে বহনকারী বিমানকে যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে জোরপূর্বক অবতরণ করানো হয় ইরানে। একই বছরে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

পাকিস্তান বলছে, তাদের লক্ষ্য ছিল বেলুচিস্তান মুক্তি ফ্রন্ট (বিএলএফ) এবং বেলুচিস্তান মুক্তি বাহিনী (বিএলএ)। এই বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী দুটি পাকিস্তানের ভেতরে একাধিকবার হামলা চালিয়েছে।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বিএলএফ দাবি করেছে, তাদের কোনও যোদ্ধা, যারা সারমাচার নামে পরিচিত, নিহত হননি। তারা আগের এক বিবৃতিকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছে। সেখানে তাদের এক সদস্যের উদ্ধৃতি দিয়ে দাবি করা হয়, ইরানের সামরিক বাহিনীর হামলায় বিএলএফ যোদ্ধারা নিহত হয়েছেন।

আল জাজিরা বলছে, সাম্প্রতিক হামলাগুলো মাসব্যাপী ঘটে যাওয়া একের পর এক সীমান্ত হামলারই ধারাবাহিকতা। জইশ আল-আদল গত ডিসেম্বরে ইরানের একটি সীমান্ত ঘাঁটিতে আক্রমণ করে ১১ পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে।

ইরানের হামলার বার্তা কী

ইরান-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা বহু বছরের হলেও এই হামলাগুলো এমন সময়ে হলো যখন ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ চলছে গাজায়। সেখানে ইরান সমর্থিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ ওয়াশিংটন এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে।

ইরান পাকিস্তানে হামলার একদিন আগে ইরাক ও সিরিয়ায় ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ইয়েমেনে হামলা এবং গাজা যুদ্ধে পশ্চিমা সমর্থনের মধ্যে এই সামরিক শক্তি দেখাল তেহরান।

বলা হচ্ছে, ইরানের কেরমানে সাম্প্রতিক জোড়া বোমা হামলার প্রতিশোধ নিতেই তেহরান এসব হামলা চালাচ্ছে। একই সঙ্গে নিজেদের অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সক্ষমতা দেখাতে চাইছে।

ইরানের দাবি, ইরাকে তারা ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। এতে ধনী কুর্দি ব্যবসায়ী পেশরা দিজায়ে নিহত হন। দিজায়ের বাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কাছে।

সিরিয়ায় খেইবার সেকান ব্যালিস্টিক মিসাইল দিয়ে ইসলামিক স্টেট সমর্থিত একটি গোষ্ঠীর ওপর হামলা চালানো হয়। তেহরানের এই নতুন মিসাইল ১৩০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এর মানে, এর আওতার মধ্যে আছে ইসরায়েল ও তাদের অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল। বলা হচ্ছে এই হামলার মধ্য দিয়ে ইসরায়েলকে সতর্কবার্তা দিতে চাইছে ইরান।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত