ইসরায়েল হামলা চালালে পারমাণবিক বোমা বানানোর বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে ইরান। দেশটি হুঁশিয়ার করেছে, ইসরায়েলের হামলার শিকার হলে তারা তাদের ‘পারমাণবিক নীতি’ পুরোপুরি বদলে ফেলতে পারে।
বৃহস্পতিবার ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসির) পারমাণবিক নিরাপত্তা বিষয়ক কমান্ডার আহমেদ হাগতালাব এমনই হুঁশিয়ার করেছেন।
তিনি বলেন, “আমাদের পারমাণবিক নীতি ও রাজনীতি অতীতের বিবেচ্য বিষয়গুলোর সঙ্গে পুরোটা পুনর্বিবেচনা করা সম্ভব।
“ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসকদের (ইসরায়েল) হুমকি আমাদের পারমাণবিক নীতি পর্যালোচনা এবং আমাদের পূর্ববর্তী বিবেচনা থেকে বিচ্যুত করার সুযোগ তৈরি করছে।”
গত ১৩ এপ্রিল ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এই প্রথমবার ইরান তার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করল। ইসরায়েলের পাল্টা হামলার আশঙ্কার মধ্যেই এ কথা জানাল ইরান।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েল হামলা চালালে তার জবাবও দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেন হাগতালাব।
তিনি বলেন, “ইহুদিবাদী শাসকরা আমাদের পারমাণবিক কেন্দ্র ও স্থাপনাগুলোতে হামলা করলে আমরা অবশ্যই এবং স্পষ্টভাবে তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর উপর উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাল্টা হামলা চালাব।”
ইসরায়েল বলেছে, তাদের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে গত ১৩ এপ্রিল ইরানের চালানো ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার যথাযথ জবাব দেওয়া হবে। গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে বিমান হামলার জবাবে ১৩ এপ্রিল ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে তিনশর বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় ইরান।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ইরান একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে এবং দেশটি মাত্র ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যেই পারমাণবিক বোমা তৈরির সক্ষমতাও অর্জন করে ফেলেছে।
তবে ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি বেসামরিক ও শান্তিমূলক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির।
২০২১ সালে ইরানের তৎকালীন গোয়েন্দা মন্ত্রী বলেছিলেন, পশ্চিমা চাপ তেহরানকে শেষমেশ পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর দিকে ঠেলে দিতে পারে। ২০০০ এর দশকের শুরুতে একটি ফতোয়া বা ধর্মীয় ডিক্রি জারি করে খামেনি পারমাণবিক বোমা বানানো নিষিদ্ধ করেছিলেন।
২০১৯ সালে খামেনি পুনর্ব্যক্ত করেন যে, “পারমাণবিক বোমা তৈরি এবং মজুদ করা ভুল কাজ এবং এটি ব্যবহার করা হারাম (ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ)। যদিও আমাদের কাছে পারমাণবিক প্রযুক্তি রয়েছে, তবে ইরান দৃঢ়ভাবে বোমা বানানো এড়িয়ে গেছে।”
তথ্যসূত্র : রয়টার্স, দ্য টেলিগ্রাফ