তেহরানের প্রতিশোধমূলক হামলা বন্ধে ইসরায়েলকে সাহায্য না করতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে সতর্ক করেছে ইরান। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে শনিবার বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি এই তিনটি দেশ ইসরায়েলকে সহায়তা করে, তবে এই অঞ্চলে অবস্থিত তাদের সামরিক ঘাঁটি ও জাহাজকে টার্গেট করবে তেহরান।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) শনিবার জানিয়েছে, তারা ইরানে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা অব্যাহত রেখেছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দিয়েছে ইরান।
ইসরায়েল বলছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির আরও কাছাকাছি পৌঁছানোর আগেই এই ব্যাপক হামলা চালানো জরুরি ছিল। যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হামলার আগে তেহরান এমন কোনও অস্ত্র তৈরির চেষ্টায় সক্রিয় ছিল না।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ইরানের শতাধিক স্থান টার্গেট করে প্রায় দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান দিয়ে প্রথমে হামলা চালায় ইসরায়েল। জবাবে শুক্রবার দিবাগত রাতে ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান, যার প্রায় সবই প্রতিহতের দাবি করেছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের গণমাধ্যম শনিবার জানিয়েছে, ইরানি হামলায় নিহতের সংখ্যা আরেকজন বেড়ে তিনজন হয়েছে।
ইরান জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় তাদের ৭৮ জন নিহত ও ৩২০ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানী রয়েছে।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার হামলা-পাল্টাহামলা বন্ধে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে ওমান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবুসাইদি কয়েক দফায় ইরান ও ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন। তবে এখনও সমঝোতা আলোচনায় কোনও অগ্রগতি হয়নি।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুসারে, শনিবার এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ইরানের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ সতর্ক করে বলেছেন, ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রাখলে ‘তেহরানকে জ্বালিয়ে দেওয়া হবে।”
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা ফার্স জানিয়েছে, ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলার জবাব শেষ হয়নি। বরং ইসরায়েলের বিরুদ্ধেও ইরানি হামলা চলবে।
পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ইরানের সব বিমানবন্দরে সব ধরনের ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ইরানে হামলার নিন্দা রাশিয়া, চীন ও তুরস্কের
ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া, চীন ও তুরস্ক।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বিভিন্ন সংবাদ সংস্থাকে বলেন, “ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে হঠাৎ করে যে ভয়াবহ উত্তেজনা শুরু হয়েছে, তা নিয়ে রাশিয়া উদ্বেগ ও নিন্দা জানাচ্ছে।”
রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলে থাকা রাশিয়ার নাগরিকদের সম্ভব হলে দেশটি ত্যাগ করতে বলেছে রুশ দূতাবাস। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রাশিয়ার নাগরিকদের ইসরায়েলে না যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছে তারা।
ইরানে ইসরায়েলি হামলার মধ্য দিয়ে ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার এক জেনারেল।
ইরানের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও ভূখণ্ডগত সংহতি লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়েছে চীন।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে জাতিসংঘে দেশটির দূত ফু কং এই নিন্দা জানান। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া নিয়ে বেইজিং মারাত্মক উদ্বিগ্ন বলে তিনি জানিয়েছেন।
ফু কং বলেছেন, পারমাণবিক জ্বালানির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের অধিকার ইরানের আছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ইসরায়েলকে ‘আগ্রাসন বন্ধ করার’ আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েলের চালানো হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছে আঙ্কারা।
যথেষ্ট হয়েছে, থামার সময় হয়েছে: জাতিসংঘ মহাসচিব
বিবিসি জানিয়েছে, ইরান ও ইসরায়েলের প্রতি উত্তেজনা কমিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় তিনি লড়াই বন্ধ করার এবং সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ। এর জবাবে তেল আবিবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। যথেষ্ট উত্তেজনা দেখানো হয়েছে। এখন থামার সময় হয়েছে। শান্তি আর কূটনীতির বিজয় নিশ্চিত করতে হবে।”