Beta
শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, ‘বড় ভুল’ বলল ইসরায়েল

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাহায্যে ধ্বংসের সময় তেল আবিবের আকাশে এমন আলোর ঝলকানি দেখা যায়।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাহায্যে ধ্বংসের সময় তেল আবিবের আকাশে এমন আলোর ঝলকানি দেখা যায়।
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজার পর লেবানন ও ইয়েমেনে ইসরায়েলি হামলা ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যে বিদ্যমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই ইসরায়েলে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এতে মধ্যপ্রাচ্যে একটি বৃহত্তর যুদ্ধের আশঙ্কা আরও জোরাল হয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরুর পর ইসরায়েলজুড়ে বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এ সময় ইসরায়েলজুড়ে সাইরেন বাজিয়ে লোকজনকে সতর্ক করা হয় এবং নিরাপদে আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।

পরে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) বিষয়টি নিশ্চিত করে বিবৃতি দেয়।

তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, ইরান থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে প্রায় ১৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, যার অনেকগুলোই ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগেই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাহায্যে ধ্বংস করা হয়েছে। তবে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হেনেছে।

ইসরায়েলের স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তেল আবিবে অন্তত দুইজন আহত হয়েছে।

এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনাকে ইরানের ‘বড় ভুল’ হিসাবে আখ্যা দিয়ে এর জন্য তাদের ‘পরিণাম ভোগ করতে হবে’ বলে হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

ইরানের বিপ্লবী রেভল্যুশনারি গার্ড বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইরানের সিনিয়র কমান্ডারদের হত্যার জবাবে তারা ইসরায়েলের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

পাশাপাশি ইসরায়েল এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব দিলে তাদের ওপর আরও হামলা চালানো হবে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছে বিপ্লবী রেভল্যুশনারি গার্ড। তারা বলছে, ইসরায়েল হামলার জবাব দিলে এরপর দেশটির সবকিছুকে লক্ষ্য করে তারা আরও বড় হামলা চালাবে।

এদিকে, ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর সেগুলোকে ধ্বংস করতে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।

গত শুক্রবার লেবাননে হিজবুল্লাহর ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে সংশস্ত্র সংগঠনটির শীর্ষ নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করে ইসরায়েল। এর আগে-পরে হামলা চালিয়ে হামাস ও হিজবুল্লাহর আরও কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কমান্ডারকেও হত্যা করে ইসরায়েল।

এর মধ্যে হিজবুল্লাহপ্রধান নাসরাল্লাহকে হত্যার পর শনিবার ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি অঙ্গীকার করেছিলেন, তাদের মিত্র হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।

এরপর মঙ্গলবার রাতে ইরান থেকে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হলো ইসরায়েলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে।

এদিকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যেও লেবাননের বৈরুতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সেখানে হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে আইডিএফ।

গাজায় প্রায় এক বছর ধরে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে আসা ইসরায়েল সম্প্রতি লেবাননে হিজবুল্লাহর বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে। ইসরায়েল বলছে, হিজবুল্লাহর হামলায় সীমান্ত এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া তাদের বাসিন্দাদের নিরাপদে নিজ বাসস্থানে ফিরিয়ে আনাই লেবাননে তাদের এই হামলা লক্ষ্য।

লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরাল্লাহসহ সংগঠনটির শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন কমান্ডার নিহত হওয়ার পর ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে বড় আকারে যুদ্ধের যে আশঙ্কা দেখা দেয়, ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর তা আরও জোরাল হলো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ও জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাইদ ইরাভানি বলেছেন, হামাস ও হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ নেতাদের হত্যার পাল্টা পদক্ষেপ হিসাবে ইরান ইসরায়েলে এই হামলা চালিয়েছে।

ইসরায়েল ভবিষ্যতে আবার হামলা চালালে আরও জোরালোভাবে তার জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ডানি ডানন ইরানের হামলার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে বলে পাল্টা হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেন বলেছেন, “আমাদের যুদ্ধের কোনও ইচ্ছা নেই, তবে আমাদের বেসামরিক লোকজনের ওপর যখন এভাবে হামলা করা হচ্ছে, তখন আমরা অলস বসে থাকতে পারি না।”

মঙ্গলবার রাতে ইরান ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর আগেই যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য এই হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছিল। এর কিছু সময় পরেই হামলা চালায় ইরান।

এর আগে গত এপ্রিলে সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলা ইরানের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় সামরিক কমান্ডার নিহত হলে পাল্টা জবাব হিসেবে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে প্রায় তিনশ’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল ইরান।

তবে সেবার ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের প্রায় সবগুলোই আঘাত হানার আগেই ধ্বংস করার কথা জানিয়েছিল ইসরায়েল। আর এতে তাদের সহায়তা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেবারের হামলায় ইসরায়েলের একটি বিমান ঘাঁটি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানা গিয়েছিল।

এদিকে, ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম একদিনে এক শতাংশের মতো বেড়ে ৭৪.৪০ ডলারে পৌঁছেছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত