দ্য গডফাদার মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭২ সালে। এরপর ১৯৭৪ সালে আসে দ্য গডফাদার পার্ট টু । কেউ কেউ দাবি করেন, দ্য গডফাদার সিনেমার চেয়ে এর পার্ট টু বরং সেরা নির্মাণ। কেউ বলেন, এখন পর্যন্ত সেরা সিক্যুয়েল দ্য গডফাদার পার্ট টু ।
৫০ বছর আগে ডিসেম্বরের ২০ তারিখ মুক্তি পাওয়া দ্য গডফাদার পার্ট টু তে করলিওনি মাফিয়া পরিবার নিয়ে আরেক ধাপ গভীরে গেছে গল্প। এ কারণেই সিনেমার নামের পাশে পার্ট টু জুড়ে দেয়া হয়েছে; যা সিনেমার ইতিহাসে প্রথম উদাহরণ ছিল।
মারিও পুজোর বেস্টসেলিং উপন্যাস থেকে সিনেমা বানালেন প্রযোজক, পরিচালক ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা। তুমুল আলোচনা, বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক সাফল্যের মুখ দেখেছিল দ্য গডফাদার যেখানে কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন মার্লোন ব্র্যান্ডো।
এরপর পরিচালক কপোলা দ্য কনভার্সেশন নিয়ে এলেন ১৯৭৪ সালে, যা কানস ফিল্ম ফেস্টিভাল গ্রাঁ প্রিঁ জিতেছিল। তারপরই দ্রুততার সঙ্গে দ্য গডফাদার সিনেমার সিক্যুয়েল নিয়ে ফিরলেন তিনি। এর কাহিনি তিনি মারিও পুজোর সঙ্গেই লিখেছিলেন।
কাহিনির চুম্বক দিক নিয়ে কপোলা বলেন, “আমি সবসময় এমন একটি স্ক্রিপ্ট লিখতে চেয়েছি যেখানে বাবা এবং ছেলে একই বয়সে থাকে। তারা দুজনেই তিরিশের কোঠায় ছিল। আর আমি দুটো গল্পকেই এক সঙ্গে জুড়ে দিলাম।
“গডফাদার ওয়ান যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, তাই গডফাদার টু সিনেমায় আমি দুটি কাঠামো রেখেছি। এতে অতীত এবং বর্তমান দুই সময়েরই গল্প চলছিল।”
স্থানীয় মাফিয়া হোতা ডন ফ্রাঞ্চেসকোর হাতে পুরো পরিবার নিহত হওয়ার পর সিসিলি’র কর্লিওনে গ্রাম থেকে পালিয়ে ২০ শতকের গোড়ার দিকে আমেরিকা চলে আসে বালক ভিটো আন্দোলিনি। নামের শেষাংশ পাল্টে হয়ে যান ভিটো কর্লিওনি।
একজন আইন মেনে চলা নাগরিক থেকে সে ছোটখাটো চোর হয়ে ওঠে। তারপর একজন খুনী এবং অবশেষে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। বছর কয়েক পর সে ডনের উপর প্রতিশোধ নেয়।
আর মাইকেল কর্লিওনিকে দেখা যায় ১৯৫০ এর দশকে নানা সংকটের মাঝেও পারিবারিক ব্যবসা বাঁচানোর চেষ্টায়। তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু সে বেঁচে যায়। হাইমেন রথের নেতৃত্বে ইহুদি মাফিয়ার সঙ্গেও লড়াই করে মাইকেল। এসব দ্বন্দ্বের ফলে স্ত্রী কে এবং ভাই ফ্রেডোর সঙ্গে দূরত্ব দেখা দেয় তার। বিশ্বস্ত সঙ্গী ‘কনসিলিওরি’ টম হেগেন ছাড়া আর সবাই তাকে ত্যাগ করে।
এই গল্পে ধারাবাহিকতা ধরেই রাখাই ছিল আসল জাদু। ভিটো চরিত্রটি মূল উপন্যাস থেকে নেয়া বলেই কখনই বাড়তি সংযোজন মনে হওয়ার সুযোগ ছিল না।
প্রথম সিনেমার অভিনয়শিল্পীদের সবাই সিক্যুয়েলে ফিরে এসেছে। শুধু রিচার্ড ক্যাস্টেলানো অভিনীত ক্ল্যামেনজা চরিত্রটি বাদ পড়ে যায়।
ভিটো কীভাবে সেই ভয়ঙ্কর এবং সম্মানিত পরিবারপ্রধান হয়ে উঠেছিল তা প্রথম পর্বে দেখানো হয়েছিল যেখানে ডন কর্লিওনির ভূমিকায় ছিলেন মার্লোন ব্র্যান্ডো। আর পার্ট টুতে রবার্ট ডি নিরো সুনিপুণ অভিনয় দিয়ে হয়ে ওঠেন ভিটো; যা দর্শকের পক্ষে ভোলা সম্ভব নয়।
সিনেমার পার্ট টু দুর্দান্তভাবে এগিয়েছে, তারপরও ১৯৫০ সালের শেষ দৃশ্যগুলো হয়তো কিছুটা দুর্বল মনে হতে পারে কারও কাছে।
লি স্ট্রাসবার্গ একজন খ্যাতনামা অভিনেতা হলেও হাইমন রথ চরিত্রে তিনি যথেষ্ট শক্তিশালী খল হয়ে উঠতে পারেননি। বরং তাকে খুবই নম্র এবং বৃদ্ধ দেখায়। মাইকেলের বিরুদ্ধে এই খলনায়কের জয় তাই কল্পনা করা খুব কঠিন হয়ে ওঠে।
আর মাইকেল চরিত্রে আল পাচিনো অনবদ্য।
পার্ট টুতে মার্লোন ব্র্যান্ডো এবং জেমস ক্যানের (মাইকেলের বড় ভাই সনি কর্লিওনির ভূমিকায়) অভাব বোধ হবে। কপোলাও হয়তো তা বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি চার ছেলেকে অল্প সময়ের ফ্ল্যাশব্যাকে পুনর্মিলিত করেন।
ব্র্যান্ডো অবশ্য এতে ছিলেন না। যদিও তিনি পার্ট টুতে কাজ করার ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। পরে প্যারামাউন্ট স্টুডিওর সঙ্গে বনিবনা না হওয়াতে তিনি আর শুটিংয়ে আসেননি।
পার্ট টু কি আসলেই সেরা সিক্যুয়েল হওয়ার মতো সিনেমা?
এর উত্তর হয়তো না; তবে অত্যন্ত দক্ষ হাতে নির্মিত তা মানতেই হবে। ১৯৭০ এবং ১৯৮০ সালের দশকে মুক্তি পাওয়া বেশিরভাগ সিক্যুয়েলের বেলায় এ কথা খাটে না।
পার্ট টু কি দ্য গডফাদার সিনেমার প্রথম পর্বের চেয়ে ভালো?
শুরুতে তীর্যক সমালোচনার শিকার হলেও পরে এই সিনেমা বাহবা পেতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ১১টি একাডেমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়ে ৬টি অস্কারও জিতে নেয়। সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছিলেন কপোলা এবং সেরা সহ-অভিনেতা হয়েছিলেন বরার্ট ডি নিরো। সেরা সিনেমা পুরস্কারও বাগিয়ে নিয়েছিল পার্ট টু, যা কোনো সিক্যুয়েলের প্রথম অর্জন।
পার্ট টু এর খ্যাতি অটুট ছিল ১৯৯০ সাল পর্যন্ত; ওই বছর ’দ্য গডফাদার পার্ট থ্রি’ মুক্তি পায়, যা আরেক উপাখ্যান হয়ে ওঠে।
আইএমডিবিতে পার্ট ওয়ানের রেটিং ৯.২/১০, পার্ট টুয়ের রেটিং ৯/১০ এবং পার্ট থ্রিয়ের রেটিং ৭.৬/১০।