বিদেশের মাটিতে অবস্থানরত সন্ত্রাসীদের হত্যার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। এরই অংশ হিসেবে পাকিস্তানে বেশ কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তার বরাতে এমন দাবি করা হয়েছে যুক্তরাজ্যের দৈনিক গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে।
নয়াদিল্লি অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই এমন হত্যাকাণ্ডে তার ভূমিকার কথা অস্বীকার করে আসছে; যদিও ভারতের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো দেশগুলোও এমন অভিযোগ করে আসছে। সর্বোপরি গুপ্তচরবৃত্তি ও চুক্তিভিত্তিক হত্যাকাণ্ডের এই অন্ধকার জগতে এসব অভিযোগ স্বাধীনভাবে খুব কম ক্ষেত্রেই প্রমাণ করা সম্ভব।
আল জাজিরাকে গোপনীয়তা বজায় রাখার শর্তে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন পাকিস্তানের কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তাদের বিশ্বাস, পাকিস্তানে ২০২৩ সালে ছয়টি ও ২০২২ সালে দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইংয়ের (আরএডব্লিউ) হাতে। তারা এসব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছেন।
এ বছরের জানুয়ারিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের শীর্ষ এক কূটনীতিক দেশটিতে হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ রয়েছে বলে দাবি করেন।
গত ২৫ জানুয়ারি ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ সাইরাস সাজ্জাদ কাজী বলেন, “এগুলো ভাড়াটে খুনিদের মাধ্যমে করা হত্যাকাণ্ড। এর পেছনে আছে একাধিক দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একটি জটিল নেটওয়ার্ক।”
কাজী বিশেষভাবে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে মোহাম্মদ রিয়াজ ও এক মাস পর পাঞ্জাবের শিয়ালকোট শহরে শহীদ লতিফের হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ করেন। এই উভয় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেই ভারতীয় গোয়েন্দারা জড়িত, এমন অভিযোগ তার।
ওই দুই ব্যক্তির হত্যার পর ভারতীয় মিডিয়া দাবি করে, রিয়াজ ছিলেন লস্কর-ই-তাইবার (এলইটি) একজন শীর্ষ কমান্ডার। এলইটি পাকিস্তান-ভিত্তিক একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। নয়াদিল্লি দীর্ঘদিন ধরে এই গোষ্ঠীকে তাদের ভূখণ্ডে হওয়া কিছু ভয়াবহ হামলার জন্য দায়ী করে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা, যেখানে বন্দুকধারীরা তিন দিন ধরে ১৬৬ জনকে হত্যা করেছিল।
আর লতিফ ছিলেন পাকিস্তান-ভিত্তিক অপর সশস্ত্র গোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদের (জেইএম) শীর্ষ নেতা। ২০১৬ সালে পাঠানকোটে ভারতের একটি বিমানঘাঁটিতে হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ওই হামলায় সাত ভারতীয় সেনা ও এক বেসামরিক নিহত হয়।
পাকিস্তান এসব কথিত যোগসূত্র নিশ্চিত করেনি।
পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি হত্যাকাণ্ড ছাড়া অন্য কোন হত্যাকাণ্ডের কথা বলেনি। তবে কাজী তার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন যে সরকার আরও কিছু ঘটনার তদন্ত করছে। তিনি বলেন, “এই ধরনের আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার তদন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে চলমান।”
সন্দেহভাজন হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ছিল লাহোরের শিখ সম্প্রদায়ের নেতা পরমজিৎ সিং পানজওয়ারের হত্যাকাণ্ড। গত বছরের মে মাসে পানজওয়ারকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ভারত সরকার ২০২০ সালে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে পানজওয়ারকে ‘সন্ত্রাসী ব্যক্তি’ হিসেবে ঘোষণা করে। বিজ্ঞপ্তিতে তাকে ভারতে হামলা চালাতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ আনা হয়। ভারত সরকারের তালিকাভুক্ত ‘সন্ত্রাসী’ সলিম রহমানি ২০২২ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
সশস্ত্র গোষ্ঠী বিষয়ে গবেষণা করা সুইডেনের গবেষক আব্দুল সায়েদ মনে করেন, সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলো সত্যিই ভারত করলে ২০১৮ সালের জুনে লাহোরের ঘটনাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ওই ঘটনায় হামলাকারীরা লস্কর-ই তৈয়বার সহ-প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সাঈদের বাসস্থানের কাছে গাড়িবোমা বিস্ফোরণ ঘটায়।
তিনি বলেন, “পাকিস্তান সরকার এই ঘটনার জন্য ভারতীয় গোয়েন্দাদের দায়ী করেছে। এরপর ২০২২ সালের শুরু থেকে বিভিন্ন কাশ্মীরি সশস্ত্র গোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডারদের লক্ষ্য করে হামলার ঘটনা বেড়েছে।”
পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মঈদ ইউসুফ হাফিজ সাঈদের বাড়ির বাইরে হামলার জন্য ভারতকে দায়ী করেছিলেন। বর্তমানে পাকিস্তানের হেফাজতে থাকা সাঈদকে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার মূল হোতা মনে করে।
ভারত দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে যেন তারা হাফিজ সাঈদকে বিচারের মুখোমুখি করতে নয়াদিল্লির হাতে তুলে দেয়। সাঈদ অবশ্য ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন। সর্বশেষ এই দাবি ভারত সরকার গত বছরের ডিসেম্বরেও করেছিল।
দুই পরাশক্তিধর প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রধান বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু হলো মনোরম কাশ্মীর উপত্যকা। এই উপত্যকা বর্তমানে দুই ভাগে বিভক্ত, ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই এর কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করে।
এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে দেশ দুটি যুদ্ধও করেছে। ভারত পাকিস্তানকে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টায় এলইটি ও জেইএম এর মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সমর্থনের অভিযোগ করে। পাকিস্তান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তাদের বক্তব্য হলো- তারা কেবল ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারে কাশ্মীরিদের সমর্থন করে। ভারত কাশ্মীরের সশস্ত্র বিদ্রোহীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে অভিহিত করে।
সর্বশেষ সংবাদ প্রতিবেদনে আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করে ভারত পূর্বে পাকিস্তানের করা অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেছে। পাকিস্তানের অভিযোগ ছিল যে, নয়াদিল্লির গুপ্তচররা বিদেশের মাটিতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত।
জানুয়ারিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবের মিডিয়া ব্রিফিংয়ের পর, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযোগগুলোকে পাকিস্তানের ‘মিথ্যা’ প্রচারণা ছড়ানোর চেষ্টা বলে অভিহিত করে। একই সঙ্গে এও বলে যে, পাকিস্তান ‘যে কাজ করবে তার ফল ভোগ করবে’।
ভারতের বিবৃতিতে বলা হয়, “বিশ্বের কাছে এটা সুপরিচিত যে, পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসবাদ, সংগঠিত অপরাধ ও অবৈধ আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ভারত ও আরও অনেক দেশ স্পষ্টভাবে পাকিস্তানকে সতর্ক করে বলেছে যে, সন্ত্রাস ও সহিংসতার নিজস্ব সংস্কৃতিতে দেশটি নিজেই ধ্বংস হয়ে যাবে।”
তবে পাকিস্তানই এখন আর একমাত্র দেশ নয়, যারা ভারতের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছে।
নয়া দিল্লিকে বিদেশে বসবাসকারী ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যার চক্রান্তে সম্ভাব্য ভূমিকার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাও অভিযুক্ত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটররা গত নভেম্বরে অভিযোগ করেন যে, একজন ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার দ্বৈত নাগরিক শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুনকে নিউ ইয়র্কে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন।
নিখিল গুপ্তা নামের একজন মধ্যস্থতাকারীকে চেক রিপাবলিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তিনি একজন খুনি ভাড়া করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু নিখিল যে খুনিকে ভাড়া করতে চেয়েছিলেন, তিনি আসলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার লোক ছিলেন। এভাবেই পরিকল্পনাটি ধরা পড়ে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গত বছরের আগস্টে সে দেশের পার্লামেন্টে বলেছিলেন, ভারত ভ্যাঙ্কুভারের কাছে আরেক শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী হরদীপ সিং নিজ্জারকে হত্যা করেছে। এই অভিযোগের ফলে ভারত-কানাডা সম্পর্ক তলানিতে নামে।
ভারত নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে কোনো ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করে বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটরদের করা অভিযোগের তদন্ত করছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, বিদেশে হত্যাকাণ্ড চালানো ভারতের নীতি নয়।
সাইয়েদ নামের একজন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মনে করেন, যদি পাকিস্তানে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের জন্য ভারতীয় গুপ্তচররা দায়ী হয়, তাহলে পাকিস্তানের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ত্রুটি প্রমাণিত হয়।
তিনি বলেন, “যারা এই হামলার শিকার, তারা একসময় পাকিস্তানের পক্ষের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য ছিল। তাদের সহকর্মীরা তাদেরকে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চাপ দিয়েছিল, কিন্তু তারা তা করেনি। তারা পাকিস্তানি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য বজায় রেখেছে।
“এই হামলাগুলোতে ভারতীয় গুপ্তচরদের হাত থাকতে পারে। এমনটা হলে ভারতের নীতিতে পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করা যেতে পারে। ভারত হয়তো কাশ্মীরে বিদ্রোহ বৃদ্ধি রোধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গোপন অভিযান চালাচ্ছে। যদি তাই হয়, তাহলে এটি ভারতের পক্ষ থেকে একটি চতুর পদক্ষেপ।”
দুজন ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা দ্য গার্ডিয়ানকে জানান, ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি কনভয়ে হামলা চালিয়ে ৪০ জন সেনাকে হত্যা করে। এরপর থেকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা বিদেশে থাকা বিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোকে বেশি গুরুত্ব দেয়। জেইএম ওই হামলার দায় স্বীকার করেছিল।
নরেন্দ্র মোদী সেই সময় দ্বিতীয় মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন এবং হামলার পর ক্ষমতায় ফিরে আসেন।
ভারতীয় এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “পুলওয়ামার ঘটনার পর দেশের বাইরে থাকা জঙ্গিদের আক্রমণ করার আগেই তাদের টার্গেট করার নীতি নেওয়া হয়। আমরা আক্রমণ বন্ধ করতে পারিনি। কারণ শেষ পর্যন্ত তাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল পাকিস্তানে। তাই আমাদের উৎসের কাছাকাছি যেতে হয়েছিল।”
ভারতীয় আরেক কর্মকর্তা জানান, ভারত ইসরায়েলের মোসাদ ও রাশিয়ার কেজিবির মতো গোয়েন্দা সংস্থা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছে। এই সংস্থাগুলো বিদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
দুটি পৃথক পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা ২০২০ সাল থেকে ২০ জনের হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার সন্দেহ করছে।
তদন্তকারীরা বলেছেন, তারা পাকিস্তানের মাটিতে ভারতীয় গুপ্তচরদের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের সাতটি মামলায় গোপনীয় তদন্তের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রমাণ পেয়েছেন। এই প্রমাণের মধ্যে রয়েছে সাক্ষীদের মতামত, গ্রেপ্তারের রেকর্ড, আর্থিক বিবৃতি, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ও পাসপোর্ট।
এই প্রমাণগুলো বিস্তারিতভাবে দেখায় যে ভারতীয় গুপ্তচররা কীভাবে পাকিস্তানে লোকজনকে হত্যার জন্য অভিযান চালিয়েছে। দ্য গার্ডিয়ান নথিগুলো দেখেছে কিন্তু সেগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।
পাকিস্তানের দাবি, হত্যাকাণ্ডগুলো নিয়মিত সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে সমন্বয় করা হতো। আরএডব্লিউ সেখানে ‘স্লিপার সেল’ স্থাপন করেছিল। এই সেলগুলো অপারেশনের বিভিন্ন অংশ আলাদাভাবে ব্যবস্থা করত এবং হত্যাকারীদের নিয়োগ দিত।
তদন্তকারীদের অভিযোগ, এই হত্যাকাণ্ডগুলো চালাতে কোটি কোটি টাকা অপরাধী কিংবা দুর্দশাগ্রস্ত স্থানীয়দের দেওয়া হতো। নথিপত্রে দাবি করা হয়, এই অর্থ পরিশোধ সাধারণত দুবাইয়ের মাধ্যমে করা হতো। এছাড়া আরএডব্লিউর হ্যান্ডলাররা নেপাল, মালদ্বীপ ও মরিশাসে বৈঠক করে এই হত্যাকাণ্ডের তদারকি করত বলে জানা যায়।
তথ্যসূত্র : দ্য গার্ডিয়ান ও আল জাজিরা