Beta
বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ কি কেবল বললেই হবে, প্রশ্ন সালেহউদ্দিনের

বৃহস্পতিবার ইআরএফের বাজেট-পরবর্তী আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন 
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বৃহস্পতিবার ইআরএফের বাজেট-পরবর্তী আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ।
[publishpress_authors_box]

বাজেট প্রস্তাবনায় কেবল ‘স্লোগান’ দিয়ে লোকজনকে বোকা বানানোর সময় শেষ হয়ে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ইন্টারনেটের ওপর কর, মোবাইল ফোনের ওপর ভ্যাট, যেখানে পারবেন কর বসাবেন; স্মার্ট বাংলাদেশ কি কেবল বললেই হবে?  

বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টনে অর্থনৈতিক বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত বাজেট-পরবর্তী আলোচনা সভায় এ কথা বলেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, “উন্নত দেশ! সব সূচকেই তো আমরা পিছিয়ে। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইনোভেশন ইনডেক্সে ২০২৩ প্রকাশ করেছে। তাতে ১২৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৫। ভারতের অবস্থান ৪০।

“এমনকি পাকিস্তানকে এত গালিগালাজ দেই- তাদের ইন্টারনেট স্পিড আমাদের থেকে বেশি।… আমার ছেলে বিদেশ থেকে দেশে এলে বলে, এখানে ইন্টারনেট স্পিড ও ব্যান্ডউইথড অনেক কম। ঘোড়ার ডিমের ইন্টারনেট।…”  

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “কর্মসংস্থান কম, আয়ের উৎস নেই। ছোট ছোট ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার লাভ করছে-একটা সুখী ব্যাপার! বাংলাদেশের মানুষ অল্পতেই খুশি।

“সম্প্রতি আমি পর্যবেক্ষণ করলাম, বাড়ির দারোয়ানরা কী খায়। সকালে মিষ্টি কুমড়া, আলু, পেঁপে দিয়ে এক গামলা সবজি আর পেট ভরে ভাত খায়। আরেক জায়গায় দেখলাম, দুপুরে কাঁচাকলার ঝোল আর ভাত। জানতে চাইলাম কেন? তারা বলে এটাইতো খাই স্যার। এটা যদি দেখে আমাদের মন্ত্রী বলেন- ‘আমরা সুখে আছি, আমাদের অভাব নাই।’ এই আমাদের দেশ, আজকে পঞ্চাশ বছর পর। এখনও ভেজিটেবল ক্যাটাগরি। বড় বড় কুমড়া কারা কেনে- যারা মেসে থাকে, গার্মেন্ট কর্মী। এই হলো সুখী, সমৃদ্ধ।”  

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সময়ের কথাও তোলেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, “অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সময়ের একটি বাজেটের স্লোগান ছিল, ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ’। আমি একবার প্রশ্ন করেছিলাম, স্যার আপনার মহাসড়ক কি শেষ হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, আমি এটা রূপক অর্থে বলেছিলাম। এটা ৫-১০ বছর লাগবে।”  

‘এই স্লোগান দেওয়ার কোনও অর্থ হয় না’ মন্তব্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর বলেন, “এইসব স্লোগান দিয়ে লোকজনকে বোকা বানানোর সময় শেষ হয়ে এসেছে। এজন্য এখানে উল্লেখ করা দরকার ছিল বাজেটে সত্যিকারের প্রায়োরিটিগুলো।

“আমি সব সময় বলি- মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ এবং তৃতীয় প্রায়োরিটি হওয়া দরকার জ্বালানি। এরপর সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)। এই তিনটি খাতে যদি বাজেটে কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ থাকতো, তাহলে আর কিছু বলা লাগতো না। আশা করা যেত, মূল্যস্ফীতি ডিসেম্বরের মধ্যে কমে যাবে।”

‘শুধু সংকোচনমূলক নীতি নিলে তো হবে না, তাতে চাহিদাও সংকোচন হয়ে পড়বে’ বলে মনে করেন সালেহউদ্দিন।

তিনি বলেন, “কিন্তু সরকার বাজেট ঘাটতি মেটাতে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেবে, তা কি গুলশান-বনানীর রেস্টুরেন্টে যাবে না? ব্যবসা-বাণিজ্য যদি প্রসারিত না হয় কর তুলবেন কোথা থেকে? রাজস্ব বোর্ডের বিশেষত্ব, শর্টকাট পদ্ধতিতে টাকা ওঠানো। করের একটা নীতি থাকা দরকার। যার সামর্থ আছে তার কাছ থেকে কর নেন। পরোক্ষ করের প্রভাব যার সামর্থ নেই তার ওপরও পড়ে।”

মেঘনাদবধ কাব্যের কথাও বক্তব্যে টেনে আনেন সালেহউদ্দিন। তিনি বলেন, “সরকারকে হতে রোদ্র এবং মেঘের মতো। সবার রোদের দরকার হয়, একারণে সরকারকে রোদের মতো সবার পাশে থাকতে হবে। মেঘ নির্ধারিত কিছু লোকের দরকার হয়। তাদের মেঘের মতো ছায়া দিতে হবে।”   

দেশের পুঁজিবাজারের প্রসঙ্গ তুলে সাবেক এই গভর্নর বলেন, “পার্শ্ববর্তী দেশের পুঁজিবাজারের সেনসেক্স (মূল্যসূচক) বেড়ে অনন্য উচ্চতায় উঠেছে। আর আমাদের দেশের পুঁজিবাজার এখনও দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। অথচ পুঁজিবাজার, ব্যাংক- এগুলি অর্থনীতির স্তম্ভ। এই স্তম্ভগুলো দুর্বল। বাজেট ব্যয় যুক্তিসংগত হতে হবে। নতুন করে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন করার দরকার নাই।”

গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট দেশে পরিণত করা।”

আলোচনা সভায় বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা না বাড়ানোয় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “মূল্যস্ফীতির বিষয়টি মাথায় রেখে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো দরকার ছিল। কর সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ। এই ব্যবস্থাপনা দিয়ে সীমিত আয়ের মানুষের সমস্যা লাঘব হবে না। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে সৎ কর দাতাকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তারাও মনে করবে, কিছুদিন অপেক্ষা করলে সেও ১৫ শতাংশ কর দিতে পারবে।

“মানুষের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এসেছে, তিনবেলা থেকে দুই বেলা। এখানে সরকারের অনেক কিছু করার সুযোগ ছিল। ঋণ খেলাপিরাই ব্যাংকিং খাতের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। ঋণ খেলাপি হওয়া এখন একটা ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে।”

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. এ কে এম এনামুল হক বলেন, “আমরা বাজেট থেকে বিশাল কিছু আশা করতে পারি না। বাজেটে ইনস্টাবিলিটি, চ্যালেঞ্জগুলো এড্রেস করা দরকার ছিল। ১৫ শতাংশ বাজেটের ১০-১২ শতাংশ বেতন দিতে চলে যায়। সরকারের আয়ে স্মার্টনেস আসা দরকার ছিল।”

ইআরএফ সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসেন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত