পর্নো তারকাকে ঘুষ দেওয়ার তথ্য গোপন রাখতে ব্যবসায়িক রেকর্ডে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করেছে নিউইয়র্কের আদালত।
এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীন বা সাবেক কোনও প্রেসিডেন্ট ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলেন।
ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও আদালত অবশ্য এখনও সাজা ঘোষণা করেনি। আগামী ১১ জুলাই সাজা ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছে।
এ বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা ৩৪টি অভিযোগের সবগুলোতেই আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। এতে তার কী সাজা হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা চলছে নানা মহলে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবসায়িক রেকর্ডে জালিয়াতির দায়ে সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। তবে সাজা ঘোষণার আগে ট্রাম্পকে জেলে পাঠানো হবে না।
অবশ্য এ ধরনের মামলায় এর আগে যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তাদের বেলায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আরও কম মেয়াদে কারাদণ্ড, জরিমানা অথবা নজরদারিতে রাখার (প্রবেশন) নজির রয়েছে।
৭৭ বছর বয়সী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা প্রতারণার অভিযোগগুলো ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে মুখ বন্ধ রাখতে দেওয়া ঘুষের অর্থ সংক্রান্ত।
ওই পর্নো তারকার সঙ্গে ট্রাম্পের যৌন সম্পর্ক ছিল। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে তা গোপন রাখার জন্যই ট্রাম্প ওই পর্নো তারকাকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন। ঘুষ বাবদ অর্থ খরচের বিষয়টি গোপন রাখতে ট্রাম্প তার ব্যবসায়িক রেকর্ডেও জালিয়াতির আশ্রয় নেন।
ট্রাম্প অবশ্য নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। তার দাবি, তিনি যে অভিযোগগুলোর মুখোমুখি হচ্ছেন, তা ফৌজদারি অপরাধমূলক নয়।
ন্যায়বিচার পাননি দাবি করে এই রায়ের বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়ার কথাও বলেছেন ট্রাম্প। একইসঙ্গে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
সিবিএস নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবসায়িক রেকর্ডে জালিয়াতির সর্বোচ্চ সাজা চার বছর হলেও সর্বনিম্ন কোনও কারাদণ্ড না দেওয়ার সুযোগও রয়েছে। সেক্ষেত্রে ট্রাম্পকে নজরদারিতে রাখা বা শর্তসাপেক্ষে মুক্তির আদেশ দেওয়া হতে পারে। তবে আইনে যেহেতু রয়েছে, সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চার বছরের সাজাও হতে পারে।
ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসের হয়ে এর আগে এ ধরনের মামলা চালানো আইনজীবী ড্যান হরউইটজের মতে, আইন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যেহেতু সব অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে, সেক্ষেত্রে প্রতিটি অভিযোগে তার সর্বোচ্চ কারাদণ্ডের সাজাও যদি হয়, সব সাজা একসঙ্গে চলবে বিধায় তাকে সর্বোচ্চ চার বছরই কারাগারে থাকতে হবে।
হরউইটজ বলেন, “বিচারক তাকে কারাদণ্ড না দেওয়া থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ সাজা দিতে পারেন। বিচারক তাকে কয়েক মাসের কারাদণ্ড দিতে পারেন, এমনকি কয়েক সপ্তাহের কারাদণ্ডও দিতে পারে। এছাড়া বিচারক তাকে এমন সাজাও দিতে পারেন, যেখানে, উদাহরণস্বরূপ, তাকে প্রতি সপ্তাহান্তে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কারাগারে কাটাতে এবং বাকি সময় নজরদারিতে থাকতে হতে পারে।”
এছাড়া ট্রাম্পকে আদালত গৃহবন্দি রাখার আদেশও দিতে পারেন জানিয়ে আইনজীবী হরউইটজ বলেন, তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে বাড়িতে গৃহবন্দি রেখে নজরদারির আদেশও দিতে পারেন আদালত।
আর এটি একেবারে কোনও কারাদণ্ড না দেওয়া ও কারাগারে বন্দি রাখার একটি মাঝামাঝি অবস্থা হওয়ায়, ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এমন সাজার আদেশ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি দেখেন হরউইটজ। এর মাধ্যমে ট্রাম্পের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিও সামাল দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক ও আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ আইনজীবী ব্রুস ফেইনের মতে, এই ধরনের মামলায় সাধারণত, আসামি কতটা অনুতপ্ত, তার ওপর ভিত্তি করে তাকে কারাদণ্ড দেওয়া বা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
“তবে আমি মনে করি, তাকে যদি দোষী সাব্যস্ত করা হয়, তাহলে তার চরিত্রের কারণেই তাকে হয়ত অন্তত কিছু সময়ের জন্য কারাগারে পাঠানো হতে পারে।”