মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতি তার রাজনৈতিক ও সামরিক সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার কারণ শুধুই কি কূটনৈতিক ব্যর্থতা, নাকি অন্য কিছু? যুক্তরাষ্ট্র আসলেই কী চায়?
একটি আইসক্রিম কোন হাতে ধরা অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা করেছিলেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়িত হতে পারে।
কিন্তু ওই ঘোষণার পর প্রায় ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও আজও সেখানে যুদ্ধবিরতির দেখা মেলেনি। এমনকি গত মাসের শেষ সপ্তাহে যুদ্ধ গাজা থেকে লেবাননেও সম্প্রসারিত হয়েছে। ইসরায়েল গত তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে লেবাননে একই সঙ্গে আকাশ ও স্থলপথে হামলা চালাচ্ছে। এতে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বাইডেন প্রশাসন মুখে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও ইসরায়েলকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিকভাবে সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি অস্ত্র ও বোমা সরবরাহ করে যাচ্ছে।
ওয়াশিংটন এ বছর ইসরায়েলের প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। বৈরুত ও তেহরানে হামাস নেতাদের হত্যা, হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা এবং দক্ষিণ লেবাননে আক্রমণ— কোনোটিরই প্রতিবাদ জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েল অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে ইতোমধ্যে ৪২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আর এখন প্রতিদিনই লেবাননে বোমা হামলা চালানোর পাশাপাশি ইরানের ওপরও আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল।
গাজার সংঘাত যতই তীব্র হচ্ছে এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে, ততই যুক্তরাষ্ট্রের কথা ও কাজের অমিলও ধরা পড়ছে।
তাই প্রশ্ন উঠেছে, বাইডেন প্রশাসন কি আসলেই ইসরায়েলের লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে, যেমনটা অনেক উদারপন্থী ভাষ্যকার বলছেন? নাকি বিশৃঙ্খলাকে কাজে লাগিয়ে ইরান, হামাস ও হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে একটি আগ্রাসী এজেন্ডাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রই আসলে দায়ী?
বিশ্লেষকরা বলছেন, সংযম এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো সত্ত্বেও ইসরায়েলের প্রতি ক্রমাগত সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন দেওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রও এই সহিংসতার একটি মূল চালক। বাইডেন প্রশাসন আসলেই কী চায় তা অনুমান করা কঠিন হলেও এমন অনেক দৃশ্যমান প্রমাণ রয়েছে, যা থেকে বোঝা যায় যে, বাইডেন প্রশাসন আদতে ইসরায়েলের দোসর। বিষয়টা এমন নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র নিষ্ক্রিয় রয়েছে এবং ইসরায়েল তার কোনও কথা শুনছে না।
যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত কী বলেছে এবং করেছে
গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য মাসব্যাপী প্রকাশ্যে চাপ প্রয়োগের পরও ইসরায়েল লেবাননে হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্র এতে সমর্থন দেয়। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন গত সপ্তাহে দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের স্থল অভিযানকে সমর্থন করেছেন, যা একটি পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসনে রূপান্তরিত হতে পারে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর অস্টিন এক বিবৃতিতে বলেন, “আমি স্পষ্ট করে দিয়েছি যে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে।
“আমরা লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলে হামলায় ব্যবহৃত হিজবুল্লাহর অবকাঠামো ভেঙে ফেলার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছি, যাতে গত বছর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের চালানো হামলার মতো হিজবুল্লাহও ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে কোনও হামলা না চালাতে পারে।”
গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সদস্যরা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ঢুকে পড়ে এক নজিরবিহীন হামলা চালায়। ওই হামলায় ১ হাজার ১৩৯ নিহত হয়। এ ছাড়া হামাস ২৫০ জনকে জিম্মি করেও নিয়ে যায়। ওই হামলার পরপরই ইসরায়েল গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার নামে ধ্বংসযজ্ঞে মেতে ওঠে।
গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর হামাসের সমর্থনে লেবাননের হিজবুল্লাহ প্রায়ই ইসরায়েলি সামরিক অবস্থানগুলোতে রকেট হামলা চালাতে থাকে। হিজবুল্লাহর দাবি, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে ইসরায়েল সরকারকে চাপ দেওয়ার জন্যই তারা দেশটিতে রকেট হামলা চালায়।
কয়েক মাস ধরে প্রায় প্রতিদিনই হিজবুল্লাহর সঙ্গে সীমান্তে ইসরায়েলের সংঘর্ষ হত। এতে সীমান্তের উভয় পাশের হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। ইসরায়েলের প্রায় ৬০ হাজার বাসিন্দা সরে যেতে বাধ্য হয়। হিজবুল্লাহ বলেছিল, ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দারা তখনই ঘরে ফিরতে পারবে যখন দেশটি গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করবে।
এতে গত মাসের মাঝামাঝি লেবাননে পরপর দুদিন ডিভাইস হামলার এক সপ্তাহ পর দক্ষিণ লেবাননে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গত ১ অক্টোবর থেকে স্থল হামলাও শুরু করেছে। ইসরায়েলি হামলায় শত শত গ্রাম ও শহরে অসংখ্য বেসামরিক বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। বাস্তুচ্যুত ১২ লাখের বেশি মানুষ।
ইসরায়েলি হামলায় ইতোমধ্যে হিজবুল্লাহর বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাসহ ২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং ১০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।
এই হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্র কয়েক মাস ধরে বলে আসছিল, তারা লেবানন-ইসরায়েল সীমান্ত সংঘাতের কূটনৈতিক সমাধানের জন্য কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের দূত আমোস হোচস্টেইন উত্তেজনা না বাড়ানোর জন্য দুই দেশকে সতর্ক করতে ওই অঞ্চলে বারবার পরিদর্শনও করেন।
কিন্তু ইসরায়েল ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করলে ছোটখাটো সীমান্ত সংঘর্ষ এক সর্বাত্মক যুদ্ধে পরিণত হয়। তখন আরব ও ইউরোপীয় দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে জাতিসংঘের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র গত ২৫ সেপ্টেম্বর যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য একটি ‘তাৎক্ষণিক’ ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়।
কিন্তু ওই প্রস্তাবের দুদিন পরই ইসরায়েল বৈরুতে ভয়াবহ বোমা হামলা চালিয়ে হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করে। ওই হামলায় বৈরুতের বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবন মাটির সঙ্গে মিশে যায়। এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েল স্পষ্টতই জানিয়ে দেয়- তারা কোনও যুদ্ধবিরতিতে যাবে না। হোয়াইট হাউসও হাসান নাসরাল্লাহর হত্যাকাণ্ডকে ন্যায়বিচার বলে আখ্যায়িত করে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অবস্থায়ই হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেসময় তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশগ্রহণের জন্য নিউইয়র্কে ছিলেন।
সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের অধ্যাপক ওসামাহ খলিল বাইডেনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। হোচস্টেইন ইসরায়েলকে সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন বলে মিডিয়ায় যেসব রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে সেসব নিয়েও তিনি সন্দেহ উত্থাপন করেছেন।
খলিল জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজাসহ বাকি অঞ্চলেও ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারী এবং সমর্থক ছিল। তবে বাইডেন প্রশাসন যুদ্ধবিরতি আলোচনাকে নিজ দেশে সমালোচনা থেকে বাঁচতে একটি ‘ঘরোয়া রাজনীতি’র কৌশল হিসাবে ব্যবহার করেছিল।
গত মাসে আল জাজিরাকে খলিল বলেছিলেন, “এটা শুধু লোক দেখানো আলোচনা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের ফলে বাইডেন প্রশাসন মুখে যুদ্ধবিরতির কথা বললেও বাস্তবে যুদ্ধ বন্ধে কিছুই করেনি।”
‘মধ্যপ্রাচ্যকে পুনর্গঠন’
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমের দুটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন খলিলের দাবির সত্যতা প্রমাণ করে।
দ্য পলিটিকো গত ৩০ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মধ্যপ্রাচ্য সমন্বয়ক হোচস্টেইন এবং ব্রেট ম্যাকগার্কসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হিজবুল্লাহর ওপর ইসরায়েলি হামলাকে ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করেছেন।
পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়, “পর্দার আড়ালে হোচস্টেইন, ম্যাকগার্ক এবং অন্যান্য শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা লেবাননে ইসরায়েলি অভিযানকে একটি ইতিহাস-নির্ধারক মুহূর্ত হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এর মধ্য দিয়ে সামনের বছরগুলোতে মধ্যপ্রাচ্য নতুন আকার পাবে এবং পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তারা দাবি করেন।”
এরপর গত সপ্তাহে অ্যাক্সিওস রিপোর্ট করেছে, ইসরায়েল হিজবুল্লাহর ওপর যে আঘাত করেছে লেবাননে তার সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন সেখানে তাদের সমর্থিত একজন প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করাতে চাইছে।
লেবাননে প্রায় দুই বছর ধরে কোনও প্রেসিডেন্ট নেই, পদটি শূন্য রয়েছে। বিভক্ত লেবানন পার্লামেন্ট নতুন নেতা নির্বাচনের জন্য ঐকমত্য খুঁজে পায়নি। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার লেবানন যুদ্ধকে রাজনৈতিকভাবে দেশটিকে পরিবর্তন করার একটি ‘সুযোগ’ হিসাবে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, ওয়াশিংটন চায় লেবাননের জনগণের “নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার ক্ষমতা এবং দেশটিতে হিজবুল্লাহর যে প্রভাব রয়েছে তা ভাঙার ক্ষমতা থাকুক”।
অবাধ নির্বাচনের ফলে হিজবুল্লাহ ও তার মিত্ররা লেবাননের পার্লামেন্টের কয়েক ডজন আসন নিয়ন্ত্রণ করে।
এই অঞ্চলের পুনর্গঠন সবসময়ই যুক্তরাষ্ট্রের নব্য রক্ষণশীলদের একটি লক্ষ্য ছিল। তারা ইসরায়েলকে সমর্থন করে এবং আগ্রাসী বৈদেশিক নীতি ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-বান্ধব সরকারগুলোকে ক্ষমতায় আনে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় বিষয়টি সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান ছিল।
এমনকি বুশের আমলে, ১৮ বছর আগে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহর সর্বশেষ বড় যুদ্ধের সময় প্রতিরক্ষামন্ত্রী কন্ডোলিসা রাইস ‘নতুন মধ্যপ্রাচ্যের জন্মের প্রসব বেদনা’ নিয়ে কথা বলেছিলেন।
খলিল উল্লেখ করেন, বুশ যুগের অনেক নব্য রক্ষণশীল এখন ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে যুক্ত এবং নভেম্বরের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করছেন।
হ্যারিস সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির অনুমোদনকেও স্বাগত জানিয়েছেন, যিনি তথাকথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ এবং ২০০৩ সালে ইরাকে আগ্রাসনের শীর্ষ স্থপতিদের একজন।
সেসময় সেনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির সভাপতি হিসাবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনও ইরাক যুদ্ধকে সমর্থন করেছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনও তাই করেছিলেন, যিনি সেই সময়ে প্যানেলে ডেমোক্র্যাটিক কর্মী হিসাবে কাজ করেছিলেন। বুশের আমলে ম্যাকগার্ক হোয়াইট হাউসের একজন উপদেষ্টা ছিলেন এবং ইরাক দখলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আর হোচস্টেইন অতীতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীতে কাজ করেছিলেন।
খলিল বলেন, “স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে ডেমোক্রেট সরকারের নব্য রক্ষণশীল এজেন্ডা আছে।”
গাজার ব্যর্থতা
অনেক বিশ্লেষক বলেছেন, গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটাতে বাইডেনের ব্যর্থতাই অঞ্চলটিকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। লেবাননে ইসরায়েলি হামলার জেরে বিশ্ব ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যেও সম্ভাব্য যুদ্ধের অপেক্ষায় আছে।
আরব সেন্টার ওয়াশিংটন ডিসির নির্বাহী পরিচালক খলিল জাহশানও বলেছেন, ইসরায়েলের নেতানিয়াহু সরকারের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের নিঃশর্ত সমর্থন পুরো মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলকে ‘অজানা’ গন্তব্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
জাহশান আল জাজিরাকে বলেন, “গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র কেবল ইসরায়েলি নীতিই নয়, ‘ইসরায়েলের বাড়াবাড়ির’ প্রতিও ‘সম্পূর্ণ অন্ধ সমর্থন’ দেখিয়েছে।”
তিনি বলেন, “এটি একটি একতরফা নীতির ফলাফল, যা এই সংঘাতের শুরু থেকে যৌক্তিক কোনও উপাদান গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে।”
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পরপরই বাইডেন ইসরায়েলের প্রতি আপোষহীন সমর্থনের কথা বলেছিলেন।
তিনি হামাসের বিরুদ্ধে একটি ‘দ্রুত, সিদ্ধান্তমূলক এবং অপ্রতিরোধ্য’ ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়া সমর্থন করেছিলেন। হোয়াইট হাউস যুদ্ধে অর্থায়নে সহায়তার জন্য ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তার জন্য কংগ্রেসের কাছ থেকে অতিরিক্ত তহবিল চাইতেও ছুটে যায়।
কয়েক মাস ধরে ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট সত্ত্বেও ওয়াশিংটন জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির আহ্বানগুলোকে প্রতিহত করেছে, এই যুক্তি দিয়ে যে, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার জন্য হামাসকে নির্মূলের ‘অধিকার’ রয়েছে।
প্রোপাবলিকা ও রয়টার্সের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, বাইডেন প্রশাসন গাজায় সম্ভাব্য ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে অভ্যন্তরীণ সতর্কতা সত্ত্বেও তা উপেক্ষা করেছে এবং ইসরায়েলকে অস্ত্র দেওয়া অব্যাহত রেখেছে।
ইসরায়েল গাজার বিশাল অংশ ধ্বংস করে ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় সকলকে বাস্তুচ্যুত করার এবং তাদেরকে দুর্ভিক্ষের মুখে ঠেলে দেওয়ার পরে গিয়ে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক অসন্তোষ বাড়লে বাইডেন তার সুর নরম করতে শুরু করেন।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তির আহ্বান জানাতে ‘যুদ্ধবিরতি’ শব্দটি গ্রহণ করেছে, যার মধ্য দিয়ে গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটবে এবং ইসরায়েলি জিম্মিরা মুক্তি পাবে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার মতো বাস্তব কিছুই করেনি।
বাইডেন ও তার সহযোগীরা সত্যিকার অর্থেই যুদ্ধবিরতি চেয়েও তা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। অথবা যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে চোখ ফেরানোর কৌশল হিসেবে কূটনৈতিক আলোচনাকে ব্যবহার করেছে। এই দুটির যেটিই সত্য হোক না কেন ফলাফল একই— একটি বিস্তৃত যুদ্ধ এবং হাজার হাজার নিরীহ মানুষের মৃত্যু।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ন্যাশনাল ইরানিয়ান আমেরিকান কাউন্সিলের (এনআইএসি) নীতি পরিচালক রায়ান কস্টেলো বলেছেন, “দৃশ্যমান সাক্ষ্য-প্রমাণগুলো থেকে বোঝা যায়, তারা মূলত রাজনৈতিক সুবিধার জন্য যুদ্ধবিরতির প্রতি তাদের সমর্থনের কথা বলেন। কিন্তু যুদ্ধ থামানোর জন্য বাস্তব কোনও পদক্ষেপ নেন না।”
এনআইএসি ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর পরামর্শ দেয়।
জাহশান আরও বলেছিলেন, বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলকে অস্ত্র দেওয়া অব্যাহত রাখায় তাদের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবও অনর্থক।
তিনি বলেন, “যারা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিচ্ছেন তারাই যদি কোনো একটি পক্ষকে যুদ্ধের হাতিয়ার সরবরাহ করা অব্যাহত রাখেন, তাহলে এর মূল্য কী!
“এটা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নয়; এটা কৌশলে লড়াই চালিয়ে যাওয়ারই আমন্ত্রণ।”
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা