ইসলামী ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি, প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ নিয়ে গেছে। ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণে থেকে সাত বছর ধরে এই ঋণ বের করে নিয়েছে এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠী।
ইসলামী ব্যাংকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে বলেন, এসব ঋণের পূর্ণাঙ্গ হিসাব এখন বের করা হচ্ছে। এস আলমের ঋণের বিপরীতে যেসব সম্পদ বন্ধক দেওয়া আছে, তারও পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে। কারণ, এসব সম্পদের দাম বেশি দেখিয়ে এই ঋণ নেওয়া হয়।
এছাড়া কোনও বন্ধক নেই- এমন ঋণ উদ্ধারের জন্য এস আলম গ্রুপের সম্পদের খোঁজ নিতে আইন মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। তিনি বলেন, এসব সম্পদ খুঁজে পাওয়ার পর তা ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
ইসলামী ব্যাংক এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার পর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকটির নতুন পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সভা হয়। ওই সভা শেষে ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ব্যাংকের পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
গত ২২ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
তিনি ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকে এবং ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত রূপালী ব্যাংকের এমডি ছিলেন তিনি।
ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ সাংবাদিকদের বলেন, “হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর সোনালী ব্যাংকের দায়িত্ব পেয়েছিলাম। হলমার্কের ঘটনা আলোচনায় আসার পরও সোনালী ব্যাংকে আমানত বেড়েছিল। ইসলামী ব্যাংকের সমস্যাটি অনেক বড়। এ জন্য আমরা দায়িত্ব নিয়েই একটি পথনকশা তৈরি করেছি। প্রতিদিন ব্যাংকে উপস্থিত থেকে তদারকির চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “চলতি বছর পুরোটাই হবে গ্রাহকের আস্থা ফেরানোর বছর। সামনের বছরেও এ কাজ চলবে। ২০২৬-২৭ সাল হবে ঘুরে দাঁড়ানোর বছর। ২০২৮-৩০ সাল এগিয়ে যাওয়ার বছর।”
২০২২ সালে ইসলামী ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট শুরু হয় বলে জানান ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এখন ব্যাংকের গ্রাহক, প্রবাসী আয় পাঠানো গ্রাহক, শেয়ারধারী ও বিদেশি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান- কেউই ব্যাংকের উপর আস্থা পাচ্ছে না। এ জন্য ব্যাংকের প্রকৃত অবস্থা যাচাইয়ে তিনটি অডিট ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা ব্যাংকের ঋণ, বিনিয়োগ ও মানবসম্পদ নিরীক্ষা করবে। আগে ভালো নিরীক্ষা হয়নি, তাই ব্যাংকের এই পরিণতি।
অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নে ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ সাংবাদিকদের বলেন, ব্যাংকের টাকা ভিন্ন খাতে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ‘নিচের দিকের’ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তবে ‘দুষ্টু কর্মকর্তাদের’ চিহ্নিত করা হচ্ছে। ধীরে ধীরে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পরিস্থিতি উত্তরণে বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা করবে বলে জানান তিনি।
২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম। ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা।
নতুন চেয়ারম্যানের দেওয়া হিসাব মতে, ব্যাংকটি থেকে এর মধ্যে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা একাই বের করে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ।
এর আগে গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরও ইসলামী ব্যাংক সম্পর্কে প্রায় একই ধরনের তথ্য দিয়েছিলেন।
তিনি জানান, ৭-৮টি ব্যাংকের তারল্য সঙ্কট চলছে। এর কারণ হিসেবে গভর্নর বলেন, ব্যাংকগুলো থেকে বড় অঙ্কের ঋণ বের করে নেওয়া হয়েছে।
“ইসলামী ব্যাংকের অর্ধেক টাকা নাই হয়ে গেছে। ১-২ বছর সময় লাগবে এসব ব্যাংক মেরামত করতে”, বলেন তিনি।