Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

নারী কমিশনের প্রতিবেদনও ইসলামী দলগুলোর বিরোধিতায়

গত ১৯ এপ্রিল নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দেন।
গত ১৯ এপ্রিল নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দেন।
[publishpress_authors_box]

এক যুগ আগে আওয়ামী লীগ সরকার প্রণীত নারী উন্নয়ন নীতির বিরোধিতায় যেভাবে ইসলামী দল ও সংগঠনগুলো নেমেছিল, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনও একই রকম বিরোধিতার মুখে পড়েছে।

গত ১৯ এপ্রিল নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর তাদের বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তারপরই এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন নিয়ে আপত্তি আসে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ইসলামী দলগুলোর কাছ থেকে।

২০১১ সালে প্রণীত নারী উন্নয়ন নীতির বিরোধিতায় রাজপথে নামা হেফাজতে ইসলাম এই কমিশন বাতিলের দাবি তুলে সরকারকে আগামী ৩ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে। তার মধ্যে তাদের দাবি মানা না হলে আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটি।

নারী উন্নয়ন নীতিতে আপত্তি জানিয়ে গড়ে ওঠা হেফাজতে ইসলাম শাহবাগের গণজাগরণ আন্দোলনের বিরোধিতায় নেমে ২০১৩ সালের ৬ মে মতিঝিলে শাপলা চত্বরে সমাবেশ করেছিল।

সংঘাত-সহিংসতার মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ওই সমাবেশ থেকে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের তুলে দিয়েছিল। শেখ হাসিনা সরকারের সেই দমননীতিতে গণহত্যার অভিযোগে বিচারের প্রস্তুতি চলছে এখন অন্তর্বর্তী সরকার আমলে।

তার মধ্যেই নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে ফের রাজপথে নামার হুমকি দিল হেফাজতে ইসলাম।

কী আছে সুপারিশে

ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারে কয়েকটি কমিশন গঠন করে। শিরীন পারভিন হকের নেতৃত্বে গঠিত হয় ১০ সদস্যের নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন।

গত শনিবার তারা যে প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টাকে দেন, তার শিরোনাম ছিল- ‘সর্বক্ষেত্রে সর্বস্তরে নারীর প্রতি বৈষম্য বিলুপ্তি এবং নারী–পুরুষের সমতা অর্জনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ চিহ্নিতকরণ’।

সেখানে নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি সংবিধান থেকে বৈষম্যমূলক বিষয়গুলো বাদ দেওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রধর্মের বিধান বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীদের জন্য বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিত করতে অধ্যাদেশ জারির সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে নারী বিষয়ক কমিশন প্রতিষ্ঠা, নারীর প্রতি সহিংসতা ও হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার করা, বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে ফৌজদারি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা, ধর্ষণের শিকার হওয়া অন্য লিঙ্গের মানুষের বিচার ও আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিতে আইনে ধর্ষণ ধারায় সংস্কার আনা, যেকোনো উপস্থাপনায় অহেতুক নারীর প্রসঙ্গ টেনে নারীবিদ্বেষী বয়ান, বক্তব্য ও ছবি পরিবেশন থেকে বিরত থাকা, নারীর প্রতি সম্মানজনক, মর্যাদাপূর্ণ ও যথাযথ সংবেদনশীল আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির লক্ষ্যে সামাজিক সচেতনতা বিষয়ক কর্মসূচি নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ড বিলুপ্ত করা, যৌনপেশাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত না করা এবং শ্রম আইন সংশোধন করে যৌনকর্মীদের মর্যাদা ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদের (সিডো) দুটি ধারার ওপর সংরক্ষণ প্রত্যাহার, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ১৮৯ ও ১৯০ অনুচ্ছেদ অনুস্বাক্ষর করার সুপারিশ করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন।

সংবিধানসহ বিভিন্ন আইনে নারীর প্রতি অবমাননাকর সব শব্দ বাদ দেওয়ার সুপারিশও করে সংস্কার কমিশন।

সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো সব প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ৬ মাস ছুটি দেওয়া এবং পূর্ণ বেতনসহ পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া, প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপনসহ ৪৩৩টি সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদনে।

কমিশন সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে সংসদীয় আসন বাড়িয়ে ৬০০ করে সেই আসন থেকে ৩০০ আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত রেখে সরাসরি নির্বাচনের সুপারিশ করে।

গত বছরের ১৮ নভেম্বর গঠিত এই কমিশনে নারীপক্ষ’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভিন হক ছাড়াও সদস্য ছিলেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের জ্যেষ্ঠ ফেলো মাহীন সুলতান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফৌজিয়া করিম ফিরোজ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার, নারী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হালিদা হানুম আখতার, বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান, নারীপক্ষের পরিচালক কামরুন নাহার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ সামাজিক উন্নয়ন উপদেষ্টা ফেরদৌসী সুলতানা ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিশিতা জামান নিহা।

ইসলামী দলগুলোর আপত্তি কোথায়

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন দেওয়ার পরদিনই হেফাজতে ইসলাম কার্যনির্বাহী কমিটি বিশেষ সভা করে এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে।

সভার পর সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক তাদের পাঁচটি দাবি তুলে ধরেন।

সেখানে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে আপত্তিকরভাবে ধর্মীয় বিধিবিধান, বিশেষ করে ইসলামী উত্তরাধিকার ও পারিবারিক আইনকে নারীর প্রতি বৈষম্যের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল ফেইসবুক পাতায় নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব প্রচারের নিন্দা জানিয়ে তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানায় হেফাজত।

মামুনুল হক বলেন, “আমরা এই প্রস্তাবনা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান এবং বাতিলের দাবি করছি। এই ধরনের বিতর্কিত, ইসলামবিদ্বেষী, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী, সরাসরি ইসলামবিরোধী, কোরআন-সুন্নাহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক, ন্যক্কারজনক কটাক্ষপূর্ণ প্রস্তাব দেওয়ার কারণে এই কমিশন বাতিলের দাবি করছি।

“প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেইজ থেকে এই প্রস্তাব প্রচার এবং সেটি এই সরকারের আমলে বাস্তবায়নের প্রত্যয় করা হয়েছে। আমরা এই ঘোষণা প্রত্যাহারেরও দাবি জানাচ্ছি।”

সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের নেতারা।

সংবাদ সম্মেলন থেকে আগামী ৩ মে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের সংগ্রামী মহাসচিব এই মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন। এই মহাসমাবেশের মূল উদ্দেশ্য ও দাবি নিয়ে আমরা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই।”

হেফাজতের অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে- আওয়ামী লীগ আমলে আমলে শাপলা চত্বরে ‘গণহত্যা’, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীবিরোধী আন্দোলনে হত্যাসহ বিভিন্ন সময় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার এবং হেফাজতের নেতাদের নামে করা মামলা প্রত্যাহার করা।

হেফাজত আমির শাহ মহীবুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে ওই সভায় সংগঠনের মহাসচিব সাজিদুর রহমানসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

মূলত মুসলিম উত্তরাধিকার আইন ও পারিবারিক আইনে নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার যে সুপারিশ কমিশন করেছে, তা নিয়েই আপত্তি হেফাজতের।

জামায়াতে ইসলামীও এক বিবৃতিতে সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশকে ‘গর্হিত’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, এসব বিষয় সমাজকে ‘চরম অস্থিতিশীলতার’ দিকে ঠেলে দেবে।

দলটির আমির শফিকুর রহমান বিবৃতিতে বলেন, তাদের সুপারিশ দেখে তিনি ‘বিস্মিত’ হয়েছেন।

“কতিপয় সুপারিশ কুরআন এবং হাদিসের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পাশাপাশি সকল ধর্মের মূল্যবোধকে তছনছ করে দেবে। বাংলাদেশের জনগণ এক বাক্যে তা প্রত্যাখ্যান করবে।”

কোন কোন সুপারিশ নিয়ে আপত্তি, তা জামায়াত স্পষ্ট করেনি বিবৃতিতে।

চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে আপত্তি তুলে এক বিবৃতিতে বলেছে, “পশ্চিমের ধর্মবিমুখ,পরিবার বিচ্ছিন্ন ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদের বিকৃত বিকাশের পটভূমিতে বিকশিত নারীবাদী চিন্তার পাটাতনে ও ভাষায় নারী বিষয়ক সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে; যা এ দেশের নারীর হাজার বছরের বোধ-বিশ্বাস, চরিত্র, মেজাজ ও সংস্কৃতির সাথে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক।”

বিবুতিতে ইসলামী আন্দোলনের নারী নেত্রীরা বলেন, “আমাদের সমাজ হাজার বছর ধরে ধর্মকে প্রধান করেই জীবন পরিচালনা করেছে। ধর্ম তার বহুমাত্রিক ব্যবস্থাপনা দিয়ে নারী-পুরুষকে পরস্পর নির্ভর করেছে। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন পারিবারকি আইনে ধর্ম বাদ দেওয়ার কথা বলেছে। এই প্রস্তাব তাদের অজ্ঞতা ও ধর্মবিদ্বেষী মতোভাবের বহিঃপ্রকাশ।”

কমিশনে নারীপক্ষের শিরীন হককে প্রধান করার বিরোধিতা করে তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, “কমিশনে আরও যাদের সদস্য করা হয়েছে, তারাও একই মতাদর্শের। ফলে এই কমিশন বাংলাদেশের নারীদের সাধারণ অংশের প্রতিনিধিত্ব করে না। প্রতিবেদনেও সেই একদেশদর্শি চিন্তা ও ভাবনার প্রতিফলন দেখা গেছে।”

ইসলামী আন্দোলনের নারী বিভাগের প্রধান নুরুস সাবিহা নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি জানান।

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে আপত্তি তুলে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদও।

তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, “উক্ত প্রতিবেদন নির্দিষ্ট মতাদর্শের রুচির বহিঃপ্রকাশ। এর সাথে আমাদের দেশের মৌলিক বিশ্বাস ও বাঙালি নারীর কোনও সম্পর্ক নাই ।

“এটি বিজাতীয় ধর্মবিমুখ,পরিবারবিচ্ছিন্ন ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদের বিকৃত রুচির বিকাশের বহিঃপ্রকাশ। এটি তথাকথিত ফ্যামিনিস্টদের পক্ষ থেকে এদেশের নারীর হাজার বছরের আকিদা-বিশ্বাস, নৈতিকতা, তাহজিব তামাদ্দুন ও সভ্যতা-সংস্কৃতির সাথে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক।”

এই কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে চাইলে অন্তর্বর্তী সরকারকেও ‘ফ্যাসিস্টদের ভাগ্যবরণ’ করতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেছে সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদ।

২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ।

নারী প্রশ্নে বিরোধিতা বারবার

বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুুরুষ সমতার কথা বলা হলেও তা কাগজে-কলমেই। বিভিন্ন আইন এমনকি সংবিধানেও নানা ক্ষেত্রে এই বক্তব্যের সমর্থন নেই।

১৯৭৯ সালে জাতিসংঘের নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ সিডও গৃহীত হওয়ার পর বাংলাদেশ তাতে স্বাক্ষর করলেও ইসলামী দলগুলোর বিরোধিতার মুখে কয়েকটি ধারা সংরক্ষিত রেখে দেয়। সম্পত্তিতে সমান উত্তরাধিকার নিশ্চিতসহ সেই সব ধারা মুক্ত করার সুপারিশ বর্তমান সংস্কার কমিশনও রেখেছে।

১৯৯৫ সালে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্ব নারী সম্মেলনের ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নারী উন্নয়ন নীতি প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল।

ইসলামী সংগঠনগুলোর বিরোধিতার মধ্যে ২০০৪ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার বেশ খানিকটা পরিবর্তন করে ২০০৪ সালে নারী উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন করে। ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেই নীতি সংশোধন করেছিল।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর আবার নারী উন্নয়ন নীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নিলে ইসলামী দলগুলো বিরোধিতায় নামে। ২০১১ সালে নীতিটি প্রণীত হওয়ার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বারবার বলতে হয়েছিল, আওয়ামী লীগ সরকার কুরবার-সুন্নাহবিরোধী কোনও আইন করবে না।

বাংলাদেশে সর্বপ্রাচীন নারী সংগঠন মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম তখন এক কলামে লিখেছিলেন, “মৌলবাদীরা নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিরোধিতা করে এসেছে শুরু থেকেই। হেফাজতে ইসলামের সাম্প্রতিক বিরোধিতা তো আছেই। ওদের ১৩ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে নারীর অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা।”

বিপরীতে উবিনীগ’র নির্বাহী পরিচালক এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ফরিদা আকতার এক কলামে লেখেন, “হেফাজতে ইসলাম তাদের ১৩ দফায় শুধু বলেছে নারী নীতি ইসলামবিরোধী। কিন্তু নারী উন্নয়ন নীতির বিরোধিতা যেভাবে করা হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে হেফাজতে ইসলাম নারীদের সকল প্রকার উন্নয়নের বিরুদ্ধে, যা তারা নন বলেই ইতিমধ্যে বিভিন্ন আলোচনায় তারা পরিস্কার করেছেন।

“তাহলে তাদের উচিত হবে এই ব্যাপারে হেফাজতের নারী সংগঠন ও অন্যান্য নারী সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করা। নারী আন্দোলন যখন দাবী করে নারী নীতি সব নারীদের জন্যে, সেখানে হেফাজতের পুরুষদের মতামত ছাড়াও হেফাজতের নারীদের মতামত শোনাও আমাদের প্রয়োজন।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত